ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, কোনো একক কারণে বুয়েট ছাত্র আবরার ফাহাদকে হত্যা করা হয়নি। তিনি (আবরার) শিবির করেন কি না, হত্যার পেছনে এটি একটি মাত্র (অন্যতম) কারণ। কিন্তু যাঁরা তাঁকে হত্যা করেছেন, তাঁরা এমন উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিলেন। কেউ তাঁদের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করলে, সালাম না দিলে, তাঁদের সামনে হেসে দিলে ইত্যাদি কারণে তাঁরা নির্যাতন করতেন।
আজ বুধবার দুপুর ১২টার দিকে মিন্টো রোডে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা শাখার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মনিরুল ইসলাম।
মনিরুল বলেন, ‘অভিযুক্তরা র্যাগিংয়ের নামে নতুনদের আতঙ্কিত রাখতে এসব কাজ করেন। এসব বিষয়ে আমরা আগে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে তদন্তে একজন সাক্ষী বলেছেন যে তিনি একজনকে সালাম দেননি বলে তাঁকে পেটানো হয়েছে। র্যাগিংয়ের নামে উচ্ছৃঙ্খল কর্মকাণ্ডের অভ্যস্ততার অংশ হিসেবেই আবরার হত্যাকাণ্ডটি সংঘটিত হয়েছে বলে আমরা মনে করছি। হল প্রশাসন ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন আগে থেকে মনিটরিং করলে এমন ঘটনা না–ও ঘটতে পারত। এটা তাদেরই মনিটর করার কথা।’
মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি রাত ১০টার পর থেকে আবরারের ওপর নির্যাতন শুরু হয়। ২টা ৫০–এর দিকে ডাক্তার তাঁকে দেখে মৃত ঘোষণা করেন। দীর্ঘ সময় ধরে তাঁকে পেটানো হচ্ছিল।’
পুলিশ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, বিশ্বজিৎ হত্যায় যারা রড দিয়ে পিটিয়েছিল তাদের ফাঁসি হয়েছে। অভিযুক্ত কয়েকজন আবার খালাসও পেয়েছে। সেই মামলায় আমরা তেমনভাবে সিসিটিভি ফুটেজ পাইনি। এ ধরনের ঘটনা প্রমাণের জন্য ট্রেডিশনাল তদন্ত বা চাক্ষুষ সাক্ষীর সাক্ষ্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। আবরার হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রে তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন, তদন্ত সহায়ক দল ছিল, সিসিটিভি ফুটেজ, পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্য প্রমাণ, ফেসবুক মেসেঞ্জার গ্রুপের তথ্য রয়েছে। তথ্যপ্রযুক্তি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের বিশ্লেষণ, পাশাপাশি ৮ জন আসামির বক্তব্যও হত্যাকাণ্ডের অনেক বিষয় প্রমাণ করে, যদিও এ ধরনের ঘটনায় চাক্ষুষ সাক্ষী থাকলেও সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসে না। কিন্তু আমরা যেভাবে চার্জশিট প্রস্তুত করেছি আশা করছি সবার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত হবে।
মনিরুল ইসলাম বলেন, আবরারকে হয়তো একটু আগে হাসপাতালে নিয়ে গেলে এমন নৃশংস পরিণতি হতো না।
মনিরুল ইসলাম আরও বলেন, ‘চার্জশিট (অভিযোগপত্র) আদালতে পাঠানো হয়েছে। তদন্তে আমরা জানতে পেরেছি, আবরার হত্যায় সরাসরি অংশ নেন ১১ জন। বাকি ১৪ জন হত্যাকাণ্ডে বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িত রয়েছেন।’
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ছাত্র আবরার ফাহাদ হত্যার ঘটনায় ২৫ জনকে আসামি করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দিচ্ছে পুলিশ। আসামি ২৫ জনের মধ্যে ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে মহানগর পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)।
মনিরুল ইসলাম বলেন, আবরারকে হত্যায় সরাসরি যুক্ত ছিলেন ১১ জন। এরাই আবরারকে কয়েক দফায় মারপিট করেন। বাকি ১৪ জন বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্নভাবে এ হত্যাকাণ্ডে জড়িত ছিলেন।
অভিযোগপত্রভুক্ত ২৫ আসামির মধ্যে ২১ জনকে ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ২১ জনের মধ্যে ১৬ জনের নাম আবরারের বাবার করা হত্যা মামলার এজাহারে আছে। তাঁরা হলেন মেহেদী হাসান রাসেল, মো. অনিক সরকার, ইফতি মোশাররফ সকাল, মো. মেহেদী হাসান রবিন, মো. মেফতাহুল ইসলাম জিওন, মুনতাসির আলম জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভির, মো. মুজাহিদুর রহমান, মুহতাসিম ফুয়াদ, মো. মনিরুজ্জামান মনির, মো. আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুল ইসলাম, শামীম বিল্লাহ, মোয়াজ আবু হুরায়রা ও এ এস এম নাজমুস সাদাত।
বাকি ৫ জনের নাম তদন্তে বেরিয়ে এসেছে। তাঁরা হলেন ইসতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, অমিত সাহা, মো. মিজানুর রহমান ওরফে মিজান, শামসুল আরেফিন রাফাত ও এস এম মাহমুদ সেতু।
পলাতক আছেন চারজন। পলাতক জিসান, তানিন ও মোর্শেদের নাম মামলার এজাহারে রয়েছে। এজাহারের বাইরে আরেক আসামি হলেন রাফি।
গত ৬ অক্টোবর দিবাগত রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হল থেকে তড়িৎ ও ইলেকট্রনিকস প্রকৌশল বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে জানা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁকে পিটিয়ে হত্যা করেছেন।