টাঙ্গাইল-৫ আসনে আ.লীগ প্রার্থীকে সরে যেতে নির্দেশ
টাঙ্গাইল-৫ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী ছানোয়ার হোসেনকে তাঁর দল নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে বলেছে। এখানে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী শফিউল্লাহ আল মুনির।
কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের এ নির্দেশনায় হতাশা প্রকাশ করেছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। তবে উজ্জীবিত জাতীয় পার্টি ও শফিউল্লাহ আল মুনিরের অনুসারীরা।
টাঙ্গাইলের এ আসনটির দাবিদার ছিল জাতীয় পার্টি। কিন্তু শেষ মুহূর্তে আওয়ামী লীগ বর্তমান সাংসদ ছানোয়ার হোসেনকে মনোনয়ন দেয়। আর জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়নপত্র জমা দেন দলের জেলা শাখার আহ্বায়ক শফিউল্লাহ আল মুনির। তখন বলা হয়েছিল এ আসনটিতে জোট হবে না। আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি উভয় দলের প্রার্থীর জন্য উন্মুক্ত থাকবে। গতকাল বৃহস্পতিবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ভিডিও সমাবেশের মাধ্যমে টাঙ্গাইলের সবগুলো আসনের প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেন। কিন্তু টাঙ্গাইল-৫ আসনের প্রার্থীকে পরিচয় করিয়ে দেননি। সেখানে শেখ হাসিনা বলেন, ‘টাঙ্গাইল-৫ আসনে আমরা ছানোয়ার হোসেনকে মনোনয়ন দিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের জাতীয় পার্টির শফিউল্লাহ আল মুনির সেও প্রার্থী। জাতীয় পার্টির সঙ্গে আমাদের মহাজোটের সমঝোতা হয়েছে। কাজেই ঐক্যটাও আমাদের ধরে রাখা একান্তভাবে প্রয়োজন।’
এই সমাবেশের পর ছানোয়ার হোসেন নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে থাকার ঘোষণা দেন।
টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও পৌর মেয়র জামিলুর রহমান মিরন শুক্রবার সন্ধ্যায় প্রথম আলোকে জানান, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এবং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তারা দুজনেই টাঙ্গাইল-৫ আসনে ছানোয়ার হোসেনকে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে এবং মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির শফিউল্লাহ আল মুনিরের জন্য নেতা-কর্মীদের কাজ করতে বলেছেন।
এ বার্তা পাওয়ার পর ছানোয়ার হোসেন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য ঢাকায় গিয়েছেন। একাধিকবার টেলিফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তার অনুসারীরা জানিয়েছেন, তারা এখনো নির্বাচনী কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন।
মহাজোট প্রার্থী শফিউল্লাহ আল মুনির বলেন, টাঙ্গাইল-৫ আসনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মহাজোট থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এ ব্যাপারে উভয় দলের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বৃহস্পতিবার ভিডিও সমাবেশেও বিষয়টি সম্পর্কে বলেছেন। এ ছাড়া উভয় দলের মহাসচিব নিজ নিজ দলের জেলার নেতাদের বিষয়টি জানিয়ে দিয়েছেন। অতএব এ নিয়ে বিভ্রান্তির অবকাশ নেই।
এ আসনে অন্যান্যের মধ্যে বিএনপি থেকে মাহমুদুল হাসান (ধানের শীষ), ইসলামী আন্দোলনের খন্দকার ছানোয়ার হোসেন (হাতপাখা), বিএনএফের শামীম আল মামুন (টেলিভিশন), খেলাফত আন্দোলনের সৈয়দ খালেদ মোস্তফা (বটগাছ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির আবু তাহের (আম) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ সিদ্দিকী (মাথাল) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
১৯৮৬ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টির প্রার্থী মীর মাজেদুর রহমান সাংসদ নির্বাচিত হন টাঙ্গাইল-৫ থেকে। ১৯৮৮ ও ১৯৯১ সালের নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে মাহমুদুল হাসান সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে ১৯৯৪ সালে সাংসদ মাহমুদুল হাসান বিএনপিতে যোগ দেন। ১৯৯৬ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০০১ সালে বিএনপির প্রার্থী হিসেবে সাংসদ হন মাহমুদুল হাসান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে মহাজোট প্রার্থী হিসেবে জাতীয় পার্টির সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য আবুল কাশেম সাংসদ নির্বাচিত হন। ২০১৪ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এ আসনে মনোনয়ন দেয় বর্তমান সাংসদ ছানোয়ার হোসেনকে।