যৌন হয়রানি থেকে সুরক্ষার উপায় জানে না ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা
দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে অনলাইনে হয়রানি ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা। নারী ও শিশুরাই মূলত ভুক্তভোগী। কিন্তু সে অপরাধ থেকে সুরক্ষার উপায় জানে না তারা।
বুধবার সকালে ‘ইন্টারনেটে শিশু যৌন নির্যাতন: ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের অধিকার ও কর্তব্য’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এসব কথা বলেন। রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করে মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)।
এতে বক্তারা বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে শিশুরা প্রতিনিয়ত হুমকিতে পড়ছে। চলতি বছরের প্রথম চার মাসেই ১৮ নারী ও শিশু অনলাইনে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
কিন্তু ইন্টারনেটভিত্তিক যৌন হয়রানি, নির্যাতন বা শোষণ থেকে নিজেকে সুরক্ষার উপায় ও এ ধরনের অপরাধের শিকার হলে করণীয় সম্পর্কে জানে না তারা। আইনগত দুর্বলতার কারণেও অনেক সময় প্রতিকার পেতে সমস্যা হয়। আবার অনেকে সামাজিক নিরাপত্তার অভাবে আইনি সহায়তা পেতে চায় না।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সাইবার অপরাধ সংঘটিত হয় উল্লেখ করে ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেন, মেট্রোপলিটন পুলিশ, অপরাধ তদন্ত বিভাগ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ঠেকা কাজ চালিয়ে নিতে পারে। কিন্তু অনলাইনে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য ঠেকা কাজ চালানো পর্যাপ্ত নয়। কারণ প্রযুক্তিবিষয়ক অপরাধ প্রযুক্তি দিয়েই লড়তে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে গণমাধ্যমের সমালোচনা করে তিনি আরও বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরির সময় গণমাধ্যম থেকে বলার চেষ্টা করা হয়েছে, বাকস্বাধীনতা বা গণমাধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করার জন্য কালো আইন করা হচ্ছে। কিন্তু এই আইন তাঁদের কন্যা, পরিবারের সদস্যদের নিরাপত্তার জন্যই প্রয়োজন ছিল।
সভায় জানানো হয়, দেশে ২০০৮ সালে ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ছিল আট লাখ। সে সংখ্যা এখন নয় কোটির বেশি। কিন্তু সেটা কোনো সুশৃঙ্খল নিয়ম মেনে হয়নি। আবার ১ হাজার ৬৭০টি ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান থাকলেও ৮০ শতাংশ ইন্টারনেট ব্যবহার করা হয় মুঠোফোনের মাধ্যমে। ফলে অনলাইনে হয়রানি বন্ধ কিছুটা কঠিন।
সভায় আইনের ঘাটতি ও ইন্টারনেট সেবা প্রদানকারীদের অধিকার ও কর্তব্য নিয়ে দুটি পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপনা করা হয়। এতে বলা হয়, আইনে অনলাইনে যৌন হয়রানির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো সংজ্ঞা নেই। আবার ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষার জন্যও আইন নেই। এ কারণে অভিভাবকের সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে অনলাইন ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ আনতে হবে।
আসকের নির্বাহী পরিচালক শীপা হাফিজা বলেন, ইন্টারনেট সুযোগ না, দুর্যোগ হয়ে যাচ্ছে। এর আগ্রাসী থাবায় শিশুরা আর নারীরা হুমকির মুখে পড়ছে। মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে কেউ কেউ বেছে নিচ্ছে আত্মহত্যার পথ। ইন্টারনেট ব্যবহারে নিয়ন্ত্রণ ও সচেতনতা দরকার।
নিরাপদভাবে ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য আসকের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রিয়াজুল করিম সিদ্দিকী সাত দফা কোড অব কন্ডাক্টের কথা বলেন। সেবাগ্রহীতার ছবি সমেত পরিচয়পত্র ছাড়া সেবা প্রদান না করা, কনটেন্ট ফিল্টার করা সম্পর্কে অভিভাবককে প্রশিক্ষণ দেওয়া, প্রত্যেক সেবাগ্রহীতাকে সংযোগ প্রদান করার আগেই সাইবার অপরাধ ও ইন্টারনেট ব্যবহার সম্পর্কে ধারণা প্রদান অন্যতম।
সভায় ব্র্যাক স্কুল অব ল-এর জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সায়মুম রেজা তালুকদার, সাইবার ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি) মোহাম্মদ নুরুল ইসলাম, টিডিএইচ নেদারল্যান্ডস বাংলাদেশ অফিসের এ দেশীয় প্রতিনিধি মাহমুদুল কবির, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার) ফরিদা ইয়াসমিন, ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এম এ হাকিম, বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের প্রকৌশলী মো. মহিউদ্দিন আহমেদ, সিআইডির অতিরিক্ত ডিআইজি শাহ আলমসহ বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।