শীতের রাতে মায়াবী ক্যাম্পিং

মানুষের চলাফেরার পথে ক্যাম্পিং করা উচিত নয়। ক্যাম্পিংয়ের জায়গাটি সমতল কি না দেখে নিতে হবে।

শীতকাল ক্যাম্পিংয়ের জন্য আদর্শ। খোলা আকাশের নিচে উন্মুক্ত পরিবেশে তাঁবু গেড়ে রাত্রিযাপনই ক্যাম্পিং। রাত যত গভীর হয়, নানা রকম জন্তু-জানোয়ার, পাখি, পোকার শব্দে মুখর হয়ে ওঠে চারদিক। যান্ত্রিকতার বাইরে নৈসর্গিক পরিবেশে অনাবিল একটি রাত কাটানোর আনন্দ অপার। নদীর পাড়, চর, হ্রদ ও ঝরনার কাছে, সাগরপাড়ে, ঘন বন—এসব স্থানই ক্যাম্পিংয়ের জন্য আদর্শ।
সাগরের লোনা হাওয়া গায়ে মেখে ক্যাম্পিং করতে চাইলে যেতে হবে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বাঁশবাড়িয়ায়।
ছবি: ক্যাম্প বাঁশবাড়িয়ার সৌজন্যে
গাজীপুর

বেজক্যাম্প অ্যাডভেঞ্চারস

নানা কসরতের সুযোগ আছে গাজীপুরের বেজক্যাম্পে
ছবি: বেজক্যাম্পের সৌজন্যে

কোথায় অবস্থিত: এটি গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সফিপুর বাজারের মাধবপুর এলাকায় অবস্থিত। জমির পরিমাণ প্রায় ২২ বিঘা। এটি আগে রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ছিল।

থাকার ব্যবস্থা ও খরচাপাতি: দুই ধরনের তাঁবু রয়েছে। একটি ডম টেন্ট বা গম্বুজ তাঁবু, অন্যটি গ্লাম্পিং টেন্ট। এর মধ্যে ডম টেন্টে দুজন থাকতে পারেন। আর গ্লাম্পিং টেন্টে থাকতে পারেন ১৪ জন। একটি প্যাকেজের (নাইট স্টে প্যাকেজ) মাধ্যমে টেন্টগুলোতে থাকার ব্যবস্থা করা হয়। প্যাকেজের সময় শুরু হয় সকাল নয়টা থেকে পরদিন সকাল নয়টা পর্যন্ত। রাতে থাকার বাইরেও দিনভর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে। জনপ্রতি পুরো প্যাকেজের খরচ পড়বে ৫ হাজার ৪৯৫ টাকা।

সঙ্গে কী আনতে হবে: তাঁবু বা এ–সংক্রান্ত কোনো সরঞ্জাম আনতে হবে না। ওই প্যাকেজের আওতায়ই সব দেওয়া হবে।

পরিবার নিয়ে থাকার ব্যবস্থা: কেউ চাইলে পরিবার বা আপনজন নিয়ে তাঁবুর ভেতরেই থাকতে পারেন। এর বাইরে সাত থেকে আটটি শীতাতপনিয়ন্ত্রিত কক্ষ রয়েছে। কেউ চাইলে পরিবারের জন্য সেসব কক্ষ ভাড়া নিতে পারেন।

বেজক্যাম্পে আছে ক্যাম্পফায়ারের আয়োজন
ছবি: সংগৃহীত

আর কোনো কর্মকাণ্ড: রাত্রিযাপন ছাড়া ‘ডে লং’ প্যাকেজ আছে। ওই প্যাকেজের আওতায় দলীয় কার্যক্রম, ওয়ার্মআপ, জিপলাইন, আরচারি, ট্রি-টপ/গ্রাউন্ডসহ বিভিন্ন অ্যাকটিভিটি রয়েছে। এ প্যাকেজের খরচ পড়বে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। সময় সকাল সাতটা থেকে সন্ধ্যা সাতটা পর্যন্ত।

