প্রত্যন্ত এলাকায় সেরা প্রাথমিক বিদ্যালয়

>

সিরাজগঞ্জের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন এক শিক্ষক। সাম্প্রতিক ছবি।   প্রথম আলো
সিরাজগঞ্জের প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পাঠদান করছেন এক শিক্ষক। সাম্প্রতিক ছবি। প্রথম আলো

বিদ্যালয়টি সদর উপজেলায়। নাম বিনয়পুর খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ২০১৬ সালে উপজেলায় সেরা হয়।

প্রত্যন্ত এলাকার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নেই। যোগাযোগব্যবস্থা ততটা উন্নত নয়। এত প্রতিকূলতা থাকা সত্ত্বেও গত ১০ বছরে এই বিদ্যালয়ের ৪১৬ জন শিক্ষার্থী পিইসি পরীক্ষায় প্রথম বিভাগ ও জিপিএ-৫ পেয়েছে। ২০১৬ সালে উপজেলায় হয়েছে সেরা।

এই ঈর্ষণীয় সাফল্য পাওয়া বিদ্যালয়টি সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের গোবিন্দপটল গ্রামে। শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি, পরীক্ষায় ভালো ফলসহ নানা কারণে নজর কেড়েছে বিদ্যালয়টি। এর নাম বিনয়পুর খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়ের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৯৩৫ সালে রতনকান্দি ইউনিয়নের গোবিন্দপটল গ্রামের মোবারক হোসেনের দান করা ৩৫ শতক জমিতে প্রতিষ্ঠা করা হয় বিনয়পুর খোলাবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। ১৯৭৩ সালে এটিকে সরকারীকরণ করা হয়। এখানে ছেলে ও মেয়েদের আলাদা ক্লাস নেওয়া হয়। ২০১৬ সালে সার্বিক বিবেচনায় বিদ্যালয়টি উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করে।

প্রধান শিক্ষক মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, বলা, শোনা, পড়া, লেখা, নৈতিক, শারীরিক ও আত্মিক শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়ায় উপজেলায় তাঁদের বিদ্যালয় শ্রেষ্ঠ স্থান অর্জন করেছে। সর্বাধিক উপস্থিতির জন্য ২০০৭ সালে জাতীয় পর্যায়ে সম্মাননা পায় তাঁদের বিদ্যালয়। গত ৩০ এপ্রিল প্রথম সাময়িক পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর গত বৃহস্পতিবারই প্রথম ক্লাস শুরু হয়। অন্য বিদ্যালয়গুলোতে পরীক্ষার পরের দিন উপস্থিতি কম থাকলেও ওই দিন প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী উপস্থিত এখানে। এখানে ছাত্রের চেয়ে ছাত্রীর সংখ্যা বেশি। ফলাফলের দিক থেকেও এগিয়ে রয়েছে ছাত্রীরা। প্রাক্‌-প্রাথমিক থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত ৪১২ জন শিক্ষার্থী আছে। এর মধ্যে ছাত্রী ২১০ জন। বিদ্যালয়টিতে সাতজন শিক্ষক ও একজন অফিস সহায়ক রয়েছেন।

শিক্ষকদের দেওয়া তথ্যমতে, ২০০৭ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী (পিইসি) পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৭৪০ জন। তাদের মধ্যে প্রথম বিভাগ ও জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে ৪১৬ জন। এর মধ্যে বৃত্তি পেয়েছে ২৮ জন। এখানে শিক্ষার্থীদের হাতের লেখার ওপর অনেক জোর দেওয়া হয়। তাই যাদের লেখা ভালো, তাদের অনুসরণ করতে বলা হয় অন্যদের। এ কারণে ফলও ভালো পাওয়া গেছে বলে জানান তিনি। একজন সহকারী শিক্ষক বলেন, শিক্ষার্থীদের ছোট থেকেই পাঠদানের পাশাপাশি নৈতিক ও সামাজিক অনেক কিছু শেখানো হয়। এতে অভিভাবকেরাও খুশি হন। তাঁরাও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করেন বলে জানান তিনি।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী রানা বাবু, জলি খাতুন; চতুর্থ শ্রেণির আনিশা আকতার বলে, ‘বাড়িতে পড়া বুঝিয়ে দেওয়ার মতো কেউ নেই। তাই শিক্ষকেরা বিদ্যালয়েই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আমাদের পড়ান।’

ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি ইমদাদুল হক বলেন, শিক্ষক-শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সার্বিক প্রচেষ্টায় বর্তমানে এটি সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।

এ বিষয়ে সদর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আপেল মাহমুদ বলেন, প্রান্তিক যোগ্যতাসম্পন্ন বিদ্যালয়টিকে আরও সমৃদ্ধ করতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।