ভালো নেই ঢাকার সবুজ পাতা
ঢাকার বায়ুদূষণ উদ্বেগজনক রূপ নিয়েছে। গতকাল সোমবার দিনের বেশির ভাগ সময়জুড়েও ঢাকা বিশ্বের দূষিত বায়ুর শহরগুলোর তালিকায় শীর্ষে ছিল। এর মাঝে দু-একবার ভারতের দিল্লি ও কলকাতা এবং মঙ্গোলিয়ার উলানবাটোর শীর্ষে উঠে এসেছিল। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ঢাকাকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ শহরের তালিকায় রেখেছে এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স।
বায়ুদূষণের অন্যতম কারণ ধূলিকণা। নগরবাসীর ওপর ধুলার বিরূপ প্রভাব পড়ছে। বাতাসে অতিমাত্রায় ধুলার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শহরের গাছগাছালিও। গাছের পাতায় জমছে ধুলার আস্তরণ। এর ফলে গাছের খাদ্য ও অক্সিজেন তৈরির প্রক্রিয়া ব্যাহত হচ্ছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন। শুধু তা–ই নয়, পাতার পত্ররন্ধ্র ও সূর্যের আলোর মাঝখানে ধূলিকণার আস্তর প্রতিবন্ধক হিসেবে কাজ করছে। ফলে কার্বন ডাই–অক্সাইড গ্রহণ করতেও বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছে গাছ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের প্রধান অধ্যাপক রাখহরি সরকার প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা যদি ঢাকার বৃক্ষরাজির দিকে তাকাই, দেখা যাবে প্রচুর ধুলার আস্তরণ পড়ে আছে। বাতাসে যে ধুলা আসছে, সে ধুলাই গাছের পাতায় অবস্থান করে। পাতার ওপর যে ধুলার আস্তরণ পড়ছে, তা উদ্ভিদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি করছে।’
এই ধুলা পড়ার কারণে পাতা বা গাছ কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? অধ্যাপক রাখহরির বক্তব্য, ‘সবুজ উদ্ভিদ সালোকসংশ্লেষণের মাধ্যমে খাদ্য তৈরি করে। এই প্রক্রিয়ায় শুধু খাদ্য তৈরিই করে না, অক্সিজেনও রিলিজ করে। মানুষ–জীবজন্তু অক্সিজেনের মাধ্যমে বেঁচে থাকে, আর সেই অক্সিজেনের উৎসই হচ্ছে উদ্ভিদ। ধূলিকণার কারণে সালোকসংশ্লেষণ যেহেতু বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, সুতরাং তা আমাদের পরিবেশের ওপর ব্যাপক প্রভাব সৃষ্টি করছে। সূর্যের আলো ছাড়া সালোকসংশ্লেষণ হয় না। ধুলার আস্তর সূর্যের আলো আসতে বাধা সৃষ্টি করছে।’
অধ্যাপক রাখহরি আরও বলেন, ‘বাতাসে যে কার্বন ডাই–অক্সাইড আছে, সেই কার্বন ডাই–অক্সাইড উদ্ভিদ গ্রহণ করে। সেই গ্রহণ করার ক্ষেত্রেও উদ্ভিদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। উদ্ভিদ একটি কারখানার মতো। সে কার্বন ডাই–অক্সাইড, সূর্যের আলো, পানি ইত্যাদি গ্রহণ করে এবং বাতাসে অক্সিজেন ছেড়ে দেয়। ঢাকা শহরে এমনিতেই গাছগাছালি কম, আমার মনে হয়, ধুলার কারণে অক্সিজেনের পরিমাণ আরও কমে যাচ্ছে।
এই শুকনার সময়ে ধুলার রাজ্য হয়ে ওঠা এই নগরীর গাছগুলোর তাহলে রক্ষা হবে কীভাবে? নগর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক নজরুল ইসলামের পরামর্শ, নির্মাণকাজের সঙ্গে জড়িত সংশ্লিষ্টদের দেখতে হবে যাতে ধুলা কম হয়।
অধ্যাপক নজরুল ইসলাম বললেন, ‘এমনিতেই ঢাকায় যত গাছ থাকার কথা, আছে এর চেয়ে ঢের কম। আবার অনেক সময়ই সঠিক গাছ লাগানো হয় না। আরও পরিকল্পনা করে আরও বেশি মাত্রায় সঠিক গাছটি লাগাতে হবে এবং এর পরিচর্যা করতে হবে সঠিকভাবে।’
নগরে গাছ লাগানোর প্রক্রিয়ায় যে গলদ আছে এবং পরিকল্পনার অভাব আছে, অধ্যাপক নজরুলের মতোই তা মনে করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের আরেক অধ্যাপক আসফাক আহমদ। তিনি প্রথম আলোকে বললেন, ‘সড়ক বিভাজকগুলো লক্ষ করলে দেখবেন, পুরোটাই খোলা থাকে। বিভাজকে গাছ লাগিয়ে বাকি জায়গাটা ঘাস দিয়ে কভার করা গেলে ধুলাবালি অনেক কমবে। ফুটপাতের দূষণ কমানো জরুরি।’
অন্যদিকে ঢাকা শহর ও আশপাশের এলাকায় বায়ুদূষণ এবং এর কার্যক্রম কমাতে একটি অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করার জন্য উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন কমিটি গঠন করার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ মঙ্গলবার এক সম্পূরক আবেদনের শুনানিতে হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন।