নবীনবরণ অনুষ্ঠানে বহিরাগতের হামলা, ব্যাপক ভাঙচুর
গাজীপুরের জয়দেবপুরে একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর করেছে বহিরাগতরা। আজ শনিবার সন্ধ্যার পর শহরের শহীদ বঙ্গতাজ মিলনায়তনে এ ঘটনা ঘটে। এতে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকসহ আহত হন অন্তত ১০ থেকে ১৫জন। দুজনকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
জানা যায়, মিলনায়তনটিতে আজ সকাল থেকে ‘ইনস্টিটিউট অব টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ইনফরমেশন টেকনোলোজি’ নামের একটি কলেজের নবীনবরণ ও বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠান চলছিল। বিকেল থেকে শুরু হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সন্ধ্যার পর হঠাৎ একদল যুবক হাতে রাম দা, লাঠিসোঁটা, চাপাতি নিয়ে অনুষ্ঠানস্থলে অতর্কিত হামলা চালায়। মিলনায়তনের দরজা-জানালা, চেয়ারসহ বিভিন্ন আসবাব ভাঙচুর করে। শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকদের কেউ দায়ের আঘাতে, কেউ লাঠির আঘাতে আবার কেউবা চাপাতির আঘাতে আহত হয় । অনেকে হামলা থেকে বাঁচাতে মিলনায়তনের সিঁড়ি , শৌচাগারসহ বিভিন্ন জায়গায় আশ্রয় নেন। প্রায় আধা ঘণ্টা চলে এমন তাণ্ডব।
সন্ধ্যা সোয়া ছয়টার দিকে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ফটক দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করতেই মিলনায়তনের কক্ষের সামনে থাকা কাচের দেয়াল ভাঙা। কাচগুলো পড়ে আছে যত্রতত্র। শিক্ষার্থীরা আতঙ্কিত হয়ে এদিক-সেদিক ছোটাছুটি করছে । কাউকে কাউকে আহত অবস্থায় দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হচ্ছে। মিলনায়তনের কক্ষে থাকা প্রায় সবগুলো চেয়ার ভাঙা । শিক্ষার্থীদের কেউ সিঁড়ির নিচ থেকে কেউবা শৌচাগার থেকে বেরিয়ে আসছে। বিভিন্ন জায়গায় জমাট রক্ত।
কলেজটির কয়েকজন বিদায়ী শিক্ষার্থী জানান, সন্ধ্যা সাড়ে পাঁচটার দিকে ১৫ থেকে ২০ জন যুবক হঠাৎ তাদের ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। এ সময় তারা গুলির আওয়াজ ও ভাঙচুরের শব্দ পেয়ে দৌড়ে গিয়ে শৌচাগারে আশ্রয় নেয়। বহিরাগতরা সেখানেও তাদের ওপর হামলা চালায়। পড়ে তারা অনেক কাকুতি মিনতি করে মারের হাত থেকে রক্ষা পায়।
মিলনায়তনের দায়িত্বে থাকা লোকজন বলছেন ভিন্ন কথা। মিলনায়তনের ডেকোরেশনের দায়িত্বে থাকা ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাষ্য, অনুষ্ঠান চলাকালে মাগরিবের আজানের জন্য বিরতি দেওয়া হয়। নামাজের কিছুক্ষণ পর দুই যুবকের সঙ্গে কলেজের শিক্ষার্থীদের কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে ওই দুই যুবককে কলেজের শিক্ষার্থীরা মারধর করে। এর মধ্যে একজন ঘটনাস্থল থেকে কোনো রকম ছুটে যায়। ততক্ষণে অন্য যুবকটিও মার খেতে থাকে। জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমি কলেজশিক্ষককে বারবার বলছি তাদের শান্ত করার জন্য। কিন্তু তারপরও তারা শান্ত করেনি। এর কিছুক্ষণ পরই বাইরে থেকে কমপক্ষে ১৫ থেকে ২০ জন হাতে রাম দা, লাঠিসোঁটা, চাপাতি নিয়ে ব্যাপক ভাঙচুর চালায়। সামনে যাদের পাইছে তাদেরই আঘাত করছে। ভাঙচুরে অডিটোরিয়ামের সব শেষ।’
কলেজের ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষক মো. নাজমুল প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমে আমাদের কলেজেরই প্রথম বর্ষের দুজন শিক্ষার্থীর মধ্যে কথা-কাটাকাটি থেকে হাতাহাতি হয়। আমি তাদের শান্ত করে অডিটোরিয়ামের ভেতরে বসাই। কিন্তু এর একটু পরই বাইরে থেকে চারজন ছেলে এসে আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার শুরু করে। আমি তাদের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে তারা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে মারধর করে। এটা দেখে অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এগিয়ে এসে তাদের ঘেরাও করে। এর মধ্যে তিনজন দৌড়ে পালিয়ে যায়। বাকি একজনকে শিক্ষার্থীরা মারতে গেলে শিক্ষার্থীদের শান্ত করে তাকেও ছেড়ে দেই। এর ঠিক আধা ঘণ্টা পরেই তারা এ অতর্কিত হামলা চালায়’। তিনি বলেন, ‘অডিটোরিয়ামের দায়িত্বে থাকা জাহাঙ্গীরের এ ঘটনার সঙ্গে হাত থাকতে পারে। কারণ ঘটনার সময় তিনি খুব খারাপ ব্যবহার করেছেন। আর বাইরে থাকা আসা লোকজনও তার পরিচিত।’
এ ব্যাপারে গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘হামলার সঙ্গে কে কারা কারা জড়িত তা তা তদন্ত করে বের করার চেষ্টা চলছে। আর এ ধরনের অনুষ্ঠান করার আগে আমাদের পুলিশ প্রশাসনের অনুমতি নেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তা করেনি।’