সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে ছয় মাস ধরে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালায় ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। কিন্তু কয়েক দিন যেতে না-যেতেই উচ্ছেদের জায়গাগুলো আবার দখল হয়ে গেছে।
দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এত ঢাকঢোল পিটিয়ে চালানো উচ্ছেদ অভিযানের ফলাফল শূন্য। এতে কোনো কাজই হয়নি। এখন উপায় না দেখে বিকল্প ব্যবস্থা না হওয়া পর্যন্ত ফুটপাতেই হকারদের থাকতে বলেছেন মেয়র সাঈদ খোকন।
জানতে চাইলে মেয়র বলেন, কিছু পুলিশ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নামধারী নেতা-কর্মীরা ফুটপাতে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত। তাঁদের চাঁদাবাজির কারণেই ফুটপাত দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে পর্যায়ক্রমে রাজধানীর সব এলাকা দখলমুক্ত করা হবে।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে বর্তমান দুই মেয়র প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, রাজধানীর সড়ক ও ফুটপাত দখলমুক্ত করে পথচারীবান্ধব করা হবে। নির্বাচিত হওয়ার পর গত বছরের ২০ ডিসেম্বর রাজধানীর গুলিস্তানে ফুটপাত পথচারীদের চলাচলের জন্য পুরোপুরি পরিষ্কার করার ঘোষণা দেন সাঈদ খোকন। মেয়রের ঘোষণার দিনই গুলিস্তান, বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউ, ফুলবাড়িয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকার দুই শতাধিক অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেয় ডিএসসিসি। গতকাল সেখানে গিয়ে দেখা গেছে, উচ্ছেদের পর আবারও সড়ক ও ফুটপাত দখল করেছে হকাররা।
এভাবে গত ছয় মাসে ধোলাইখাল, ইংলিশ রোড, লক্ষ্মীবাজার, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বাবুবাজার, নয়াবাজার, কাপ্তানবাজার, বঙ্গবাজার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চানখাঁরপুল, পলাশী, ঢাকেশ্বরী সড়ক, লালবাগের রাজ নারায়ণধর সড়ক, আজিমপুর, নীলক্ষেত, নিউমার্কেট, এলিফ্যান্ট রোডসহ বিভিন্ন সড়কে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে তিন থেকে সাড়ে তিন হাজার অবৈধ দোকানপাট ও স্থাপনা উচ্ছেদ করে ডিএসসিসি।
এসব স্থানের মধ্যে গুলিস্তান, ধোলাইখাল, বাবুবাজার, কাপ্তানবাজার, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, নীলক্ষেত ও নিউমার্কেট এলাকায় গড়ে চারবার করে উচ্ছেদ করা হয়। সর্বশেষ গত সোমবার বেলা ১১টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের জরুরি বিভাগের সামনে পঞ্চম দফায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়।
এসব উচ্ছেদ অভিযানের অধিকাংশে নেতৃত্বে দিয়েছেন ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা খালিদ আহমেদ, নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট খান মো. নাজমুস শোয়েব ও মামুনুর রশীদ। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় ডিএসসিসির আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তারা নিজ নিজ এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালান।
গত সোমবার ও মঙ্গলবার উচ্ছেদ হওয়া কয়েকটি স্থানে দেখা গেছে, প্রায় ৯৫ শতাংশ এলাকায় এখন উচ্ছেদের কোনো চিহ্ন নেই। গুলিস্তান, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, চাঁদনী চকের সামনের ফুটপাতে দখল করে আছে হকাররা। সড়কে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন পথচারীরা। ইংলিশ রোড ও ধোলাইখালে সড়ক ও ফুটপাত দখল করে আছে ট্রাকস্ট্যান্ড। তবে কাপ্তানবাজার, কবি নজরুল সরকারি কলেজের সামনের ফুটপাত এবং বাবুবাজারের সড়ক ও ফুটপাত এখনো দখলমুক্ত আছে।
নিউমার্কেটের দ্বিতীয় ফটকের সামনের ফুটপাত দখল করে জুতা বিক্রি করছিলেন তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, কয়েক মাস আগে তাঁদের দোকানপাট উচ্ছেদ ও মালামাল জব্দ করেছিল ডিএসসিসি। পরে স্থানীয় আওয়ামী লীগের এক নেতার সহযোগিতায় ফুটপাতে আবার দোকান বসিয়েছেন তিনি। এই আওয়ামী লীগের নেতাকে দিনে ১০০ টাকা করে চাঁদা দিতে হয়। এই নেতার কোনো পরিচয় দিতে চাননি তিনি।