আলপনায় রঙিন রংপুরের দেড় কিলোমিটার পথ
চৈত্র সংক্রান্তির ক্ষণে বাংলা নববর্ষকে স্বাগত জানাতে ১৩ এপ্রিল শনিবার বিকেলে রংপুরে আলপনা উৎসবের আয়োজন করা হয়। প্রথমবারের মতো বিভাগীয় নগর রংপুরে হয়েছে এই ভিন্নমাত্রার আয়োজন। বঙ্গবন্ধু চত্বর থেকে টাউন হল প্রজন্ম চত্বর পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে করা হয় এই আলপনা। দৈর্ঘ্য-প্রস্থে মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ বর্গফুট আয়তন আলপনায় ভরিয়ে তোলা হয়েছে।
বিকেল চারটায় রং তুলি হাতে আলপনা উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা। পিচঢালা সড়কে আলতো করে তুলির আঁচড়ে উদ্বোধন করেন ‘রঙে রাঙাব রংপুর’ উৎসবের। রাতভর চলে আলপনা আঁকা। শেষ হয় বাংলা নববর্ষের সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে। ঘুম থেকে উঠে উৎসবে বেরিয়ে পড়া রংপুরবাসী অবাক চোখে আবিষ্কার করে, তাঁদের চেনা প্রিয় সড়ক সেজেছে কী বর্ণিল রঙে! এই আয়োজনের স্পন্সর বার্জার পেইন্টস।
সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা এই আয়োজনের প্রশংসা করে বলেন, ‘রংপুর যে তার ঐতিহ্য, ইতিহাস আর সংস্কৃতি দিয়ে রঙে-রসে ভরপুর, তা সারা দেশের কাছে নতুন করে তুলে ধরতে হবে।’ বিশেষ অতিথি রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল আলীম মাহমুদ বলেন, ‘বৈশাখ বরণকে ঘিরে রংপুরে এই আয়োজন প্রশংসনীয়। এই আয়োজনে এত এত মানুষ একসঙ্গে কাজ করেছে। এত মানুষ তা উদ্যাপন করেছে। এ ধরনের উৎসব আয়োজন সমাজে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতি বাড়ায়।’
আলপনা উৎসব কমিটির আহ্বায়ক মাহামুদ-উন-নবী ডলার জানান, ‘আমাদের প্রাণের উৎসব বৈশাখ বরণ। আমাদের কিছু স্বেচ্ছাসেবী আজ আলপনার রঙে রংপুর রাঙিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। এই উৎসব আমাদের গৌরবের।’ তিনি জানালেন, প্রায় ৭০০ আলপনা আঁকিয়ে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে এই কাজটি করেছে।
স্বেচ্ছাসেবকদের একজন জীবন ঘোষ বললেন, ‘শুধু এই কাজটি হবে জেনে আমি ঢাকা থেকে চলে এসেছি। প্রাণে টানে ঘরে ফেরার একটা উপলক্ষও হলো এই বৈশাখ। শুধু আমরাই নই, চলতি পথে যেতে যেতে অনেকে এসে আমাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। আলপনায় রং ভরেছেন।’
রংপুর জিলা স্কুলের সাবেক ছাত্র মঈনুল হাফিজ বলেছেন, ‘রংপুর বরাবরই সারা দেশের মধ্যে অসাম্প্রদায়িকতার একটা বড় উদাহরণ ছিল। ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলন, সিপাহি বিপ্লব থেকে ভাষা আন্দোলন, মহান মুক্তিযুদ্ধ সব বড় বড় আন্দোলনে রংপুরের গৌরবগাথা রূপকথার মতো। এই শহরের নতুন প্রজন্মের আছে আমরা সেই গৌরবের কথাও তুলে ধরতে চাই।’