>• ভোটের ৭ দিন আগে আগ্নেয়াস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হবে
• ইসি ইতিমধ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযানের নির্দেশ দিয়েছে
• নির্দেশ মেনে পুলিশের চলমান অভিযান জোরদার করা হয়েছে
• দেশে কত অবৈধ অস্ত্র রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই
এবার ভোটের আগে বৈধ অস্ত্র থানায় জমা দিতে হচ্ছে না। অস্ত্র জমা নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসে ভোটের সাত দিন আগে আগ্নেয়াস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। পুলিশ সদর দপ্তর ও নির্বাচন কমিশন সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
পদস্থ পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সাধারণত সব নির্বাচনের আগে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালানোর পাশাপাশি বৈধ অস্ত্র থানায় জমা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়। নির্বাচন কমিশনের নোটিশের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ নির্দেশ জারি করে। তবে এবার এর ব্যতিক্রম হচ্ছে। নির্বাচন কমিশন ইতিমধ্যে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযানের নির্দেশ দিয়েছে। সেই নির্দেশ মেনে অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের চলমান অভিযানকে আরও জোরদার করা হয়েছে। এ কারণে বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হচ্ছে না।
জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল প্রথম আলোকে বলেন, যাঁরা বৈধ অস্ত্র নিয়েছেন, তাঁরা সরকারের নিয়ম মেনে নিজেদের নিরাপত্তার জন্য বৈধভাবে অস্ত্র সংগ্রহ করেছেন। উপযুক্ত সময়ে এ অস্ত্রের ব্যবহার করতে না পারলে তাঁদের অধিকার ক্ষুণ্ন হয়। তা ছাড়া নির্বাচন কমিশন এ ব্যাপারে কোনো নোটিশও দেয়নি।
প্রতিটি নির্বাচনের সময় বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও এবার কেন তা হচ্ছে না, জানতে চাইলে ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে ভোটের সময় বৈধ অস্ত্র জমা দেওয়ার কোনো বাধ্যবাধকতার কথা বলা হয়নি। তা ছাড়া প্রার্থীরা সব এখন মাঠে। তাঁদের নিজেদের নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবতে হবে। আবার যাঁরা বৈধ অস্ত্র নিয়ে চলাফেলা করতে অভ্যস্ত, তাঁরা অস্ত্র ছাড়া নিজেদের নিরাপত্তাহীন ভাবেন। অনেক ক্ষেত্রে এটা তাঁদের জন্য হুমকিও হতে পারে। সে কারণে এবার বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হচ্ছে না। তবে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশকে ইতিমধ্যে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
তাহলে ভোটকেন্দ্রে সবাই অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করতে পারবেন কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ভোটের সাত দিন আগে এ ব্যাপারে একটি নির্দেশনা দেওয়া হবে। কেউ যাতে বৈধ অস্ত্র বহন ও প্রদর্শন করতে না পারেন, সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা থাকবে। এই নির্দেশের পর কেউ আর অস্ত্র বহন করতে পারবেন না। তিনি বলেন, আসলে বৈধ অস্ত্র জমা রাখা না-রাখাতে কোনো কাজ হয় না।
দেশে কী পরিমাণ অবৈধ অস্ত্র রয়েছে, তার সঠিক পরিসংখ্যান নেই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে। বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট পার্টনারশিপ সেন্টারের (বিডিপিসি) গবেষণাসূত্রে জানা যায়, বাংলাদেশে অবৈধ অস্ত্রের দেড় শতাধিক সিন্ডিকেট রয়েছে। আর এদের হাতে অবৈধ অস্ত্র আছে চার লাখের মতো। তবে বৈধ অস্ত্রের আড়ালে অবৈধ অস্ত্রের কেনাবেচার অভিযোগও রয়েছে অনেক অস্ত্র ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে। গত বছর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এমন এক ব্যবসায়ীকে গ্রেপ্তারও করেছিল। এ ছাড়া রাজনৈতিক ক্যাডারদের অনেকেই প্রভাব খাটিয়ে বৈধ অস্ত্র বাগিয়ে নিলেও তা ভাড়ায় খাটানো হয় বলে অভিযোগ আছে। এমন কিছু অভিযোগের তদন্ত গোয়েন্দা পুলিশ করেছে বলে জানা গেছে। ওই সূত্র জানায়, এ অভিযোগের একটি বড় উদাহরণ হলেন নারায়ণগঞ্জের সাত খুনের প্রধান অভিযুক্ত নূর হোসেন। তাঁর নিজের লোকজনের ১১টি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ছিল, যা দিয়ে তিনি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করে বেড়াতেন।
নির্বাচনের আগে অস্ত্র জমা না দেওয়ার সিদ্ধান্তকে কীভাবে দেখেন, প্রশ্ন করা হলে সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার (অব.) সাখাওয়াত হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, কেউ যাতে ভয় দেখাতে না পারে, হুমকি দিতে না পারে, সে কারণে বৈধ অস্ত্র জমা নেওয়া হয়। এখন সাত দিন অস্ত্র বহনে নিষেধাজ্ঞা দিলে কী লাভ হবে? ইতিমধ্যে মারামারি শুরু হয়ে গেছে। পরিস্থিতি কত দূর যাবে, কেউ বলতে পারবে না। তিনি বলেন, ‘কমিশন এ সিদ্ধান্ত কীভাবে নিয়েছে, সেটা জানি না। তবে আমি মনে করি, বৈধ অস্ত্র জমা না নেওয়ার সিদ্ধান্তটি সঠিক হয়নি।’