খাবারের ব্যবস্থা: দুই প্যাকেজের মধ্যেই খাবার অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এর মধ্যে নাইট স্টে প্যাকেজে পাঁচবার খাবার দেওয়া হবে (প্রথম দিন সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার, সন্ধ্যার নাশতা, রাতের খাবার এবং পরের দিন আবার সকালের নাশতা। আর ডে লং প্যাকেজে তিনবার খাবার দেওয়া হবে)।

নিরাপত্তা কেমন: পুরো বেজক্যাম্পের চারদিকে নিরাপত্তাবেষ্টনী রয়েছে। রয়েছে ২৪ ঘণ্টা নিরাপত্তা প্রহরীর ব্যবস্থা।

যোগাযোগ: ০১৯৫২–৭৭৭৯৯৯

নারায়ণগঞ্জ

রিবেরেনো অ্যাডভেঞ্চার

নদীতীর ঘেঁষে ক্যাম্পিংয়ের স্বাদ পেতে যেতে হবে নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার চর ইসলামপুরে রিবেরেনো অ্যাডভেঞ্চারে
ছবি: ফেসবুক পেজ থেকে নেওয়া

কোথায় অবস্থিত: নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলার মুসাপুর ইউনিয়নের চর ইসলামপুর এলাকায় অবস্থিত রিবেরেনো অ্যাডভেঞ্চার। পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদ ও নদের তীর ঘেঁষে ক্যাম্প সাইটটির অবস্থান।

থাকার ব্যবস্থা ও খরচাপাতি: ভ্রমণপিপাসুদের জন্য ক্যাম্প সাইটটিতে রাতে তাঁবুতে থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। সে ক্ষেত্রে দিনের জন্য জনপ্রতি ১৫০ টাকায় প্রবেশ, ২৮০ টাকায় দুপুরের খাবার এবং ৩০০ টাকা ঘণ্টায় কায়াকিংয়ের ব্যবস্থা আছে।

রাতের প্যাকেজে প্রবেশ, তাঁবু ভাড়া, কম্বল, ৩০ মিনিট কায়াকিংয়ের জন্য জনপ্রতি প্যাকেজ ৩৫০ টাকা। এ ছাড়া রাতের খাবার নিতে চাইলে জনপ্রতি ৩০০ টাকা, বারবিকিউ নিলে ২৫০ টাকা এবং সকালের নাশতার জন্য ১৮০ টাকা গুনতে হবে।

সঙ্গে কী আনতে হবে: চাইলে কেউ সঙ্গে করে নিজের তাঁবু নিয়ে যেতে পারবেন। আবার ক্যাম্পসাইট থেকেও তাঁবু নেওয়া যাবে। সব ক্ষেত্রেই ৩৫০ টাকার রাতের প্যাকেজ নিতে হবে।

পরিবার নিয়ে থাকার ব্যবস্থা: দর্শনার্থীরা একাকী, বন্ধু, কিংবা পরিবার নিয়ে এ জায়গায় ভ্রমণ করতে পারবেন। সে ক্ষেত্রে স্বামী–স্ত্রী হলে তাঁদের বৈবাহিক প্রমাণপত্র দেখাতে হবে।

আর কোনো কর্মকাণ্ড: রাত্রিযাপন ছাড়াও রাতে বারবিকিউ, ব্যাডমিন্টন ও ক্যারম খেলার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া রাতে নিজ খরচে ক্যাম্পফায়ার করে শীত তাড়ানো যাবে। সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত নদীতে কায়াকিং করা যাবে।

খাবারদাবার ও দরদাম: সকালের নাশতা, দুপুরের খাবার ও রাতের খাবারের ব্যবস্থা রয়েছে। খাবারে ভাত, মাছ, সবজি, ভর্তা, মুরগির মতো দেশীয় খাবার পরিবেশন করা হয়। সকালের নাশতা ১৮০ টাকা, দুপুরের খাবার ২৮০ এবং রাতের খাবারের দাম পড়বে ৩০০ টাকা। এ ছাড়া জনপ্রতি ২৫০ টাকায় রাতে বারবিকিউ পাওয়া যাবে।

