সড়কে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা, আট দফা দাবি

চট্টগ্রাম পরিবহন মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় কথা বলেন জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষেছবি: প্রথম আলো

সড়কে গাড়ি চলাচলে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন পরিবহনমালিক ও শ্রমিকেরা। যেকোনো পরিস্থিতিতে গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক রাখতে আটটি বিষয় নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তাঁরা।

আজ বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম নগরের টাইগারপাসে সিটি করপোরেশনের অস্থায়ী প্রধান কার্যালয়ে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়। এতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরীসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

পরিবহনমালিক-শ্রমিকদের দাবিগুলো হচ্ছে সড়কে গাড়ি আক্রান্ত হলে মামলা নেওয়া, যাত্রী ও যানবাহনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, পণ্য পরিবহনে পাহারা দেওয়া, গণহারে মামলা না দেওয়া, যত্রতত্র গাড়ি তল্লাশি বন্ধ করা, আক্রান্ত মালিক-শ্রমিকদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া ও বাস-ট্রাক টার্মিনাল নির্মাণ করা। দাবিগুলো ক্রমান্বয়ে মেনে নেওয়া হবে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সভায় আশ্বাস দেওয়া হয়।

সভায় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র মো. রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ‘রাতের বেলা যত্রতত্র গাড়ি রেখে চলে যাবেন না। তাহলে দুর্বৃত্তরা সুযোগ পাবে।’ যানবাহন পাহারায় প্রশাসনের পাশাপাশি মালিক-শ্রমিকদের নিয়ে কমিটি করার পরামর্শ দেন মেয়র। জরিপের মাধ্যমে সড়কে গণপরিবহন দাঁড়ানোর স্টপেজ নির্ধারণ করে মার্কিং করে দেওয়ার কাজ চলছে বলে সভায় জানান তিনি।

সভায় চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বলেন, সড়কে যানবাহন ও পরিবহনশ্রমিকেরা আক্রান্ত হলে থানায় মামলা নিতে চায় না।

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পূর্বাঞ্চলের সভাপতি মৃণাল চৌধুরী বলেন, ‘আমরা গাড়ি চালাতে চাই, কিন্তু প্রয়োজনীয় নিরাপত্তাও আমরা চাই।’ পণ্য পরিবহনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাহারা নিশ্চিতের দাবি জানান এই শ্রমিকনেতা।

চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী বলেন,‘রাজনৈতিক সংঘাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় পরিবহনমালিক-শ্রমিকেরা। কিন্তু আমরা সেভাবে কোনো ক্ষতিপূরণ পাই না। নির্ভয়ে যেন গাড়ি চালাতে পারি, সে সহযোগিতা আমরা চাই।’

সভায় নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার মো. মাসুদ আহাম্মদ বলেন, ‘আক্রান্ত হওয়ার পর কোনো থানা মামলা না নিলে আমাদের জানাবেন। আমরা ব্যবস্থা নেব। যোগাযোগব্যবস্থা চালু রাখতে পুলিশের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।’

চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সচিব আশরাফুল আলমের সঞ্চালনায় সভায় বক্তব্য দেন প্যানেল মেয়র গিয়াস উদ্দিন, বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের পরিচালক মাসুদ আলম, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহীন উল ইসলাম চৌধুরী ও চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সভাপতি মাহবুবুল হক মিয়াসহ বাস, ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান, লরিসহ বিভিন্ন পরিবহন সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

জেলা প্রশাসনের সঙ্গেও সভা

‘চট্টগ্রাম বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনের জন্য নগর ও জেলায় সর্বোচ্চ সহায়তা করা হবে। পরিবহনমালিকদের আমরা আশ্বস্ত করতে চাই, আপনারা পণ্য পরিবহন করুন। আপনাদের নিরাপত্তার জন্য বিজিবি, সেনাবাহিনী ও পুলিশ রয়েছে। পণ্য পরিবহনের সময় চালক ও শ্রমিকদের আইডি কার্ড তাঁদের কারফিউ পাস হিসেবে গণ্য করা হবে।’

গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলনকক্ষে চট্টগ্রাম পণ্য পরিবহন মালিক সমিতির প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন চটগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। এ সময় চট্টগ্রামের ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও অন্যান্য পণ্য পরিবহন সংগঠনের নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।

পরিবহনমালিকেরা বলেন, দেশে চলমান সহিংসতার কারণে চালক ও শ্রমিকেরা নিরাপত্তাহীনতায় থাকেন। এ ছাড়া চট্টগ্রাম জেলা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলায় পণ্য পাঠানোর সময় বিভিন্ন স্থানে ঝুঁকি থাকে। এসব স্থানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তাঁরা।

চট্টগ্রাম বিজিবি-৮ ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লেফট্যানেন্ট কর্নেল শাহেদ মিনহাজ সিদ্দিকী বলেন, ‘কক্সবাজার থেকে পর্যটকদের নিরাপদে যেভাবে আনা হয়েছে, পণ্য পরিবহনগুলো যদি সেভাবে যেতে চায় তাহলে বিজিবি নিরাপত্তায় সেভাবে তাদের জেলা সীমান্ত পার করিয়ে দেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে গাড়িগুলো যদি একই সময়ে চলে তাহলে ঝুঁকি কমে যায়।’

পণ্য পরিবহন নেতাদের মতামত শোনার পর চট্টগ্রাম চেম্বার সভাপতি ওমর হাজ্জাজ বলেন, ‘চট্টগ্রাম ইপিজেডের পেছনে আউটার রিং রোড খুলে দেওয়া, চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সকে পাস হিসেবে গণ্য করা ও বন্দর এলাকায় নিরাপত্তায় যে দাবি জানানো হয়েছে, তা প্রশাসন বিবেচনায় নেবে বলে আশা করছি।’

এ ছাড়া চালকদের ড্রাইভিং লাইসেন্সকে কারফিউ পাস হিসেবে বিবেচনার জন্য সেনাবাহিনী, বিজিবি ও পুলিশকে আহ্বান জানান জেলা প্রশাসক। সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এ কে এম গোলাম মোর্শেদ খান, চট্টগ্রাম জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কবীর আহম্মেদ, নগর পুলিশের উপকমিশনার (ট্রাফিক) এন এম নাসিরুদ্দিন, চট্টগ্রাম সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব মনজুরুল আলম চৌধুরী প্রমুখ।