পাঠ্যবইয়ে যৌনশিক্ষা আছে, পড়ানো হয় না
পাঠ্যপুস্তকে যৌন ও প্রজননশিক্ষা থাকলেও শিক্ষকেরা এসব অধ্যায় এড়িয়ে যান। সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো, শিক্ষকদের প্রশিক্ষণসহ বিভিন্ন উদ্যোগে এই কার্যক্রম নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মতো বিকল্প মাধ্যম দিয়ে কিশোর–তরুণদের যৌন ও প্রজননশিক্ষা দেওয়া যেতে পারে।
কারওয়ান বাজারে প্রথম আলো কার্যালয়ে গতকাল রোববার সকালে অনুষ্ঠিত গোলটেবিল বৈঠকে নীতিনির্ধারক, তরুণ ও এনজিও প্রতিনিধিরা এসব কথা বলেন। ‘যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা: কৈশোর ও তারুণ্যের অধিকার’ শীর্ষক এই বৈঠক আয়োজন করে প্রথম আলো। সহযোগিতায় ছিল ইউনাইটেড ফর বডি রাইটস ও কিংডম অব নেদারল্যান্ডস।
বৈঠকে নারীপক্ষের সদস্য ইউ এম হাবিবুন নেসা বলেন, ‘এখনকার বাচ্চারা অনেক খোলামেলাভাবে জানতে চায়, বলতে পারে, যা আমাদের সময়ে ছিল না। চিন্তা–চেতনার দিক থেকে এক প্রজন্ম পরে অনেক বড় পরিবর্তন আসবে। নিজের যৌনাঙ্গ চেনা, এটাকে সুস্থ রাখা—এটা একটা অধিকার। এসব নিয়ে লজ্জার ব্যাপারগুলো ভেঙে ফেলতেই হবে।’
পপুলেশন সার্ভিসেস অ্যান্ড ট্রেনিং সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক নূর মোহাম্মদ বলেন, সবাই ভাবে, শিশু–কিশোর–তরুণেরা বড় হতে হতে বুঝে যাবেন। বয়ঃসন্ধিকালে তাদের মনে হাজারো প্রশ্ন। তবে উত্তর কম। বইয়ে উত্তর আছে, সেটা সামান্য। শিক্ষকদের কাছে গেলে বলেন, ইঁচড়ে পাকা। আর অভিভাবকদের কাছে গেলে শুনতে হয়, ‘চুপ করো। সময়ে জানতে পারবে।’ এই হচ্ছে পরিস্থিতি।
বন্ধু স্যোশাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক সালেহ আহমেদ বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নিয়ে কথা কম বলা হয়। কিছুদিন আগে এক জরিপে দেখা গেছে, তরুণদের একটা বড় অংশ মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যায় ভুগছে।
ব্র্যাকের জেমস পি গ্র্যান্ট স্কুল অব পাবলিক হেলথের ডিন সাবিনা ফয়েজ রশিদ বলেন, যৌন ও প্রজননশিক্ষার পাশাপাশি তাদের মানসিক স্বাস্থ্য
নিয়ে কথা বলতে হবে। তাদের কাছে পৌঁছাতে স্যোশাল মিডিয়া, ইউটিউব ভিডিও, কার্টুন—বিকল্প চ্যানেলগুলো ব্যবহার বাড়াতে হবে।
সেক্সুয়াল রিপ্রডাক্টিভ হেলথ রাইটসের পরামর্শক জুলিয়া আহমেদ বলেন, দেশের স্বাস্থ্যশিক্ষায় প্রজনন ও যৌনস্বাস্থ্যের এই দুটি বিষয়ে কম আলোচনা হচ্ছে।
বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের নির্বাহী পরিচালক রোকেয়া কবীর বলেন, পাঠ্যপুস্তকে স্বাস্থ্যশিক্ষার অধ্যায় আছে। অথচ পড়ানো হয় না। এটাতে শিক্ষকদের আরও জোর দিতে হবে।
ইউবিআর অ্যালায়েন্স বাংলাদেশের কর্মসূচি সমন্বয়ক শার্মিন ফরহাত ওবায়েদ বলেন, শিক্ষকদের শুধু প্রশিক্ষণ দিলে হবে না। পাশাপাশি শিক্ষকদের প্রয়োজনীয় শিক্ষা উপকরণ দিতে হবে।
যুব প্রতিনিধি মনিমুক্তা ইসলাম বলেন, আগে থেকে যৌন ও প্রজননশিক্ষা সম্পর্কে জানা থাকলে অপূরণীয় ক্ষতি থেকে রেহাই পাওয়া যায়।
আরেক যুব প্রতিনিধি আল আমিন বলেন, তরুণ বয়সে যদি শিক্ষার্থীরা এসব সম্পর্কে জানতে না পারে, তাহলে তো তারা সমাজ পরিবর্তন করতে পারবে না।
বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন ফর প্রিভেনশন অব সেফটিক অ্যাবোরশনের নির্বাহী পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য সম্পর্কে ভ্রান্ত ধারণাগুলো সরাতে এই প্রজন্মকে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্য দিতে হবে।
বৈঠকে উপস্থাপনা দেন ইউবিআর প্রোগ্রামের দুস্থ স্বাস্থ্যকেন্দ্রের যুগ্ম পরিচালক (স্বাস্থ্য) কল্লোল চৌধুরী। তিনি বলেন, যৌন ও প্রজননশিক্ষায় কিশোর–কিশোরীদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও আত্মরক্ষার দক্ষতা তৈরি হয়। তবে সঠিক ও বিজ্ঞানসম্মত তথ্য না জানলে তারা বিভ্রান্তিতে পড়তে পারে, বিপথগামী হতে পারে।