প্রশান্তকে নির্যাতনের পর গুলি করে হত্যার অভিযোগ স্বজনদের
কুমিল্লায় বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের (বিজিবি–১০) কথিত মাদকবিরোধী অভিযানে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হননি প্রশান্ত কুমার দাস। তাঁকে ধরে বিজিবি ক্যাম্পে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়। এরপর গভীর রাতে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। তাঁর স্বজনেরা এই দাবি করেছেন। পুলিশ বলছে, প্রশান্তের নামে থানায় কোনো মামলা, সাধারণ ডায়েরি (জিডি) কিংবা অভিযোগ নেই।
বিজিবির দাবি, প্রশান্ত একজন মাদক ব্যবসায়ী ও চোরাকারবারি। তাঁর কাছ থেকে ২ হাজার ১৮৫টি ইয়াবা বড়ি উদ্ধার করা হয়। তিনি ঘটনার দিন চোরাকারবারিদের গুলিতে নিহত হন। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত তিনটা পাঁচ মিনিটের দিকে কুমিল্লার আদর্শ সদর উপজেলার সংরাইশ গোমতী বেড়িবাঁধ এলাকার ভারতীয় সীমান্ত পিলার ২০৮২ থেকে আনুমানিক তিন কিলোমিটার বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ‘বন্দুকযুদ্ধের’ ওই ঘটনা ঘটে।
তবে পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, প্রশান্ত কুমিল্লা শহরে ভিডিওর ব্যবসা করতেন। তিনি সিগারেটও ফুঁকতেন না। থানায় তাঁর নামে মাদক ও চোরাকারবারির কোনো মামলা নেই। মাদক ব্যবসায় জড়িত ছিলেন, এমন কোনো তথ্যপ্রমাণও এলাকার কারও জানা নেই।
গতকাল শনিবার বিকেলে কুমিল্লা নগরের মোগলটুলী এলাকায় প্রশান্তের বাসায় গিয়ে দেখা গেছে, পরিবারের সদস্যরা শোকের পাশাপাশি ক্ষুব্ধ। এক মাস সাত দিন আগে প্রশান্তের মা জোসনা রানী দাস মারা যান। ওই শোক কাটতে না কাটতেই প্রশান্তকে হারিয়েছেন তাঁরা।
মোগলটুলী এলাকার বাদল চন্দ্র দাসের ছেলে প্রশান্ত কুমার দাস। পাঁচ ভাইয়ের মধ্যে সবার ছোট। পরিবারের সদস্যরা তাঁকে বিট্টু বলে ডাকতেন। কুমিল্লা শহরে তিনি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ভিডিও করতেন। ভিডিও জোন নামে তাঁর একটি ভিডিওগ্রাফি সেন্টার আছে। দুই মাস আগে তাঁর বিয়ের আশীর্বাদ হয়। মা মারা যাওয়ার কারণে বিয়ে পিছিয়ে যায়। সপ্তাহখানেক আগে কলকাতায় চিকিত্সা করে দেশে ফেরেন প্রশান্ত।
প্রশান্তের ভাই শামু চন্দ্র দাস বলেন, ‘বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে নগরের মনোহরপুর এলাকার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মালিকের ছেলে ও নগরের হাউজিং এস্টেট এলাকার নাজমুল হাসান তাঁকে বাসা থেকে ডেকে নেন। বেলা সাড়ে তিনটায় খবর আসে প্রশান্তকে কুমিল্লার সদর দক্ষিণ উপজেলার লক্ষ্মীপুর–সংলগ্ন একবালিয়া বিজিবি ক্যাম্পে নাজমুলসহ আটক করা হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা সেখানে যাই। তখন বিজিবির ক্যাম্পের লোকজন প্রশান্ত ও নাজমুলের ছবি তুলছিলেন। এরপর আমরা তাঁদের (বিজিবি) সঙ্গে কথা বলতে চাই। তাঁরা কোনোভাবেই আমাদের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি। পরে সেখান থেকে আমরা ফিরে আসি। এরপর সন্ধ্যা সাতটার দিকে ওষুধ নিয়ে আবার যাই। এতেও সাড়া মেলেনি। পরে কোটবাড়িতে কুমিল্লা বিজিবির হেডকোয়ার্টারে যাই। সেখানে আমার অন্য ভাই, বউদি ও আমার স্ত্রীও যান। সেখানেও আমাদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি।’
শামু চন্দ্র দাস দাবি করেন, ‘আমার ভাইকে আটকের পর নির্যাতন করা হয়। এতে প্রশান্ত অসুস্থ হয়ে পড়েন। আমাদের ধারণা শারীরিক নির্যাতনে মারা যেতে পারেন, এই আশঙ্কা থেকে তাঁকে রাতে কথিত বন্দুকযুদ্ধ বলে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়। বিজিবির সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে যে জায়গার নাম (টিক্কারচর ও সংরাইশ) উল্লেখ করা হয়েছে, সেটিও ঠিক নয়।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুমিল্লার কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, প্রশান্তের বিরুদ্ধে থানায় কোনো মামলা, জিডি কিংবা অভিযোগ নেই।
অভিযোগ প্রসঙ্গে ১০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আবু মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের সঙ্গে গতকাল সকালে ও বিকেলে দুই দফা যোগাযোগের চেষ্টা করা হয। কিন্তু তিনি মুঠোফোন ধরেননি। পরে তাঁকে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হয়। কিন্তু তিনি তাতেও কোনো সাড়া দেননি।