চাঁদপুর-চট্টগ্রাম রেলপথের আন্তনগর ট্রেন মেঘনা এক্সপ্রেসে চলাচল করতে গিয়ে যাত্রীরা দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। বগি সংকটের কারণে এই ট্রেনে আসনসংখ্যার দ্বিগুণ বেশি যাত্রী পরিবহন করা হচ্ছে। এতে এই সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এই সমস্যা সমাধানে যাত্রীরা এই পথে একটি নতুন ট্রেন অথবা মেঘনা এক্সপ্রেসে আরও বগি সংযোজন করার দাবি জানিয়েছেন।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ট্রেনটি প্রতিদিন চাঁদপুর রেলস্টেশন থেকে ভোর ৫টায় ছেড়ে সকাল ১০টায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে পৌঁছায়। একই দিন বিকেল সোয়া ৫টায় চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে এটি রাত ১০টায় চাঁদপুর রেলস্টেশনে পৌঁছায়।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, দেশের দক্ষিণাঞ্চলের যাত্রীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে ১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ে চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরের মধ্যে মেঘনা এক্সপ্রেস চালু করে। শুরুতে ট্রেনটিতে ১৯টি বগি ছিল। বর্তমানে এটি ১৫টি বগি নিয়ে চলাচল করে। এর মধ্যে একটি প্রথম ও একটি দ্বিতীয় শ্রেণির এবং ১৩টি শোভন শ্রেণির। এসব শ্রেণির যাত্রীদের জন্য ৯০০ আসনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন আসনসংখ্যার দ্বিগুণ যাত্রী ট্রেনটি দিয়ে যাতায়াত করেন।
২০ জানুয়ারি চট্টগ্রাম রেলস্টেশন থেকে বিকেল সোয়া ৫টায় চাঁদপুরের উদ্দেশে ছাড়ে। প্রথম শ্রেণি ছাড়া বাকি ১৪টি যাত্রীতে ঠাসা ছিল। শোভন শ্রেণির দুজনের আসনে তিনজনকে বসতে দেখা গেছে। মাঝখানের গলিতে দাঁড়ানো যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড় ছিল। ভিড়ের কারণে একটি বগি থেকে অন্য বগিতে যেতে অনেক কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছিল।
চট্টগ্রাম সরকারি কলেজের স্নাতক (সম্মান) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রকিবুল ইসলামের বাড়ি বরিশালের মুলাদী উপজেলায়। রকিব জানান, ১৬৫ টাকায় তিনি শোভন শ্রেণির টিকিট কিনেছেন। কোচের মধ্যে দাঁড়ানো যাত্রীরা মাঝেমধ্যে তাঁর গায়ের ওপর এসে পড়ে। বিরক্তি প্রকাশ করে রকিব বলেন, আন্তনগর ট্রেনে এত যাত্রীকে দাঁড়ানো টিকিট দেওয়া ঠিক হয়নি।
সন্ধ্যা সাতটায় ট্রেনটি ফেনী স্টেশনে পৌঁছানোর পর শ খানেক যাত্রীকে নামতে দেখা গেল। তখন যাত্রীতে ঠাসা বগিগুলো কিছুটা ফাঁকা হলো। কিন্তু পুনরায় ফেনী থেকে যাত্রী ওঠায় আবার একই অবস্থা দেখা গেল।
৭টা ৫০ মিনিটে ট্রেনটি লাকসাম স্টেশনে এসে পৌঁছায়। স্টেশনে কথা হয় টিটিই (ট্রেনের টিকিট পরীক্ষক) মো. আছাদুজ্জামানের সঙ্গে। তিনি জানান, মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেনে গত শুক্রবার অন্তত ১ হাজার ৫০০ যাত্রী উঠেছিলেন। তিনি বলেন, প্রতিদিনই এভাবে ঠাসাঠাসি করে যাত্রীরা ট্রেনে যাতায়াত করেন।
চাঁদপুর থেকে প্রতি সপ্তাহে তিন–চারবার চট্টগ্রামে যাতায়াত করেন ব্যবসায়ী নজরুল ইসলাম। তিনি বলেন, চাঁদপুর থেকে চট্টগ্রাম যাতায়াতের জন্য সহজ মাধ্যম মেঘনা এক্সপ্রেস ট্রেন। মানুষ ভোরবেলায় চাঁদপুর থেকে রওনা হয়ে চট্টগ্রাম গিয়ে দিনের কাজ শেষ করে ফিরতি ট্রেনে চাঁদপুরে ফিরে আসেন। যাত্রীদের সুবিধার জন্য রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ আরও কয়েকটি বগি সংযোজন করলে যাত্রীদের ভোগান্তি কমবে। পাশাপাশি সরকারের আয়ও বাড়বে।
রাত সাড়ে ৯টায় ট্রেনটি হাজীগঞ্জ স্টেশনে পৌঁছায়। হাজীগঞ্জ রেলস্টেশনের মাস্টার আবুল কাশেম বলেন, তাঁর এখানে বিক্রির জন্য ৬০টি টিকিট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রতিদিন হাজীগঞ্জ থেকে কমপক্ষে ১০০ যাত্রী যাতায়াত করেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মো. জাহাঙ্গীর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ট্রেনটি দিয়ে প্রতিদিন অতিরিক্ত যাত্রী চলাচল করে। যাত্রীদের সুবিধার জন্য রেলওয়ে থেকে আরও একটি বিকল্প ট্রেন চালু করার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে সাময়িকভাবে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করার জন্য নতুন বগি সংযোজনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।