ড্যাপ বাস্তবায়ন স্থগিত করে সংস্কার দাবি স্থপতি ইনস্টিটিউটের
রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা বা ড্যাপ (২০২২-৩৫) বাস্তবায়ন স্থগিত করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউট। ড্যাপ প্রণয়নে আইনি ব্যত্যয়, প্রণয়নের অস্বচ্ছতা, বৈষম্যমূলক নীতি, জলাশয়-বন্যাপ্রবাহ অঞ্চল-কৃষিজমি ধ্বংসের সুযোগ ও নকশা অনুমোদনে দুর্নীতির সুযোগ বৃদ্ধির অভিযোগ এনেছে তারা। অংশীজনদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে ড্যাপের সংস্কার করতে বলেছে সংগঠনটি।
‘অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি বাংলাদেশ স্থপতি ইনস্টিটিউটের প্রত্যাশা ও জনস্বার্থ’ শীর্ষক এক আয়োজনে এমন দাবি জানায় স্থপতি ইনস্টিটিউট। আজ সোমবার সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে এ আয়োজন করে তারা।
অনুষ্ঠানে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সহসভাপতি অধ্যাপক মুহাম্মাদ আলী নকী। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, এক বছর ধরে ড্যাব বাস্তবায়নের কাজ চলমান। কিন্তু ড্যাপে বিদ্যমান বৈষম্য ও ক্ষেত্রবিশেষে অস্পষ্টতার কারণে নতুন ভবনের নকশার অনুমোদনের প্রক্রিয়া চলার সময়ে রাজউকের অসাধু চক্রের দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। বেড়েছে সময়ক্ষেপণ, বিভ্রান্তি ও দুর্নীতি এবং সর্বোপরি ভূমির মালিক তথা জনসাধারণের অযাচিত হয়রানি। এমন পরিপ্রেক্ষিতে এই ড্যাব বাস্তবায়ন স্থগিত করে এর আইনি ও অন্যান্য অসংগতি দূর করার জন্য সংশ্লিষ্ট অংশীজনদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতে অবিলম্বে সংস্কারের প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে।
ড্যাপ স্থগিত ও সংস্কারের বিষয়টি রাজউককে জানিয়েছে স্থপতি ইনস্টিটিউট। রাজউক জানিয়েছে বিষয়টি তারা উপদেষ্টার কাছে নিয়ে যাবে।
স্থপতি ইনস্টিটিউটের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ড্যাপ প্রণয়নের আগে ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান ২০১৬ সালে প্রণয়ন করা হলেও তা গেজেটভুক্ত না করে আইনি ব্যত্যয় ঘটিয়ে দীর্ঘ সময়ক্ষেপণের পর ২০২২ সালে ড্যাপ গেজেটভুক্ত করা হয়। কাজেই এই ড্যাপ বেআইনি প্রক্রিয়ায় প্রণীত হয়েছে।
কী প্রক্রিয়ায় বা কিসের ওপর ভিত্তি করে ড্যাপে নগরীর উন্নয়ন প্রাবল্য বা তীব্রতা (Development Intensity) ও জনঘনত্ব নির্ধারণ করা হয়েছে, তা জানতে চেয়েছিল স্থপতি ইনস্টিটিউট। তারা বলেছে, এই পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ব্যবহৃত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ, উপাত্ত ও ওয়ার্কিং পেপারগুলো জনসাধারণ ও অংশীজনদের কাছে উন্মুক্ত করার জন্য বহুবার আবেদন করে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তারা মনে করছে যে এই পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ।
