বিকল্পধারার মহাসচিব মান্নানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলা
অনুমোদন ছাড়াই নিজ প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়ে তার অপব্যবহার করায় সানম্যান গ্রুপের প্রতিষ্ঠাতা ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের মহাসচিব মেজর (অব.) আবদুল মান্নানসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জালিয়াতি ও অর্থ পাচার আইনে মামলা করা হয়েছে। পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) মতিঝিল থানায় এই মামলা করেছে।
গতকাল বুধবার সিআইডির অর্গানাইজড ক্রাইম বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার মোল্যা নজরুল ইসলাম তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংকের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে মেজর (অব.) আবদুল মান্নানের ঋণ জালিয়াতির বিষয়টি গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে তদন্ত শুরু করে সিআইডি। দীর্ঘ তদন্ত শেষে যথাযথ তথ্য ও প্রমাণের ভিত্তিতে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে।
এজাহারভুক্ত আসামিরা হলেন, বিআইএফসির সাবেক চেয়ারম্যান মেজর (অব.) আবদুল মান্নান, তাঁর স্ত্রী বিআইএফসির সাবেক চেয়ারম্যান উম্মে কুলসুম, মান্নানের শ্যালক বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে লিমিটেডের পরিচালক রইস উদ্দীন, মান্নানের মেয়ে তানজিলা মান্নান ও তাজরিনা মান্নান। এ ছাড়া আসামির তালিকায় আরও আছেন বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে লিমিটেডের পরিচালক রিজিয়া সুলতানা, বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল গেটওয়ে লিমিটেডের পরিচালক আকবর হোসেন, আমিনুর রহমান খান, বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি লিমিটেডের (বিআইএফসি) সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইনামুর রহমান, সাবেক এসএভিপি এবং বিআইএফসি লিমিটেডের ইউনিট প্রধান আহম্মেদ করিম চৌধুরী, বিআইএফসির সাবেক ব্যবসা প্রধান সৈয়দ ফাখরী ফয়সাল।
মামলার তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেজর (অব.) মান্নান তাঁর ভাই-বোন, স্ত্রী, সন্তান, শ্যালক ও আত্মীয়-স্বজনের নামে শ্যাডো অ্যাকাউন্ট খুলে মোটা অঙ্কের টাকা ঋণ নিয়েছেন। নিজ প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফিন্যান্স কোম্পানি লিমিটেড (বিআইএফসি) থেকে ওই ঋণ নেওয়া হয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোনো অনুমোদন ছাড়াই। চলতি বছরের মার্চ মাসে সিআইডি অনুসন্ধানে ঋণ গ্রহণে জালিয়াতির প্রাথমিক প্রমাণ পায়। তদন্ত শেষে কয়েক দিন আগে মামলা করা হয়। সিআইডির অনুসন্ধানের আগে আব্দুল মান্নানের ঋণ কেলেঙ্কারির বিষয়টি প্রথম অনুসন্ধান করে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সিআইডির এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাদের নামে অ্যাকাউন্ট খুলে ঋণ নেওয়া হয়েছিল, তাদের সবাইকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কোন অ্যাকাউন্ট থেকে কত টাকা নেওয়া হয়েছে, এসব অর্থ কোথায়, কীভাবে গেছে, তাও তদন্ত করা হয়েছে।
সিআইডি কর্মকর্তারা বলেন, মান্নানের ঋণ জালিয়াতির বিষয়টি প্রথম উঠে আসে বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুসন্ধানে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুসন্ধানে ধরা পড়ে, আবদুল মান্নানের মালিকানাধীন সানম্যান গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বিআইএফসি থেকে জালিয়াতির মাধ্যমে ৫১৮ কোটি টাকা তুলে নেন তিনি। এরপর ছয় মাস সময় দেওয়ার পরও তা পরিশোধ করেননি। ঋণ জালিয়াতির বিষয়টি দৃষ্টিগোচর হওয়ার পর প্রাথমিক অনুসন্ধান শেষে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ থেকে ২০১৫ সালের ২২ ডিসেম্বর বিআইএফসির পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানের কাছে এ ব্যাপারে ব্যাখ্যা চাওয়া হয়। সন্তোষজনক জবাব না পাওয়ায় ওই মাসেই বিআইএফসির পরিচালনা পরিষদ ভেঙে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে ঋণ জালিয়াতির বিষয়টি নিবিড় অনুসন্ধানের জন্য সিআইডিতে পাঠানো হয়।