সৌদি আরবে ভর করে আবার বাড়ছে বিদেশে কর্মসংস্থান

  • এ বছর বিদেশে যাওয়া কর্মীর ৬০ শতাংশ গেছে সৌদি আরবে।

  • গত দুই মাসে বিদেশে কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশের বেশি সৌদিতে।

প্রবাসী শ্রমিকফাইল ছবি

সৌদি আরবে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ২০৩৪ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক হয়েছে সৌদি আরব। দেশটিতে ফুটবল অবকাঠামো নির্মাণের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। এতে কর্মীর চাহিদা আসছে নিয়মিত। এ বছর বিদেশে যাওয়া কর্মীর ৬০ শতাংশ গেছে দেশটিতে। গত দুই মাসে বিদেশে কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশের বেশি হয়েছে সৌদিতে।

সৌদি আরবে যেতে হলে একজন নিয়োগকর্তা বা কফিলের মাধ্যমে যেতে হয়। কোনো নির্দিষ্ট নিয়োগকর্তা ছাড়া দেশটিতে কর্মী যেতে পারবেন না। গিয়েও ওই নিয়োগকর্তার অধীন কাজ করতে হয়। এর ব্যতিক্রম হলে কর্মী অবৈধ হিসেবে গণ্য হবেন। কোনো কারণে চাকরি পরিবর্তন করতে চাইলে নিয়োগকর্তার অনুমতি নিয়ে সৌদি কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হয়।

বেসরকারি খাতে কর্মী পাঠানো রিক্রুটিং এজেন্সি মালিকদের সংগঠন বায়রার মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমবাজার সংকুচিত হয়ে আসছে। মূলত সৌদি আরবেই কর্মী যাচ্ছেন এখন। দেশটির অবকাঠামো নির্মাণে কর্মীর চাহিদা আসছে। এটি ধরে রাখতে দুই দেশের কারিগরি কমিটির সভা ডেকে বিদ্যমান সমস্যা নিয়ে আলোচনা করা উচিত।

নির্দিষ্ট শ্রমবাজারে নির্ভরতা সবচেয়ে বড় দুর্বলতা, যা দীর্ঘ সময়ে কাটিয়ে ওঠা যায়নি। তবে এখন আগের মতো সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ নেই।
তাসনিম সিদ্দিকী, প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার, রামরু

অভিবাসন খাতে বেসরকারি গবেষণাপ্রতিষ্ঠান রামরু বলছে, শ্রমবাজারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো একক দেশনির্ভরতা। একটা সময় কোনো এক দেশে বিপুল হারে কর্মী যেতে শুরু করে। এরপর নানা সমস্যা তৈরি হওয়ার পর ওই শ্রমবাজার কয়েক বছরের জন্য বন্ধ হয়ে যায়। আরেকটি দেশে কর্মী পাঠানো শুরু হয়। এভাবেই ঘুরেফিরে হাতে গোনা কয়েকটি দেশের শ্রমবাজারে সীমিত হয়ে আছে বিদেশে বাংলাদেশিদের কর্মসংস্থান।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানসচিব মো. রুহুল আমিন প্রথম আলোকে বলেন, বাজার সম্প্রসারণে নিয়মিত চেষ্টা চলছে। ব্রুনেই চালু করা হয়েছে। রাশিয়ায় কর্মী যাচ্ছেন। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু করতে শিগগিরই সভা হবে দুই দেশের। ইউরোপে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেশি, তাই দক্ষতা বাড়ানোয় জোর দেওয়া হয়েছে।

এ বছর বিদেশে যাওয়া কর্মীর ৬০ শতাংশ গেছে দেশটিতে। গত দুই মাসে বিদেশে কর্মসংস্থানের ৮০ শতাংশের বেশি হয়েছে সৌদিতে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অভিবাসন খাতে বৈষম্য দূর করতে সরকারের কয়েকটি নতুন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কর্মী পাঠানোর চাহিদাপত্রের সংশ্লিষ্ট দেশে থাকা দূতাবাসের সত্যায়ন বন্ধ করে রিক্রুটিং এজেন্সিকে এর জন্য দায়বদ্ধ করতে হবে। এতে বিদেশে গিয়ে কাজ না পাওয়ার ঝুঁকি থাকবে না। দূতাবাসের শ্রম উইং থেকে প্রবাসীদের সেবা নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সাময়িকভাবে শ্রম উইংয়ে কাজ করে বদলি হয়ে যান, তাই তাঁরা কর্মীদের যথাযথ সেবা দেন না। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীন আলাদা ক্যাডার তৈরি করা দরকার। দালালদের নিবন্ধনের আওতায় এনে বৈধতা দিতে হবে।

রামরুর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ার তাসনিম সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, নির্দিষ্ট শ্রমবাজারে নির্ভরতা সবচেয়ে বড় দুর্বলতা, যা দীর্ঘ সময়ে কাটিয়ে ওঠা যায়নি। তবে এখন আগের মতো সিন্ডিকেট তৈরির সুযোগ নেই। তাই চাইলে বর্তমান সরকার এটি বদলানোর চেষ্টা করতে পারে। এ ছাড়া কর্মী কম গেলেও তাঁর সবার চাকরি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য রিক্রুটিং এজেন্সিকে দায়বদ্ধ করতে হবে।

বাজার সম্প্রসারণে নিয়মিত চেষ্টা চলছে। ব্রুনেই চালু করা হয়েছে। রাশিয়ায় কর্মী যাচ্ছেন। মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার চালু করতে শিগগিরই সভা হবে দুই দেশের। ইউরোপে দক্ষ কর্মীর চাহিদা বেশি, তাই দক্ষতা বাড়ানোয় জোর দেওয়া হয়েছে।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানসচিব মো. রুহুল আমিন