সরকারি প্রকল্পে বুয়েটনির্ভরতা কমছে, সুযোগ পাবে অন্য প্রতিষ্ঠান
সরকারি প্রকল্পে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান হিসেবে কাজ পাওয়ার দিক থেকে শীর্ষে আছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট)। নতুন সড়ক কিংবা সেতুর নকশা তৈরিতে বরাবরই অগ্রাধিকার দেওয়া হয় এই উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে। তবে সারা দেশে কাজের চাপ বেড়ে যাওয়ায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে চায় সরকার। ঢাকার বাইরের বিশেষায়িত অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও সরকারি কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়।
গত ২৯ মে এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত ওই সভায় সড়ক পরিবহনসচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী সভাপতিত্ব করেন।
বৈঠকে বলা হয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে কাজের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে। নতুন রাস্তা, সেতু, ভবনসহ বিভিন্ন অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। এসব কাজে পরামর্শক হিসেবে সরকারি প্রতিষ্ঠান বুয়েটের ওপর নির্ভর থাকতে হচ্ছে। এতে বুয়েটের ওপর চাপ বাড়ছে। যেকোনো কাজ দ্রুত শেষ করতে বুয়েটের পাশাপাশি অন্য প্রতিষ্ঠানকেও যুক্ত করা জরুরি।
ঢাকার বাইরের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি তাদের কাজের মান ও সততা প্রমাণ করতে পারে, অবশ্যই তারাও সরকারি কাজ পেতে পারে। বুয়েটের ওপর সরকারের আস্থা এক দিনে হয়নি। দীর্ঘ কাজের গুণগত মান, সততা ও আস্থার কারণে সবাই বুয়েটকে কাজ দেয়। এখন কেউ যদি সেটা প্রমাণ করে, তারাও পেতে পারে।
বৈঠকসংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানায়, সভায় সিদ্ধান্ত হয়েছে, এখন থেকে সরকারি প্রকল্পে সমীক্ষার জন্য পরামর্শক নিয়োগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট), রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (রুয়েট), শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (সাস্ট) এবং মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিকে (এমআইএসটি) নিয়োগ দেওয়া হবে।
এ ছাড়া জাতীয় পরিকল্পনা ও উন্নয়ন একাডেমি এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্টকে (বিআইএএম) দিয়ে সমীক্ষার কাজ করানো হবে। সে ক্ষেত্রে এসব প্রতিষ্ঠানকে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে পরামর্শমূলক সেবা নেওয়ার প্রতিষ্ঠান হিসেবে মন্ত্রণালয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হবে। অঞ্চলভিত্তিক কাজের জন্য ওই অঞ্চলে অবস্থিত বিশেষায়িত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হবে।
সভায় আরও সিদ্ধান্ত হয়, সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয়ের চলমান সব প্রকল্পে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ইন্টার্ন হিসেবে সুযোগ দেওয়া হবে। এ জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে তহবিল গঠন করা হবে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের সম্মানী দেওয়া হবে।
সচিবালয়ে অনুষ্ঠিত সভায় সিদ্ধান্ত হয়, এখন থেকে সরকারি প্রকল্পে সমীক্ষার জন্য পরামর্শক নিয়োগে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিকে নিয়োগ দেওয়া হবে।
জানতে চাইলে সড়ক পরিবহনসচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকার বরাবরই বুয়েটকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। কিন্তু যেকোনো কাজ দ্রুত শেষ করতে বুয়েটের পাশাপাশি বিশেষায়িত অন্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকেও আমরা কাজ দিতে চাই।’
উদাহরণ দিয়ে আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, খুলনা অঞ্চলের জন্য যদি কোনো প্রকল্প নেওয়া হয়, সে ক্ষেত্রে কুয়েটকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। অঞ্চলভিত্তিক কাজে ওই এলাকার বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠানকে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হচ্ছে, সেগুলোর মান সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নূরী বলেন, তারাও দক্ষ। সেখানেও শিক্ষক আছেন, সরকার–স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় এগুলো। প্রকল্পে যেন দেরি না হয়, যেন দ্রুত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করা যায়, সে জন্যই এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
যেকোনো প্রকল্পের নকশা প্রণয়নের পাশাপাশি পণ্যের মান নির্ণয়, প্রকৌশলগত সমস্যার সমাধান করে থাকে বুয়েট। বুয়েটের অধ্যাপক ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জ্বালানি উপদেষ্টা ম. তামিম প্রথম আলোকে বলেন, ঢাকার বাইরের কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান যদি তাদের কাজের মান ও সততা প্রমাণ করতে পারে, অবশ্যই তারাও সরকারি কাজ পেতে পারে। বুয়েটের ওপর সরকারের আস্থা এক দিনে হয়নি। দীর্ঘ কাজের গুণগত মান, সততা ও আস্থার কারণে সবাই বুয়েটকে কাজ দেয়। এখন কেউ যদি সেটা প্রমাণ করে, তারাও পেতে পারে।
তবে এই অধ্যাপক মনে করেন, বুয়েটের ওপর এখনো সরকারি কাজের ক্ষেত্রে চাপ তৈরি হয়নি। সরকার থেকে যে কাজ দেওয়া হয়, তা সঠিক সময়েই বাস্তবায়ন করা হয়।