বাংলা বোঝে না বেঙ্গল টাইগার
ডোরাকাটা লম্বা লেজটি বারবার হেলছে-দুলছে। বোঝাই যাচ্ছে, একাকী থাকলেও বেশ আরাম-আয়েশেই আছে সে।
সামনে গরুর মাংসের বড় একটি টুকরো। মাংসের টুকরোটি কিছুক্ষণ পরপর নাড়াচাড়া করছে সে। নাড়াচাড়ার ফাঁকে ফাঁকে জিভ লম্বা করে মাংসের টুকরোটি চেখে নিচ্ছে। আবার কখনো কখনো ধারালো দাঁত বের মাংসের টুকরোতে কামড় বসাচ্ছে।
আরাম-আয়েশে থাকা প্রাণীটি হলো বেঙ্গল টাইগার। ঢাকার মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানার নতুন বাঘিনী সে। জাতে বেঙ্গল টাইগার হলেও তার জন্ম সুদূর দক্ষিণ আফ্রিকার মিসটিক মাঙ্কিস অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফ পার্কে। এই বাঘিনী একা নয়, সঙ্গে এসেছে তার এক ভাইও (বাঘ)।
৮ জুলাই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আকাশপথে রওনা হয় বাঘ দুটি। ১০ ঘণ্টার পর তুরস্কের ইস্তাম্বুলে যাত্রাবিরতি করে। ১০ জুলাই ঢাকায় আসে বাঘ ও বাঘিনীটি।
জাতীয় চিড়িয়াখানায় আনার পর ভাইবোনকে আলাদা দুটি খাঁচার ভেতর পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। খাবারদাবারও আলাদাভাবে দেওয়া হচ্ছে। সব ঠিক থাকলেও মুশকিল বেধেছে অন্য জায়গায়। চিড়িয়াখানায় প্রাণীদের তত্ত্বাবধানকারীদের কথাবার্তা মোটেই শুনছে না এই দুই বেঙ্গল টাইগার। শুনছে না মানে ওরা কথা বুঝতে পারছে না।
চিড়িয়াখানায় বাঘের তত্ত্বাবধানকারী মো. ফারুক জানালেন, দুই বছর বয়সী বাঘ ও বাঘিনী দুটি দক্ষিণ আফ্রিকায় ইংরেজি ভাষায় কথাবার্তা শুনে অভ্যস্ত। তাই বাংলাদেশে আসার পর প্রথম কয়েক ঘণ্টা চুপ করে বসেছিল। ওদের এই হাবভাব দেখে ইংরেজিতে ‘কাম’ ‘কাম’ ও ‘সিট ডাউন’ বলেন তিনি। ইংরেজি শুনে নড়েচড়ে বসে বাঘ ও বাঘিনী। এখন ইংরেজিতে বললে ওরা কথা শোনে। ডাক দিলে কাছে আসে। খাবার দিলে খেয়ে নেয়।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে বেঙ্গল টাইগার দুটিকে মিরপুরে বাংলাদেশ জাতীয় চিড়িয়াখানায় দেখা গেল। বাঘটিকে রাখা হয়েছে চিড়িয়াখানার ১১ নম্বর খাঁচায়। আর ওর বোনকে (বাঘিনী) রাখা হয়েছে কিছুটা দূরে টাইগার মডে।
বাঘটির ওজন আনুমানিক ২৪০ কেজি। আর বাঘিনীর ওজন ২০০ থেকে ২২০ কেজি। জাতীয় চিড়িয়াখানায় আনার পর নিয়ম করে তাদের খাবার দেওয়া হচ্ছে। বাঘ-বাঘিনীকে প্রতিদিন মোট ১১ কেজি মাংস দেওয়া হচ্ছে। বাঘিনীর চেয়ে বাঘটি বেশি মাংস খাচ্ছে। আস্তে আস্তে তাদের খাবারের পরিমাণ বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
জাতীয় চিড়িয়াখানার প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মোহাম্মদ লুৎফর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে আনা বাঘ ও বাঘিনী দুটি ইংরেজি কথাবার্তা শুনে অভ্যস্ত। ঢাকায় কিছুদিন থাকার পর বাংলা বুঝতে পারবে। আগে চিড়িয়াখানায় বিদেশ থেকে যেসব বাঘ-সিংহ এসেছে, সেগুলো এখন বাংলায় ডাক দিলে বুঝতে পারে।
লুৎফর রহমান বলেন, কয়েক দিনের মধ্যে নতুন আসা বাঘ ও বাঘিনী দুটির নাম দেওয়া হবে। বৈঠক করে নাম ঠিক করবে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এ মাসে আরও দুটি বেঙ্গল টাইগার আনা হবে। এর মধ্যে একটি বাঘ ও একটি বাঘিনী রয়েছে। ১০ জুলাই আনা বাঘটিকে জুলাই মাসের শেষে যে বাঘিনীটিকে আনা হবে, তার সঙ্গে একই খাঁচায় রাখা হবে। একইভাবে অন্য দুটি বাঘ ও বাঘিনীকে আলাদা সংসার করে দেওয়া হবে।
দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে বেঙ্গল টাইগার আনার কারণ জানতে চাইলে জাতীয় চিড়িয়াখানার কিউরেটর এস এম নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, উন্মুক্ত দরপত্রের মাধ্যমে বাঘগুলো কেনা হয়েছে। বাংলাদেশে সুন্দরবনের বাঘ ধরায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। প্রতিবেশী ভারতও বাঘ কেনাবেচা করে না। তাই দক্ষিণ আফ্রিকার বন্য প্রাণী পার্ক থেকে বাঘ সংগ্রহ করতে হয়েছে। ২১ দিন পর্যবেক্ষণ করে বাঘগুলো প্রদর্শন করা হবে।
মিরপুরে জাতীয় চিড়িয়াখানায় এই দুটি নতুন বাঘ নিয়ে এখন বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা দাঁড়াল ৬। এর মধ্যে চারটি ছেলে ও দুটি মেয়ে বাঘ রয়েছে। জ্যোতি নামের বাঘিনীটি বাংলাদেশের সুন্দরবনের বেঙ্গল টাইগার। বাকি পাঁচটি দক্ষিণ আফ্রিকার। জুলাইয়ে শেষে আরও দুটি বাঘ এলে বেঙ্গল টাইগারের সংখ্যা হবে ৮।
জাতীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানায়, সেখানে থাকা চারটি বেঙ্গল টাইগারের মধ্যে তিনটির বয়স ১৬ বছরের বেশি হয়ে গেছে। এর মধ্যে রাজা নামের বাঘটির বয়স ১৭ বছরের বেশি। কিছুদিনের মধ্যে বয়স্ক বাঘগুলো প্রদর্শনের অনুপযুক্ত হয়ে যাবে বলে জানান কিউরেটর এস এম নজরুল ইসলাম।
কিউরেটর এস এম নজরুল ইসলাম আরও জানান, চলতি মাসে বেঙ্গল টাইগার ছাড়াও দুটি চিতা, দুটি ইম্পালা ও তিন ক্যাঙারু আসবে জাতীয় চিড়িয়াখানায়।