নিরাপত্তাব্যবস্থা: নিরাপত্তার জন্য ২৪ ঘণ্টা নিজস্ব নিরাপত্তাকর্মী রয়েছে।

যোগাযোগ: ০১৮৮৩–৯০৫৫৭৪, ০১৮১৩–০২৪৬০৮, ০১৬০৬–৭০৫৯২১

ফেসবুক

পরামর্শ:

নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে

ক্যাম্পিং করতে চাইলে অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে জায়গাটা ক্যাম্পিংয়ের জন্য উপযুক্ত কি না। কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। যেমন বৃষ্টি হলে এ জায়গা দিয়ে পানি প্রবাহিত হবে কি না, লোকজনের আসা–যাওয়ার পথেও ক্যাম্পিং করা উচিত নয়, যেখানে ক্যাম্পিং করা হবে সে জায়গাটা সমান কি না, উঁচু–নিচু হলে তাঁবুতে ঘুমাতে সমস্যা হবে এবং আশপাশে বিশুদ্ধ পানির উৎস আছে কি না। সঙ্গে নিতে হবে তাঁবু, গ্রাউন্ড শিট, যা তাঁবুর নিচে মাটিতে বিছানো হবে, স্লিপিং ব্যাগ, এয়ার পিলো বা ফুঁ বালিশ, টেন্ট লাইট বা হেড লাইট। প্রয়োজনে কুকিং স্টোভ, হাঁড়ি–পাতিল, চায়ের মগ, পানির বোতল নেওয়া যেতে পারে। মশা ও পোকামাকড় প্রতিরোধক সঙ্গে রাখা ভালো। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে চাই পঞ্চো বা রেইনকোট। যেকোনো ক্যাম্পিংয়ে শুরুতেই নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে কথা বলে নেওয়া ভালো। উচ্চশব্দে গানবাজনা থেকে বিরত থাকা এবং প্লাস্টিকের আবর্জনা ফেলা উচিত নয়।
জুয়েল রানা, পর্যটক ও প্রতিষ্ঠাতা, আউটডোরস বিডি
চট্টগ্রাম

ক্যাম্প বাঁশবাড়িয়া

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে অবস্থিত ক্যাম্প বাঁশবাড়িয়া
ছবি: সংগৃহীত

কোথায় অবস্থিত: নীল ফেনিল জলরাশি। ছোট ছোট ঢেউ। এক পাশে ঝাউবন। এর সঙ্গে সূর্য ডোবার অপার সৌন্দর্য। এমন পরিবেশে রাত্রিযাপনের সুবিধা রয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া সমুদ্রসৈকতে। মাত্র ৮০০ টাকায় সাগরপাড়ে তাঁবুতে কাটানো যাবে রাত।

সঙ্গে কী আনা যাবে: একা কিংবা পরিবার–পরিজন নিয়েও এখানে আসা যাবে। তাঁবু এবং ক্যাম্পিংয়ের সব উপকরণ সাইটেই আছে। ক্যাম্পিংয়ের সময় বিকেল চারটা থেকে পরদিন সকাল আটটা পর্যন্ত। ৭৯৯ টাকার প্যাকেজে তাঁবু, সন্ধ্যার নাশতা, রাতে বারবিকিউ ও সকালে খিচুড়ি পেয়ে যাবেন। নিরাপত্তার জন্য স্থানীয় গার্ড ও ক্যাম্প সাইটের সদস্যরা সেখানে থাকেন।

যোগাযোগ: ০১৬১০–১৬৪২৭৮

ফেসবুক

হাজারিখিল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য

হাজারিখিল বন্য প্রাণী অভয়ারণ্য
ছবি: সংগৃহীত

কোথায় অবস্থিত: চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলার রামগড়-সীতাকুণ্ড বনাঞ্চলে প্রায় ১১৮ হেক্টর পাহাড়ি বনভূমিকে ২০১০ সালের ৬ এপ্রিল বন্য প্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে ঘোষণা দেয় সরকার। আর এই বন্য প্রাণী ও দুই শ বছরের পুরোনো গাছের মধ্যে বসে ক্যাম্পিং করার অনুভূতি যেকোনো পর্যটকই লুফে নেবেন। তা–ও মাত্র এক হাজার টাকায়।

