বঙ্গবন্ধুর রাজনীতির সেকাল ও একাল
তরুণ শেখ মুজিব পুরোদমে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন কলকাতায় ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় থেকে। তখন পাকিস্তান আন্দোলন তুঙ্গে। সেকালের শিক্ষিত মুসলিম তরুণদের মতোই তিনিও পাকিস্তানের সংগ্রামে জড়িয়ে পড়েন, যোগ দিয়েছিলেন মুসলিম লীগে।
বরাবরই কর্মী হিসেবে শেখ মুজিব একনিষ্ঠ এবং পরিশ্রমী। পাকিস্তান আন্দোলনেও তিনি আন্তরিকভাবেই ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন। তাঁর আশা ছিল, নতুন এই রাষ্ট্র পিছিয়ে থাকা সাধারণ মুসলিম জনগণের কল্যাণ সাধন করবে। কিন্তু বাস্তবে তাঁর স্বপ্ন অধরাই থেকে গিয়েছিল।
প্রায় জন্মলগ্ন থেকেই পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর এবং মুসলিম লীগ নেতাদের সঙ্গে তাঁর চিন্তাভাবনার মিল ঘটেনি। ১৯৪৮ সালে পাকিস্তানের প্রতিষ্ঠাতা জিন্নাহ রাষ্ট্রভাষা প্রশ্নে যে অবস্থান নিয়েছিলেন, তাকে মানা সচেতন বাঙালির পক্ষেই সম্ভব হয়নি, শেখ মুজিবের ক্ষেত্রে এর অন্যথা হওয়ার কোনো সুযোগ ছিল না। অচিরেই তিনি শাসককুল এবং মুসলিম লীগ নেতাদের ওপর আস্থা হারাতে শুরু করেন।
নবাবজাদা, পীরজাদা ও জোতদার-জমিদারদের হাত থেকে রাজনীতি ও শাসনকে সাধারণ মানুষের হাতে ফিরিয়ে আনার তাগিদ অনুভব করেন। তিনি উপলব্ধি করেন সুবিধাভোগী শ্রেণির হাত থেকে মুসলিম লীগকে সাধারণের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া প্রায় অসম্ভব কাজ। ফলে তাঁর চেষ্টা থাকে সাধারণের অধিকার আদায় এবং ভাগ্য ফেরানোর জন্য নতুন একটি দল গঠনের।
শেখ মুজিব তখনো তরুণ এবং কর্মী পর্যায়ের হলেও তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ইতিমধ্যে প্রমাণিত হয়েছে। ১৯৪৯ সালে তাঁরা গঠন করেন আওয়ামী মুসলিম লীগ অর্থাৎ জনগণের মুসলিম লীগ। এ সময় রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবে শহীদ সোহরাওয়ার্দী ও মাওলানা ভাসানীকে তিনি মান্য করতেন।
এঁরাসহ দলে আরও প্রবীণ নেতারা থাকলেও ক্রমে এই দলের মূল সংগঠকের ভূমিকায় আত্মপ্রকাশ করেন তরুণ মুজিব। ভাষা আন্দোলনের সূত্রেই তখন পূর্ব পাকিস্তানে যে গণতান্ত্রিক চেতনার বিকাশ ঘটে, তাতে হিন্দু-মুসলিম মিলিতভাবে এক অসাম্প্রদায়িক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনের অভিপ্রায় প্রকাশ পেয়েছিল। এই ধারাতেই বিশ্বাসী ছিলেন বলে তাঁরা দলের নাম থেকে ধর্মীয় পরিচয়ের ‘মুসলিম’ শব্দটি বাদ দেন। সেই থেকেই আওয়ামী লীগ এই অঞ্চলের মানুষের প্রধান রাজনৈতিক দল হিসেবে উত্তরোত্তর শক্তিশালী হয়েছে। দলের সঙ্গে সঙ্গে শেখ মুজিবেরও রাজনৈতিক নেতা হিসেবে উত্তরণ ঘটেছে।
পঞ্চাশের দশকে যখন পাকিস্তান সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের রাজনীতি প্রকট রূপ ধারণ করেছিল, তখন ভাষা আন্দোলনের চেতনায় পূর্ব পাকিস্তানে একধরনের সাংস্কৃতিক জাগরণ ঘটে চলেছিল। এতে অসাম্প্রদায়িক চেতনা এবং প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক আদর্শের প্রভাব ছিল শক্তিশালী।
শেখ মুজিবের ছিল প্রখর রাজনৈতিক ধীশক্তি এবং বাস্তবসম্মত কৌশল নির্ধারণের বিচক্ষণতা। আইয়ুবের সামরিক শাসনের পরে যখন রাজনীতির ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহৃত হয়, তখন শেখ মুজিব আওয়ামী লীগের মূল নেতা হিসেবে রাজনৈতিক অঙ্গনে বলিষ্ঠ ভূমিকা গ্রহণ করেন। একদিকে স্বাধীনতাকামী বিভিন্ন গোপন গ্রুপের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে চলেন এবং অন্যদিকে প্রকাশ্য রাজনীতিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনকে বেগবান করার দিকে মনোযোগী হন।
এখানে মনে রাখা দরকার, পঞ্চাশ ও ষাটের দশকজুড়ে পূর্ব বাংলায় অনেকগুলো সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলন আয়োজিত হয়েছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনও ক্রমাগত সাংস্কৃতিক কার্যক্রম চালিয়ে গিয়েছিল। এগুলো বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশে সহায়ক ভূমিকা রেখেছিল। আর সময়ের বিবেচনায় এসবের নেতৃত্বে ছিলেন বামপন্থী চেতনায় বিশ্বাসী বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিকর্মীরা।
