নরসিংদীতে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের অভিযানে নিহত সন্দেহভাজন জঙ্গি আবদুল্লাহ আল বাঙ্গালী ও আকলিমা আকতার মনির বাড়ি ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে। সম্পর্কে তাঁরা স্বামী-স্ত্রী। আবদুল্লাহ বাড়ি ছাড়ার সময় স্বজনদের জানিয়েছিলেন, তাঁর মোবাইল কয়েক দিন বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে তিনিই যোগাযোগ করবেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নিহত আবদুল্লাহ কালীগঞ্জ উপজেলার বেজপাড়া গ্রামের রবিউল ইসলামের ছেলে। তবে পরিবার ও এলাকাবাসীর কাছে তিনি গোলাম মোস্তফা ওরফে রুবেল নামে পরিচিত। তাঁর স্ত্রী ঢাকার গাজীপুর এলাকার শহিদুল ইসলামের মেয়ে। তিনি মানারাত বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন।
গত সোমবার দিবাগত রাতে নরসিংদীর মাধবদী উপজেলার ভগীরথপুরে সন্দেহভাজন জঙ্গি আস্তানা হিসেবে দুটি বাড়ি ঘিরে রাখেন ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট ও পুলিশ সদর দপ্তরের এলআইসি শাখার সদস্যরা। মঙ্গলবার বিকেল পাঁচটায় ওই বাড়িতে ‘অপারেশন গর্ডিয়ান নট’ অভিযান চালানো হয়। এতে নিহত হন আবদুল্লাহ ও তাঁর স্ত্রী আকলিমা। পুলিশের দাবি, নিহত আবদুল্লাহ নব্য জেএমবির মিডিয়া শাখার প্রধান।
র্যাবের একটি সূত্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছে, ২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট আকলিমাসহ তিন নারীকে রাজধানীর মিরপুরে গ্রেপ্তার করেছিল র্যার-৪। র্যাব সম্প্রতি তাঁদের আরেক বান্ধবী শাহনাজ আকতার ওরফে সাদিকাকে গ্রেপ্তার করে। রাজধানীর ডেমরা এলাকা থেকে গত ৩০ সেপ্টেম্বর তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। এই চারজনের মধ্যে মঙ্গলবারের অভিযানে আকলিমা আকতার নিহত হন। পুলিশ বলছে, তাঁরা কয়েক মাস জেল খাটার পর জামিনে বেরিয়ে এসে আবার জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়েন।
পুলিশ ও নিহত আবদুল্লাহর পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আবদুল্লাহ ওরফে মোস্তফা যশোর এম এম কলেজের অনার্স তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। সেখানে একটি ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগদানকারী প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন তিনি। এরপর গত আট-নয় মাস ধরে তিনি আহলে হাদিসের মতবাদ অনুসরণ করতে শুরু করেন। ছোট বয়সে তাঁর বাবা মারা যান। একই গ্রামের আবদুল মান্নান ওরফে খোকনের সঙ্গে তাঁর মা মর্জিনার বিয়ে হয়। তখন থেকেই আবদুল্লাহ তাঁর দাদা আক্কাছ আলী ও মায়ের সংসারে বসবাস করতেন থাকেন। আবদুল্লাহ পাঁচ মাস আগে আকলিমার সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক তৈরি করে বিয়ে করেন বলে তাঁর পরিবার জানায়। পড়াশোনা করায় তাঁর স্ত্রী বাবার বাড়িতেই থাকতেন। ১ অক্টোবর আবদুল্লাহ ঢাকায় শ্বশুরবাড়ি গিয়ে তিন দিন থাকার পর স্ত্রীকে নিয়ে যশোর চলে আসেন। এরপর থেকে তিনি নিখোঁজ ছিলেন। বুধবার রাতে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, পরিবারের সদস্যরা কান্নাকাটি করছেন। প্রতিবেশীরা বলছেন, আবদুল্লাহ এলাকায় ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিত।
মোস্তফা রুবেলের চাচা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘চলতি মাসের ২ তারিখে সে বাড়ি থেকে যশোর যায়। সেখানে একটি বাসা ভাড়া নিয়ে থাকত। যাওয়ার সময় বলে যায়, কয়েক দিন মোবাইল বন্ধ থাকবে। প্রয়োজনে সে নিজেই ফোন দেবে। এভাবে এক সপ্তাহ মোবাইল বন্ধ পেয়ে তাঁরা খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন।’ বুধবার সন্ধ্যায় তাঁরা খবর পান, নরসিংদীর ওই ঘটনায় তাঁদের ছেলে ও ছেলের স্ত্রী মারা গেছেন।
নিহত মোস্তফা রুবেলের সৎবাবা আবদুল মান্নান জানান, ছেলের বিয়ের সময় তিনি সেখানে গিয়েছিলেন। কিন্তু পুত্রবধূকে দেখতে পারেননি।
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইউনুছ আলী বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমার কাছে কোনো তথ্য নেই। খোঁজ নিয়ে পরে জানানো হবে।’