গণিতে আগ্রহ বাড়াবে এই উৎসব

ঢাকা আঞ্চলিক গণিত উৎসবের উদ্বোধনে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের সময় লাইনে দাঁড়িয়ে সম্মান জানায় বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরাছবি: প্রথম আলো

অষ্টম শ্রেণির ফারহাত রাইয়ান সিদ্দিকী আগেও গণিত উৎসবে অংশ নিয়েছিল। এবারের উৎসবে কি নিজের আগ্রহে এসেছে, নাকি পরিবারের উৎসাহে? এমন প্রশ্নে ফারহাতের ভাষ্য, ‘দুটোই’। আবার নরসিংদীর ইফতেখার আহমেদের স্কুলের অনেকেই অংশ নিচ্ছে। এ সুযোগে সেও নিজেকে যাচাই করতে ঢাকায় পরীক্ষা দিতে চলে এসেছে মা-বাবাকে নিয়ে।

শুধু ফারহাত ও ইফতেখার নয়, তাদের মতো প্রায় ছয় হাজার শিক্ষার্থী এসেছিল ঢাকা আঞ্চলিক গণিত উৎসবে। মাঘের কুয়াশা উপেক্ষা করে ঢাকা মহানগর ছাড়াও আজ শুক্রবার সকাল সকাল এসব শিক্ষার্থী এসেছিল মুন্সিগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী জেলার বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে। তাদের সঙ্গে ছিলেন কয়েক হাজার অভিভাবক ও শিক্ষক। সকাল সাড়ে আটটায় শুরু হওয়া এ অনুষ্ঠান চলে বিকেল চারটা পর্যন্ত। চার স্তরের শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিন ধাপে হয় পরীক্ষা।

ঢাকা আঞ্চলিক গণিত উৎসব হয় রাজধানীর মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটে। যথারীতি জাতীয় সংগীতের সঙ্গে জাতীয় পতাকা, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের পতাকা ও আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে উৎসবের সূচনা হয়।

জাতীয় সংগীত গাইছে শিক্ষার্থীরা
ছবি: প্রথম আলো

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটের প্রধান শিক্ষক জিনাত ফারহানা এ আয়োজনের জন্য কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, মেধা বিকাশের জন্য এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম। সন্তানদের মেধা বিকাশ ও জ্ঞানচর্চায় সহায়তা করে গণিতের এমন উৎসব। এমন আয়োজনে গণিতের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়বে।

বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সহসভাপতি ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) গণিতের অধ্যাপক আবদুল হাকিম খান বলেন, গণিত বিজ্ঞানের একটি ভাষা। এই বার্তা শিশুদের কাছে পৌঁছাতে হবে। এ উৎসব করে কী লাভ, তা জানাতে হবে।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও প্রথম আলোর ডিজিটাল ট্রান্সফরমেশন ও যুব কার্যক্রমের প্রধান সমন্বয়ক মুনির হাসান বলেন, ‘প্রথম আলো থেকে আমরা সারা বছর ধরে শিক্ষার্থীদের নিয়ে নানা আয়োজন করে থাকি। গণিতের পাশাপাশি বিজ্ঞান, বিতর্ক, স্বাস্থ্য অলিম্পিয়াডের আয়োজন করে থাকি। গণিত অলিম্পিয়াড থেকে বাংলাদেশ স্বর্ণপদক এনেছে। এআই (কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা), রোবোটিকসের জন্য গণিত লাগবে। এই ধরনের আয়োজন থেকে আমরা চাই বাংলাদেশের জয়, যা আনবে আমাদের তরুণেরা।’

বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অতিথিরা
ছবি: প্রথম আলো

মাঠে কথা হয় অভিভাবক দম্পতি অচিন্ত কুমার সাহা ও সীমা রায়ের সঙ্গে। তাঁদের মেয়ে পঞ্চম শ্রেণির আয়ুশী তখন পরীক্ষার হলে। সীমা রায় বলেন, তাঁরা ছোট থেকেই মেয়েকে বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় পাঠিয়ে আসছেন। তবে এখন নানা আয়োজনে মেয়ে নিজ থেকেই অংশ নিতে চাচ্ছে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির কোষাধ্যক্ষ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক বি এম মইনুল হোসেন, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটির সদস্য ও বুয়েটের কম্পিউটার বিজ্ঞান ও প্রকৌশল বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক রিজওয়ানা রিয়াজ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

কেন্দ্র পরিদর্শন করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বি এম মইনুল হোসেন
ছবি: প্রথম আলো

আয়োজকেরা জানান, ঢাকা আঞ্চলিক পর্বের বিজয়ীদের ফলাফল আগামী দুই দিনের মধ্যে গণিত অলিম্পিয়াডের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হবে। এ পর্বের বিজয়ীদের নিয়ে ২৮ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) বেলা তিনটায় মিরপুর গার্লস আইডিয়াল ল্যাবরেটরি ইনস্টিটিউটে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে।

উল্লেখ্য, চলতি বছর জুলাইয়ে অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠেয় ৬৬তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিতে বাংলাদেশ দল নির্বাচন করা হবে। এ লক্ষ্যে সারা দেশ থেকে অনলাইনে প্রায় ৭৬ হাজার শিক্ষার্থী নিবন্ধন করেছে।

নিবন্ধিত শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রথমে অনলাইন বাছাই অলিম্পিয়াড অনুষ্ঠিত হয় এবং বাছাই অলিম্পিয়াডের বিজয়ীদের নিয়ে এখন ১৫টি শহরে আঞ্চলিক গণিত উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঢাকা আঞ্চলিক উৎসব অনুষ্ঠিত হলো। এখনো তিনটি আঞ্চলিক উৎসব বাকি রয়েছে। আগামীকাল শনিবার সিলেটে ও আগামী ৩১ জানুয়ারি ময়মনসিংহ ও ফেনী অঞ্চলের উৎসব হবে।

পরীক্ষাকেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষারত অভিভাবকেরা
ছবি: প্রথম আলো

এই ১৫ আঞ্চলিক উৎসবের বিজয়ী শিক্ষার্থীদের নিয়ে আগামী ৭-৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর সেন্ট যোসেফ হায়ার সেকেন্ডারি স্কুলে জাতীয় গণিত উৎসব ২০২৫ অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি আঞ্চলিক উৎসব থেকে প্রাথমিক, নিম্নমাধ্যমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক—এই চার ক্যাটাগরিতে শিক্ষার্থীদের বাছাই করা হচ্ছে।

‘গণিত শেখ, স্বপ্ন দেখ’ স্লোগানে বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াড কমিটি এ উৎসবের আয়োজন করে আসছে। এতে পৃষ্ঠপোষকতা করছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক এবং ব্যবস্থাপনা করছে প্রথম আলো। এই আয়োজনে প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবায় ছিল ইউনিভার্সেল মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।