খরচাপাতি ও বুকিং: এখানে দুজনের প্রতিটি তাঁবুর খরচ ৪০০ টাকা। সামনের হোটেলে ভাত, আলুভর্তা, মুরগির মাংস—প্যাকেজের দাম ২০০ টাকা। নিরাপত্তার জন্য প্রতি গ্রুপে একজন গাইড থাকে, ফি ৫০০ টাকা। সঙ্গে চা–বাগান, নানা প্রজাতির প্রাণী ও পাখি দেখা যাবে বিনা মূল্যে। ক্যাম্পিংয়ের নির্দিষ্ট কোনো সময় নেই। তবে অন্তত দুই দিন আগে বুকিং দিতে হবে।

যোগাযোগ: ০১৮১৬–০৬১৬০০

ফেসবুক

সিলেট

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান

কোথায় অবস্থিত: জায়গাটি টিলা ও জঙ্গলের মধ্যে এবং চা–বাগানসংলগ্ন, সিলেট শহরের কাছেই অবস্থিত।

সিলেট শহরের অদূরে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান
ছবি: প্রথম আলো

থাকার ব্যবস্থা ও দরদাম: তাঁবুতে দুজনের খরচ ৫০০ টাকা। তিনজনের খরচ পড়বে ৮০০ টাকা। এ ছাড়া খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে প্রবেশ টিকিট কাটতে হবে দর্শনার্থীদের। এ জন্য প্রাপ্তবয়স্কদের ২৩ টাকা এবং শিক্ষার্থীদের ১১ টাকা ৫০ পয়সা দিতে হবে। থাকার জন্য কোনো সরঞ্জাম সঙ্গে নিতে হবে। ক্যাম্প সাইটেই ভাড়া পাওয়া যাবে।

পরিবার নিয়ে থাকার ব্যবস্থা: তিনজনের তাঁবু নিয়ে অথবা আলাদা দুজন করে পৃথক তাঁবু নিয়ে এমনকি পরিবার নিয়ে থাকার ব্যবস্থা আছে। তবে একসঙ্গে পাঁচ-ছয়জন থাকার মতো তাঁবু নেই।

আর কোন কর্মকাণ্ড: রাত্রিযাপন ছাড়া খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে হাইকিং, জিপলাইন করার ব্যবস্থা রয়েছে। এ ছাড়া আরও কয়েকটি অ্যাকটিভিটি প্রস্তুত করা হচ্ছে। যার প্রতিটির জন্য ১০০ টাকা করে দিতে হবে পর্যটকদের। এর বাইরে জাতীয় উদ্যানে ঘুরে বেড়ানোর সুযোগ তো আছেই। হাইকিং অথবা জঙ্গলে ঘোরার সময় গাইড নেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। একজন গাইডকে দুই ঘণ্টার জন্য দিতে হবে ৪০০ টাকা এবং এক ঘণ্টার জন্য দিতে হবে ৩০০ টাকা।

খাবারদাবার: জাতীয় উদ্যানে খাবারদাবারের ব্যবস্থা আছে। চাইলে সঙ্গে খাবার নিয়েও যেতে পারেন। অথবা সেখানে রান্না করা খাবারের ব্যবস্থা আছে। রাতের খাবার খাওয়া যাবে জনপ্রতি ২৫০ টাকায়। রাতে বারবিকিউ এবং সকালে খিচুড়ির ব্যবস্থাও আছে।

নিরাপত্তাব্যবস্থা: খাদিমনগর জাতীয় উদ্যানে বন বিভাগের নিরাপত্তাব্যবস্থা রয়েছে। উদ্যানে বন বিভাগের কর্মীরাও অবস্থান করেন। এ ছাড়া আশপাশে জনবসতিও রয়েছে।

যোগাযোগ: ০১৭৩৭–৮৫৩৭১৩

ফেসবুক: