১১ মাসে ৪৮৬ নারী-শিশু নৃশংস হত্যার শিকার: মহিলা পরিষদ

জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সংবাদ সম্মেলনছবি: মহিলা পরিষদের পাঠানো

চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ১১ মাসে ২ হাজার ৩৬২ নারী ও কন্যাশিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছে। এর মধ্যে কন্যাশিশুর সংখ্যা ১ হাজার ৩৬। এ সময়ে বিভিন্ন কারণে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে ৪৮৬ নারী ও শিশুকে।

সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্যের বরাত দিয়ে আজ মঙ্গলবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানায়। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

১৬টি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হত্যা, ধর্ষণ, যৌতুকের জন্য নির্যাতন, পারিবারিক নির্যাতন, উত্ত্যক্ত করা, অপহরণ, বাল্যবিবাহসহ এ ধরনের খবরের ভিত্তিতে এই প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতা বন্ধে সমাজে সচেতনতা সৃষ্টি ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান বক্তারা।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, সংবাদপত্রে প্রকাশিত নারীর প্রতি সহিংসতার ঘটনাগুলো সামগ্রিক ঘটনার আংশিক মাত্র। বিচারব্যবস্থার দীর্ঘসূত্রতার কারণে নারীর প্রতি সহিংসতার মামলাগুলোর রায় হতে অনেক সময় লেগে যায়। অনেক সময় এ সময়ের মধ্যে অপরাধীরা বিদেশে পালিয়ে যান। ফলে সহিংসতার শিকার নারী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন। এ বিষয়গুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরার পাশাপাশি নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে রাষ্ট্রের দায়বদ্ধতা নিশ্চিতেরও আহ্বান জানান তিনি।

পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ধর্ষণের ঘটনার বিচার কোনো ধরনের সালিসের মাধ্যমে মীমাংসা হওয়া সম্পূর্ণ বেআইনি। প্রচলিত আইনের মাধ্যমে ধর্ষণের ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানান তিনি।

যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাসুদা রেহানা বেগম প্রকৃত অপরাধীকে চিহ্নিত করে শাস্তি নিশ্চিত করতে সাক্ষী সুরক্ষা আইন সংস্কার হওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় লিগ্যাল এইড সম্পাদক রেখা সাহা। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত ১১ মাসে নারী ও কন্যার বিরুদ্ধে নানা ধরনের সহিংসতার মধ্যে উদ্বেগজনকভাবে বেড়েছে হত্যার ঘটনা। দীর্ঘ সময় ধরে নারী আন্দোলন অব্যাহত থাকার পরও নারীর প্রতি সহিংসতার এই পরিসংখ্যান অত্যন্ত উদ্বেগজনক। নারীর প্রতি সহিংসতা বন্ধে অনেক আইন ও নীতিমালা হওয়ার পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি সব পর্যায়ে বহুমুখী কর্মসূচি রয়েছে। এরপরও বাস্তবিক অর্থে সামাজিক পরিস্থিতির খুব একটা পরিবর্তন হয়নি।

লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, এই ক্ষেত্রে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রের সব পর্যায়ের মানুষের সম্মিলিত চেষ্টা নিতে হবে। নারীর প্রতি ইতিবাচক, সংবেদনশীল ও মানবিক সংস্কৃতি গড়ার আন্দোলনকে সমন্বিতভাবে এগিয়ে নিতে হবে। তরুণ প্রজন্মকে নারী আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত হতে হবে।

অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন লিগ্যাল অ্যাডভোকেসি ও লবি পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) দীপ্তি শিকদার।