গবেষক না হয়েও গবেষণাকাজে বিদেশ সফরে তাঁরা
ঐতিহ্যবাহী মসলিন কাপড়ের সুদিন ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে নেওয়া একটি প্রকল্পের আওতায় ছয়জন কর্মকর্তা রাশিয়া ও মিসর সফরে গেছেন। গবেষণার ক্ষেত্রে প্রশিক্ষণ ও সহায়তার জন্য এই সফরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। কিন্তু সফরে যাওয়া তিন কর্মকর্তা গবেষণাসংশ্লিষ্ট নন। এই প্রকল্পের নাম বাংলাদেশের সোনালি ঐতিহ্যের মসলিন তৈরির প্রযুক্তি ও মসলিন কাপড় পুনরুদ্ধার প্রকল্প।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, গতকাল শনিবার ওই ছয়জন কর্মকর্তা রাশিয়া রওনা হয়েছেন। তাঁরা হলেন তাঁত বোর্ডের চেয়ারম্যান ও অতিরিক্ত সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মকবুল হোসেন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোনমি ও এগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান, তুলা উন্নয়ন বোর্ডের অতিরিক্ত পরিচালক আখতারুজ্জামান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের উপসচিব এস এম মাজহারুল ইসলাম ও বস্ত্র ও পাটমন্ত্রীর সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) এমদাদুল হক। তাঁদের মধ্যে মকবুল হোসেন, মাজহারুল ইসলাম ও এমদাদুল হক গবেষক নন। রফিকুল ইসলামের স্ত্রী মাকসুদা সুলতানাও যাচ্ছেন। তবে তিনি স্বামীর খরচে যাবেন। রফিকুল ইসলাম আগামী ১৫ ডিসেম্বর অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) যাচ্ছেন।
২০১৮ সালের ১ জুলাই শুরু হওয়া প্রকল্পটি শেষ হবে ২০২১ সালের জুনে। প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কয়েকজন গবেষক বলছেন, রাশিয়া ও মিসরে এখন তুলার মৌসুম নয়। রাশিয়া নিজেই তুলার জন্য আমদানির ওপর নির্ভরশীল। তারা যে কাজে রাশিয়া ও মিসর যাচ্ছেন, তা ভারতে গিয়েও দেখতে পারতেন।
গবেষকেরা বলছেন, ফুটিকার্পাস তুলা থেকে মসলিন তৈরি হতো। তাঁরা বাংলাদেশে ছয় জাতের তুলার খোঁজ পেয়েছেন। তাঁদের ধারণা, এই ছয় জাতের মধ্যেই ফুটিকার্পাস রয়েছে। তাঁদের প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, দেশে উৎপাদিত তুলার জাতের মধ্যে মসলিন তৈরির জাত না পাওয়া গেলে বিদেশে যাওয়া যেতে পারে। কিন্তু দেশি তুলার জাত নিয়ে যথাযথ খোঁজ না নিয়েই তাঁরা বিদেশে গেছেন।
প্রকল্পসংশ্লিষ্ট কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, রফিকুল ইসলাম আগামী ১৫ ডিসেম্বর পিআরএলে যাবেন। নিয়ম অনুযায়ী, পিআরএলে যাওয়ার এক মাস আগেই তাঁর সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে ফিরে আসার কথা। কিন্তু বিদেশ সফরে যাওয়ার জন্য তিনি এক মাস আগে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে যোগ দিচ্ছেন না। আবার চাকরিজীবনের শেষ ছয় মাসে বিদেশে প্রশিক্ষণের জন্য যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
পাট মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ অক্টোবর এই ছয় সদস্যের দলের রাশিয়া এবং মিসর সফরের জিও (সরকারি আদেশ) হয়েছে। সাত দিনের জন্য তাঁদের এই সফরের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
১০ নভেম্বর মুঠোফোনে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিদেশে যাওয়ার কথা নিশ্চিত করেন। তিনি বলেন, ভিসার সমস্যার কারণে তাঁদের দেরি হচ্ছে। তবে তিনি বিদেশে যাচ্ছেন। পিআরএলের সময় প্রশিক্ষণের জন্য বিদেশে যাওয়ার প্রসঙ্গ তুলতেই তিনি মুঠোফোন সংযোগ কেটে দেন।
কর্মকর্তারা অসময়ে যাচ্ছেন কি না—জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক মো. আয়ুব আলী গত বৃহস্পতিবার প্রথম আলোকে বলেন, অক্টোবরের মধ্যে গেলে ভালো হতো।