আন্দোলনের সহিংসতায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের গুজব দায়ী: আইসিটি প্রতিমন্ত্রী
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে যে সহিংসতা হচ্ছে, তার পেছনে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব ছড়ানোকে দায়ী করেছেন ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহ্মেদ পলক। তিনি বলেন, ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, এক্সের মতো প্ল্যাটফর্মগুলোর অফিস ও ডেটা সেন্টার যদি ঢাকায় থাকত, তাহলে যেকোনো ধরনের কনটেন্ট ও গুজবকে প্রতিহত করা বা ফ্ল্যাগ দিয়ে দেওয়া অথবা ব্লক করে দেওয়া সহজ হতো।
আজ বুধবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘সাইবার-সিকিউরিটি সিম্পোজিয়াম: বাংলাদেশ পাথ ফরওয়ার্ড’ বিষয়ে এক সেমিনারে অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, প্ল্যাটফর্মগুলো শুধু বাংলাদেশ থেকে তাদের ব্যবসায়িক স্বার্থটাই উদ্ধার করছে, কিন্তু দেশের মানুষের নিরাপত্তা ও ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি শ্রদ্ধাবোধ দেখাচ্ছে না। তিনি হুঁশিয়ার করে বলেন, তারা যদি বাংলাদেশের আইন, ধর্মীয় মূল্যবোধ ও সামাজিক শৃঙ্খলার দিকে নজর না দেয়, তাহলে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের শুরুটা হয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয়। গত সোমবার শিক্ষার্থীদের ওপর ছাত্রলীগের হামলা ও সংঘর্ষের পর গতকাল মঙ্গলবার বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে সারা দেশে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছেড়ে রাস্তায় নেমে এসে সড়ক-মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। গতকালও দেশের বিভিন্ন এলাকায় হামলার শিকার হন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। সরকার-সমর্থক বিভিন্ন সংগঠন ও পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে কোথাও কোথাও। এসব ঘটনায় মোট ছয়জন নিহত হয়েছেন। আহত ব্যক্তির সংখ্যা চার শতাধিক।
এ প্রসঙ্গে জুনাইদ আহ্মেদ বলেন, সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি শান্তিপূর্ণ ও অরাজনৈতিক আন্দোলন ছিল। সেখান থেকে স্বার্থান্বেষী মহল দুজনের মৃত্যুর খবরের গুজব ছড়ায়। তখনো কিন্তু কোনো মৃত্যু ঘটেনি। কিন্তু এই গুজবের ওপর ভিত্তি করে আন্তর্জাতিক কিছু গণমাধ্যম ও কিছু রাষ্ট্রের মুখপাত্র স্বীকৃতি দিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে এই গুজবের ও উসকানির কারণে সারা দেশে ভয়াবহ অবস্থা সৃষ্টি হলো। বিভিন্ন জায়গায় সংঘর্ষে ছয় থেকে সাতজনের জীবন চলে গেল। এর জন্য কি ওই প্ল্যাটফর্ম দায়ী নয়?
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে গুজব ছড়িয়ে দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, এক্সের মতো সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাটফর্মগুলো যে দেশে ব্যবসা করবে, সে দেশের আইন মেনে চলতে হবে। সে দেশের ধর্মীয় অনুভূতি, মূল্যবোধ ও চেতনাকে শ্রদ্ধাবোধ দেখাতে হবে।
জুনাইদ আহমেদ বলেন, যেভাবেই হোক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রক্তাক্ত হয়েছে, সহিংসতা হয়েছে। তার পরিপ্রেক্ষিতে শিল্পী, সাহিত্যিক, লেখক, বক্তব্য ও মন্তব্য দিচ্ছেন। তাঁদের আবেগ–অনুভূতির প্রতি সরকার শ্রদ্ধাশীল। তবে এ অবস্থায় নাগরিকদের নিরাপত্তার কথা যেন চিন্তা করা হয়।
শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে জুনাইদ আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা যেন ধৈর্য ধরেন, সহনশীল হন। তৃতীয় কোনো পক্ষ যেন তাঁদের বিভ্রান্ত না করে, সুযোগ নিতে না পারে, সে ব্যাপারে তাঁরা যেন সচেতন হন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো কিছু দেখেই যেন তাঁরা আবেগপ্রবণ সিদ্ধান্ত না নেন।