চিকুনগুনিয়ায় ৯৫ শতাংশ রোগী শয্যাশায়ী হয়
>
- চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৯৫ শতাংশ শয্যাশায়ী ছিলেন
- ৩০ শতাংশ রোগী কমপক্ষে ১০ দিন কোনো কাজ করতে পারেননি
- ৬৬ শতাংশ রোগীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে
চিকুনগুনিয়া মানুষকে মারাত্মকভাবে দুর্বল করে। গত বছর ঢাকায় চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের ৯৫ শতাংশ শয্যাশায়ী ছিলেন। ব্যথার জন্য প্রায় ৭০ শতাংশ রোগীর দৈনন্দিন কাজে ব্যাঘাত ঘটেছিল। ৩০ শতাংশ রোগী কমপক্ষে ১০ দিন কোনো কাজ করতে পারেননি। ৬৬ শতাংশ রোগীর ঘুমে ব্যাঘাত ঘটে।
‘চিকুনগুনিয়া আউটব্রেক (২০১৭) ইন বাংলাদেশ: ক্লিনিক্যাল প্রোফাইল, ইকোনমিক ইমপ্যাক্ট অ্যান্ড কোয়ালিটি অব লাইফ ডিউরিং দ্য একুইট ফেজ অব দ্য ডিজিজ’ শীর্ষক গবেষণা নিবন্ধে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি বছরের ৬ জুন নিবন্ধটি যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্লস নেগলেকটেড ট্রপিক্যাল ডিজিজ নামের চিকিৎসা সাময়িকীতে প্রকাশিত হয়। ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে যাঁদের মাসিক আয় ২৫ হাজার টাকার কম ছিল, তাঁরা সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েন। কাজে দীর্ঘদিন অনুপস্থিত থাকার কারণে অনেকের চাকরি চলে যায়। ৬০ বছরের বেশি বয়স, মাসিক আয় ৫০ হাজার টাকার বেশি, চাকরিজীবী এবং ব্যবসায়ীদের জীবনমানও অন্যদের তুলনায় কমে যায়।
বেসরকারি প্রতিষ্ঠান বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (বিআরএফ) উদ্যোগে ১১১ জন স্বেচ্ছাসেবী গবেষক এই গবেষণায় অংশ নেন। তাঁদের মধ্যে ২০টি বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৩৪টি প্রতিষ্ঠানের চিকিৎসক, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, পরিসংখ্যানবিদ এবং স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা ছিলেন। চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার প্রথম দুই সপ্তাহে রোগীর অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি প্রশ্নপত্র পূরণ করেন গবেষকেরা। ১ হাজার ৩২৬ জন রোগীর তথ্য ২০১৭ সালের ২৪ জুলাই থেকে ৫ আগস্টের মধ্যে সংগ্রহ করা হয়। জীবনমান ও পারিবারিক আর্থিক অবস্থার ওপর চিকুনগুনিয়ার প্রভাব জানতে এই গবেষণা করা হয়েছিল।
চিকুনগুনিয়া ভাইরাসজনিত রোগ, যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। জ্বর, গিরায় ব্যথা, চামড়ায় র্যাশ, মাংসপেশিতে ব্যথা, মাথাব্যথা, চুলকানি এবং শরীর ফুলে যাওয়া এই রোগের লক্ষণ। গবেষণায় ৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, সমস্যা শুরু হয় জ্বরের আগে গিরায় ব্যথা দিয়ে।
গবেষণায় ব্যথার তীব্রতা পরিমাপে ‘নিউমারিক্যাল পেইন রেটিং-স্কেল’ নামের পরিমাপক ব্যবহার করা হয়। ওই মানদণ্ডে ব্যথার তীব্রতা বোঝাতে ১ থেকে ১০ পর্যন্ত যেকোনো একটি নম্বর দিতে বলা হয়। তাতে দেখা গেছে, ব্যথার তীব্রতা ছিল ৮-এর বেশি, যা ছিল তীব্র মাত্রার অন্তর্গত। ১৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের গিরায় ব্যথা ও চামড়ায় র্যাশ বেশি ছিল। ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের গিরা ফুলে যাওয়া ছিল অন্যতম প্রধান লক্ষণ। প্রাপ্তবয়স্করা ব্যথার তীব্রতার বেশি অভিযোগ করেন। গবেষকেরা বলেছেন, এ রোগে গিরায় অসহ্য ব্যথা হয়, জীবন স্থবির হয়ে যায়।
এ গবেষণার সহপ্রধান অনুসন্ধানকারী এবং বায়োমেডিকেল রিসার্চ ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ রিসার্চ ফেলো মুহাম্মদ সওগাতুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ২০১৭ সালের মতো ব্যাপক আকারে চিকুনগুনিয়া আগে বাংলাদেশে দেখা দেয়নি। রোগটি সম্পর্কে না জানার কারণে জনমনে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছিল। এ রোগে মানুষ মারা যায় না। কিন্তু আক্রান্ত হলে মানুষের কর্মক্ষমতা নষ্ট হয়।
রাজধানীর কল্যাণপুরের বাসিন্দা শাহানা আক্তার ও তাঁর চাকরিজীবী ছেলে গত বছর প্রায় একই সঙ্গে চিকুনগুনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিলেন। শাহানা আক্তার বলেন, কাজের জন্য দুজন কাজের লোক রাখতে হয়েছিল। মা ও ছেলে বিছানা থেকে একা নামতেও পারতেন না। ছেলে ১৪ দিন কর্মস্থলে অনুপস্থিত ছিলেন।