কুইক রেন্টাল: মন্ত্রীর একক ক্ষমতা ও দায়মুক্তি-সংক্রান্ত বিধান অবৈধ
বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনের দুটি বিধান অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এই আইনের অধীনে করা কাজ নিয়ে কোনো আদালতে প্রশ্ন তোলা যাবে না এবং চুক্তি করার বিষয়ে মন্ত্রীর একক সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ওই বিধান দুটিতে উল্লেখ রয়েছে। আইনটি ‘কুইক রেন্টাল’ আইন নামে পরিচিত।
বিধান দুটি প্রশ্নে দেওয়া রুলের ওপর চূড়ান্ত শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজ বৃহস্পতিবার এ রায় দেন।
একই সঙ্গে জাতীয় ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে এবং জনগণের বৃহত্তর সুবিধা নিশ্চিতে সরকারি মালিকানাধীন পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর পুরোপুরি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এর আগে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) আইনটি ২০১০ সালের ১২ অক্টোবর প্রণয়ন করা হয়। আইনের ‘পরিকল্পনা বা প্রস্তাবের প্রচার’-সংক্রান্ত ৬(২) ধারা ও ‘আদালত ইত্যাদির এখতিয়ার রহিত করা’-সংক্রান্ত ৯ ধারার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী শাহদীন মালিক ও মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম আবেদনকারী হয়ে গত আগস্টে রিটটি করেন। রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ২ সেপ্টেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন।
সংবিধানের নির্দেশনার সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় ওই আইনের ৬(২) এবং ৯ ধারা কেন আইনগত কর্তৃত্ববহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, রুলে তা জানতে চাওয়া হয়েছে। এই রুলের ওপর ৭ নভেম্বর শুনানি শেষ হয়। সেদিন শুনানি নিয়ে আদালত ১৪ নভেম্বর রায়ের জন্য দিন রাখেন।
যে কারণে বিধান দুটি বাতিল
রায়ে আদালত বলেছেন, ‘বলতে দ্বিধা নেই যে আইনের ৬(২) ধারা সংবিধানের ম্যান্ডেটের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হওয়ায় বাতিল ঘোষণা করা হলো। দেশের মানুষ প্রকৃতভাবে সার্বভৌম। সংবিধান আইনের শাসনের ঘোষণা দিয়েছে। আইনের ৯ ধারা অনুসারে চুক্তির বিষয়ে কেউ দায়ী হলে বিচারিক জবাবদিহির ঊর্ধ্বে রাখা হয়েছে। অথচ সংবিধানের ১৪৫(২) অনুচ্ছেদে চুক্তি বাস্তবায়নে ক্ষেত্রে সরকারের নির্বাহী কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে কার্যধারা গ্রহণের অধিকার নিশ্চিত করা হয়েছে। ৯ ধারাটি সংবিধানের ১৪৫ অনুচ্ছেদের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ হওয়ায় সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। কাজেই ৯ ধারাটি বাতিলযোগ্য। ফলে সারবত্তা থাকায় রুল অ্যাবসলিউট (যথাযথ) ঘোষণা করা হলো। সংবিধানের ম্যান্ডেটের সঙ্গে অসামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়ায় আইনের ৬(২) ও ৯ ধারা বাতিল ঘোষণা করা হলো।’
মার্জনা, তবে কার্যক্রম পুনরায় দেখা যাবে
রায়ে আদালত বলেন, আইনের ৬(২) অধীনে ১৭ কুইক রেন্টাল প্রতিষ্ঠা হয়েছে। যেগুলো এখন পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করছে। আইনি জটিলতা এড়াতে এ ক্ষেত্রে ৬(২) ধারায় সংশ্লিষ্ট চুক্তির সব কার্যক্রম সাময়িকভাবে মার্জনা করা হলো। তবে চুক্তির ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট পক্ষের কার্যক্রম কিছু শর্তসাপেক্ষে পুনরায় দেখার সরকারের অধিকার থাকবে। এ ক্ষেত্রে অপরাধ সংঘটিত হলে সাময়িক এই মার্জনা প্রযোজ্য হবে না।
দেশে ১৩৭টি পাওয়ার প্ল্যান্ট রয়েছে উল্লেখ করে রায়ে আদালত বলেন, এর মধ্যে ৪০টি বিপিডিবির মালিকানাধীন। জাতীয় স্বার্থে, জনগণের বৃহত্তর সুবিধা নিশ্চিতে ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের স্বার্থে সরকারি মালিকানাধীন পাওয়ার প্ল্যান্টগুলোর পুরোপুরি কার্যক্রম পরিচালনার জন্য তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নিতে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেওয়া হলো।
আদালতে রিটের পক্ষে আইনজীবী শাহদীন মালিক শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন মো. তায়্যিব-উল-ইসলাম। রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মনজুর আলম শুনানিতে অংশ নেন।
বিধান দুটিতে যা রয়েছে
পরিকল্পনা বা প্রস্তাবের প্রচার-সংক্রান্ত আইনের ৬(২) ধারার ভাষ্য, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নিয়োজিত মন্ত্রীর সম্মতি গ্রহণক্রমে যেকোনো ক্রয়, বিনিয়োগ পরিকল্পনা বা প্রস্তাব ধারা ৫-এ বর্ণিত প্রক্রিয়াকরণ কমিটি সীমিতসংখ্যক অথবা একক কোনো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে যোগাযোগ ও দর-কষাকষির মাধ্যমে ওই কাজের জন্য মনোনীত করে ধারা ৭-এ বর্ণিত পদ্ধতি অনুসরণে অর্থনৈতিক বিষয় বা সরকারি ক্রয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে প্রেরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। আর ‘আদালত ইত্যাদির এখতিয়ার রহিত করা’-সংক্রান্ত ৯ ধারা অনুযায়ী, এই আইনের অধীন করা বা করা হয়েছে বলে বিবেচিত কোনো কাজ, গৃহীত কোনো ব্যবস্থা, প্রদত্ত কোনো আদেশ বা নির্দেশের বৈধতা সম্পর্কে কোনো আদালতের কাছে প্রশ্ন উত্থাপন করা যাবে না।