তরুণদের কাঁধে অনেক দায়িত্ব: বান কি মুন
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুন বলেছেন, আজকের দিনে বিশ্ব অনেক সংকটের মুখোমুখি হলেও এই মুহূর্তে বিশ্ব ইতিহাসের সম্ভাবনার কালও বটে। তাই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সমৃদ্ধির পৃথিবী গড়ার স্বার্থে বিশ্ব নাগরিকের দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে তরুণদের এগিয়ে যেতে হবে।
গতকাল শনিবার দুপুরে বাংলাদেশ আর্মি স্টেডিয়ামে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের তরুণদের প্রতি বান কি মুন এ আহ্বান জানান। এ সময় তিনি বলেন, তরুণদের কাঁধে এখন অনেক দায়িত্ব।
দেশের অন্যতম বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়টির সমাবর্তনে বক্তৃতা দিতে দুই দিনের সফরে গত শুক্রবার ঢাকায় আসেন বান কি মুন।
ওই অনুষ্ঠানে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, বাংলাদেশের জন্য অন্যতম বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা। উচ্চশিক্ষা যাতে কোনোক্রমেই সনদসর্বস্ব না হয়, তা নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, মানসম্মত না হলে শিক্ষা মূল্যহীন।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৩তম সমাবর্তন অনুষ্ঠান শুরু হয়। রাষ্ট্রপতি ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. আবদুল হামিদ চার শিক্ষার্থীকে আচার্য স্বর্ণপদক পরিয়ে দেন। এ ছাড়া ৪৮ শিক্ষার্থীকে দেওয়া হয় উপাচার্য স্বর্ণপদক।
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব সমাবর্তন বক্তৃতায় তরুণের বিশ্ব নাগরিক হয়ে ওঠা, ভবিষ্যতে বিশ্বের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে উন্নয়ন নিশ্চিতের লক্ষ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যের (এসডিজি) গুরুত্ব, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় বাংলাদেশের ভূমিকা ও শিক্ষা এবং তরুণের শক্তি নিয়ে কথা বলেন। বিশ্বব্রহ্মাণ্ড যখন এক সন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এমন এক সময়ে এসে বাংলাদেশের তরুণদের সামনে বক্তৃতার সুযোগ পাওয়াকে গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বান কি মুন বলেন, ‘অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আজকের পৃথিবীর অনেক বেশি পরিমাণে নতুন প্রজন্মের চিন্তক আর কর্মীর প্রয়োজন। আমাদের সেসব চিন্তকের প্রয়োজন, যাঁরা আজকের বিশ্বের চ্যালেঞ্জগুলোকে ইতিবাচকভাবে দেখবেন। আমাদের সেসব কর্মীর প্রয়োজন, যাঁরা এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সামনের দিকে এগিয়ে যাবেন।’
বান কি মুনের মতে, বিশ্বে বিভাজন আর অনিশ্চয়তা বাড়ার এই সময়টায় এসে শিক্ষার শক্তিকে কাজে লাগাতে সহযোগিতা জোরদার করতে হবে।
বান কি মুন বলেন, ‘জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব হিসেবে আমি শিক্ষা, নারী ও কিশোরীর শক্তিতে বিশ্বাস করি। বৈশ্বিক নাগরিক ও অংশীদারত্বের ধারণার বিকাশকে সমর্থন করি। সারা বিশ্বের জনগণের প্রায় ৭৫ শতাংশই হচ্ছেন নারী ও তরুণ। নারী–পুরুষের সমতা অর্জন ও নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা বিলোপ ছাড়া কোনো দেশ সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে না।’
সমাবর্তনে আসা শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বান কি মুন বলেন, ‘আপনাদের বৈশ্বিক নাগরিক হয়ে উঠতে হবে। এ জন্য মানবাধিকার সুরক্ষা ও পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়গুলোতে জোর দিতে হবে। আজকের গুটি কয়েক নেতার হাতে অনেক চ্যালেঞ্জ। এ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় অতীতের যেকোনো সময়ের তুলনায় আপনাদের ভূমিকা অনেক গুরুত্বপূর্ণ। পরিবর্তনের অনুঘটক হিসেবে সাহসের সঙ্গে আপনাদের দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের একটাই পৃথিবী। আর চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে পৃথিবীটাকে শান্তিপূর্ণ ও সমৃদ্ধ করার চাবিকাঠি আপনাদের হাতেই।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ও রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ বলেন, মানসম্মত না হলে শিক্ষা মূল্যহীন। বাংলাদেশের জন্য অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে শিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করা। তিনি আরও বলেন, জাতির উন্নয়ন, উন্নত সমাজ গঠন ও বিশ্বমানের গ্র্যাজুয়েট তৈরির লক্ষ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গুণগত মান, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করা জরুরি। রাষ্ট্রপতি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশকে বিশ্বের রোল মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে তোমাদের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা। তোমরা তোমাদের প্রতিভা ও কাজের মাধ্যমে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরবে।’
অসাধু ব্যবসায়ী, লুটেরা, মুনাফাখোর ও মজুতদারদের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে রাষ্ট্রপতি বলেছেন, ‘এরা গুজব ছড়িয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে। পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছে। অসাধু ব্যবসায়ী, মুনাফাখোর, লুটেরা ও মজুতদারদের মধ্যেও ঐক্য রয়েছে। এখন এই সব দুষ্কৃতকারীর বিরুদ্ধে আমাদের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।’
রাষ্ট্রপতি পেঁয়াজ, লবণ, চালসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুতের ব্যাপারে, গুজব সম্পর্কে সতর্ক থাকার জন্যও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীদেরও এর বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালাতে হবে।’
সমাবর্তন অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন, শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন তামারা হাসান আবেদ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ভিনসেন্ট চ্যাং।