ড্যাপে বৈষম্যমূলক নীতি রয়েছে বলেও অভিযোগ স্থপতি ইনস্টিটিউটের। সংগঠনটি লিখিত বক্তব্যে বলেছে, এই পরিকল্পনায় শহরের পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত এলাকার জন্য পৃথকভাবে ভবন নির্মাণের সীমা নির্ধারণের সূচক (এফএআর) নির্ধারণ করা হয়েছে, যা স্পষ্টত বৈষম্যমূলক। নির্দিষ্ট কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠী ও ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষায় ও অন্যায্য সুবিধা দেওয়ার অভিপ্রায়ে নগরের এলাকাভিত্তিক ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) প্রণয়নে বৈষম্য ও অনিয়ম করা হয়েছে। স্থপতি ইনস্টিটিউট বলেছে, ড্যাপে বন্যাপ্রবাহ অঞ্চলের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে এবং কৃষিজমিতে অবাধ নগরায়ণের সুযোগ দিয়ে মারাত্মক পরিবেশ বিপর্যয় সৃষ্টি করা হয়েছে।
স্থপতি ইনস্টিটিউটের লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, ড্যাপ প্রণয়নের আগে ২০১৬ সালে ঢাকা স্ট্রাকচার প্ল্যান প্রণয়ন করা হলেও তা গেজেটভুক্ত করা হয়নি। পরে ২০২২ সালে ড্যাপ গেজেটভুক্ত করা হয়। কাজেই এই ড্যাপ বেআইনি প্রক্রিয়ায় প্রণীত হয়েছে।
এমনকি বহুবার আবেদন করার পরও এই পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ব্যবহৃত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ উপকরণ, উপাত্ত ও ওয়ার্কিং পেপার জনসাধারণ ও অংশীজনদের কাছে উন্মুক্ত করা হয়নি বলেও দাবি করেছে স্থপতি ইনস্টিটিউট। এ কারণে তারা মনে করছে এই পরিকল্পনা প্রণয়নের প্রক্রিয়া অস্বচ্ছ।
ড্যাপে বৈষম্যমূলক নীতি থাকার অভিযোগ করেছে তারা। তারা বলেছে, এই পরিকল্পনায় শহরের পরিকল্পিত ও অপরিকল্পিত এলাকার জন্য পৃথকভাবে ভবন নির্মাণের সীমা নির্ধারণের সূচক (এফএআর) নির্ধারণ করা হয়েছে, যা স্পষ্টত বৈষম্যমূলক। নির্দিষ্ট কিছু সুবিধাভোগী গোষ্ঠী ও ব্যক্তির স্বার্থ রক্ষায় ও অন্যায্য সুবিধা দেওয়ার অভিপ্রায়ে নগরের এলাকাভিত্তিক ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) প্রণয়নে বৈষম্য ও অনিয়ম করা হয়েছে।
ড্যাপে বন্যাপ্রবাহ অঞ্চলের সংজ্ঞা পরিবর্তন করে এবং কৃষিজমিতে অবাধ নগরায়ণের সুযোগ দিয়ে পরিবেশের মারাত্মক বিপর্যয় ডেকে আনছে বলেও মনে করে স্থপতি ইনস্টিটিউট।
অনুষ্ঠানে স্থপতি ইনস্টিটিউটের সভাপতি খন্দকার সাব্বির আহমেদ বলেন, ঢাকা শহরের ৬৬ শতাংশ এলাকা ইনফরমাল বা রাজউকের পরিকল্পনার বাইরে। যার কারণে যে যেভাবে পেরেছে বাড়ি করেছে, রাস্তা করেছে। এই ৬৬ শতাংশের জন্য ড্যাপে সুনির্দিষ্ট কোনো নির্দেশনা নেই। নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত না করে এসব এলাকাকে দমিয়ে রাখা হয়েছে। তিনি রাজউকের পুনর্গঠনও দাবি করেছেন।
এ আয়োজনে বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন স্থপতি ইনস্টিটিউটের সম্পাদক (নগরায়ণ ও পরিবেশ) সুজাল ইসলাম খান, সংগঠনটির ড্যাপ কমিটির সমন্বয়ক আমিনুল ইসলাম, আহ্বায়ক সাবরিনা আফতাব, সাধারণ সম্পাদক নবী নেওয়াজ খান প্রমুখ।