ব্লগার নীলাদ্রি হত্যা মামলার তদন্ত চার বছরেও শেষ হয়নি

নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়
নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়
>

• ২০১৫ সালে ব্লগার নীলাদ্রি খুন হন
• হত্যায় ৭ জঙ্গির জড়িত থাকার তথ্য
• সাতজনের মধ্যে পাঁচজন গ্রেপ্তার
• তিনজনের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি

ব্লগার নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় হত্যা মামলার তদন্ত চার বছরেও শেষ হয়নি। ২০১৫ সালের ৭ আগস্ট রাজধানীর খিলগাঁওয়ে ভাড়া বাসায় ব্লগার নীলাদ্রি খুন হন। তিনি বেসরকারি একটি সংস্থায় (এনজিও) কাজ করার পাশাপাশি ব্লগে নিয়মিত লিখতেন এবং গণজাগরণ মঞ্চের সক্রিয় কর্মী ছিলেন।

মামলার তদন্ত তদারক কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) অতিরিক্ত উপকমিশনার শামসুল আরেফিন প্রথম আলোকে বলেন, ব্লগার নীলাদ্রি হত্যায় এখন পর্যন্ত নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের (পুরোনো নাম আনসারুল্লাহ বাংলা টিম) সাত জঙ্গির জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে পাঁচজন গ্রেপ্তার হয়েছে। হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকসহ দুজনকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। তাঁদের সঙ্গে অন্য কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া গেলে তাঁদের আইনের আওতায় আনতে মামলার তদন্ত শেষ করতে দেরি হচ্ছে। এ অবস্থায় মামলার তদন্তভার ডিএমপির কাউন্টার টেররিজম বিভাগে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

২০১৫ সালের ৭ আগস্ট বেলা একটার দিকে নীলাদ্রি খিলগাঁওয়ে ভাড়া বাসায় ল্যাপটপ নিয়ে শোবার ঘরে কাজ করছিলেন। কড়া নাড়ার শব্দে দরজা খুলে দেন নীলাদ্রির স্ত্রী আশা মণি। ভাড়া নেওয়ার কথা বলে ওই ব্যক্তি ঘরে ঢোকেন। ভেতর থেকে নীলাদ্রি বেরিয়ে এসে লোকটিকে বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা বলার পরামর্শ দিতেই আরও তিন দুর্বৃত্ত ঘরে ঢুকে পড়ে। তারা নীলাদ্রির স্ত্রী আশা মণি ও বেড়াতে আসা তাঁর ছোট বোন তন্বীকে আটকে রেখে ছুরি ও চাপাতি দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে নীলাদ্রির মৃত্যু নিশ্চিত করে। তারা নীলাদ্রির ল্যাপটপ ও মুঠোফোন নিয়ে যায়। পরে খিলগাঁও থানায় আশা মণি একটি মামলা করেন। সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় ডিবি পুলিশ।

তদন্তসংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, নীলাদ্রি হত্যায় ডিবি পুলিশ ১২ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁদের মধ্যে গ্রেপ্তার জঙ্গি খাইরুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে রিফাত ওরফে ফাহিম ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাজিদ ওরফে শাহাব, শেখ মোহাম্মদ আবদুল্লাহ ওরফে জায়েদ ওরফে জাবেদ ওরফে আবু ওমায়ের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তাঁদের জবানবন্দিতে উঠে এসেছে আনসার আল ইসলামের সামরিক শাখার প্রধান সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর সৈয়দ জিয়াউল হকের নির্দেশ ও পরিকল্পনা এবং সেলিম ওরফে আল হাদীর সমন্বয়ে ব্লগার নীলাদ্রিকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এতে অংশ নেন জঙ্গি মাসুদ রানা, আরাফাত রহমান সিয়াম, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন। জঙ্গি নেতা জিয়াউল হক ও সেলিম ছাড়া বাকি পাঁচজন এখন কারাগারে আছেন। এ ছাড়া নীলাদ্রি হত্যায় গ্রেপ্তার সন্দেহভাজন জঙ্গি সাদ আল নাহিন (সাবেক শ্রমমন্ত্রী মুজিবুল হকের ভাতিজা), তারেকুল আলম, মাওলানা মুফতি আবদুল গাফ্ফার, মর্তুজা ফয়সাল সাব্বির, কামাল হোসেন সরদার ও কাউসার হোসেন খানও কারাগারে আছেন। তাঁরা ব্লগার হত্যাসহ অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হন এবং আনসার আল ইসলামের বিভিন্ন দায়িত্বে আছেন।

যোগাযোগ করা হলে মামলার বাদী আশা মণি বলেন, ‘হত্যাকাণ্ডের সময় আমি কয়েকজন খুনিকে দেখেছি। কিন্তু ওই সময় আমার মাথায় কিছুই কাজ করেনি। কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করে আমাকে দেখানো হয়েছিল। তাদের চিহ্নিত করতে পারিনি।’ তিনি হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার করে তাদের সুষ্ঠু বিচার দাবি করেন।