তখন এশিয়া ও আফ্রিকায় উপনিবেশবাদবিরোধী জাতীয় মুক্তির আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে এবং নতুন নতুন স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটছিল। এর অধিকাংশেরই নেতৃত্বে ছিলেন বাম ও মধ্যবাম নেতারা। সারা বিশ্বে তখন সমাজতন্ত্রের আদর্শিক রাজনীতি তরুণ সমাজকে আকর্ষণ করেছিল। পূর্ব পাকিস্তানও এর ব্যতিক্রম ছিল না। কার্যত এ সময় পশ্চিম পাকিস্তানেও বামপন্থী চেতনার রাজনীতিবিদদের জোরালো ভূমিকা লক্ষ করা যায়। ফলে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে শেখ মুজিব যখন ছয় দফা ঘোষণা করছেন, তখন এ দেশের রাজনীতিসচেতন জনগণের মধ্যে সমাজতন্ত্রের প্রতি আকর্ষণ ও সমর্থন ছিল জোরালো।
তৎকালীন বাস্তবতায় ছয় দফা পূর্ব বাংলার জনগণের মন জয় করেছিল। বামপন্থী চেতনার বড় একটি অংশও ছয় দফাকে সমর্থন দিতে কুণ্ঠিত হয়নি। ফলে ছয় দফার আন্দোলন সমগ্র প্রদেশে ব্যাপক সাড়া ফেলে একটি জোরালো আন্দোলনের প্রেক্ষাপট তৈরি করে।
পাকিস্তান সরকার আন্দোলন দমানোর জন্য শেখ মুজিবের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র ও হয়রানিমূলক মামলা দিতে থাকে এবং আওয়ামী লীগের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধেও কঠোর পুলিশি ব্যবস্থা গ্রহণ করে। এতে আওয়ামী লীগ এবং ছয় দফার প্রতি জনসমর্থন আরও বৃদ্ধি পায়। শেখ মুজিবুর রহমান দলের বাইরেও পূর্ব পাকিস্তানের মানুষের রাজনৈতিক মুখপাত্রে পরিণত হলেন। তাঁর যেন আর কোনো রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী এই প্রদেশে থাকল না।
এরপরে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় যখন শেখ মুজিবকে জড়ানো হলো, তখন এর প্রতি যেমন মানুষের প্রতিরোধের স্পৃহা জোরদার হয়েছে, তেমনি শেখ মুজিবের প্রতি তাদের ভালোবাসার আবেগ শিখরে পৌঁছাতে থাকে।
ছাত্র-তরুণদের সঙ্গে শ্রমিক-জনতার ব্যাপক আন্দোলন যুক্ত হয়ে উনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের সূত্রপাত ঘটায়। এর ফলে সামরিক শাসক আইয়ুবের পতন ঘটে এবং শেখ মুজিব এই বাংলার অবিসংবাদী নেতায় পরিণত হন। আন্দোলনের ফলে তিনি এবং ষড়যন্ত্র মামলার অন্য আসামিরা যখন মুক্তি পান, তখন সারা প্রদেশে একধরনের বিজয়ের পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছিল। সেই বিজয়ের নায়ক ছিলেন শেখ মুজিবুর রহমান, যাঁকে ছাত্র-জনতা বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করেছিল। সেই থেকে তিনি বঙ্গবন্ধু এবং জাতির মুক্তিসংগ্রামের কান্ডারি।
তবে স্বাধীন বাংলাদেশে তিনি যখন পাকিস্তানের কারাগার থেকে মুক্ত হয়ে ফিরে এলেন, তখন তাঁর জন্য কাজটা যেন আরও কঠিন ছিল। তিনি সত্তরের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী দ্রুত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা কায়েমের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন করেন এবং তার ভিত্তিতে নির্বাচনের ব্যবস্থা করেন।
হয়তো যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধকালে অর্জিত জাতীয় ঐক্যের ধারাবাহিকতায় নাকি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করে ধ্রুপদি গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সরকার গঠন সময়োপযোগী কাজ হতো, এ নিয়ে আজ একাডেমিক আলোচনা হতে পারে। কেননা, মুক্তিযুদ্ধের ৯ মাসে জাতির যে রূপান্তর ঘটেছিল এবং জনগণ যেসব অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে গিয়েছিল, রাজনীতিতে তার প্রতিফলন ঘটেছিল বিচিত্রভাবে।
বেশির ভাগ ক্ষেত্রে পরিবর্তন এবং প্রাপ্তির অভিপ্রায়ে অস্থিরতা এবং তাৎক্ষণিকতার চাপ ছিল প্রবল। চরম বিপ্লবী চিন্তাভাবনারও ঘাটতি ছিল না। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত সদ্য স্বাধীন দেশে মূলত পুনর্বাসন ও পুনর্গঠনই হলো মুখ্য কাজ। তার জন্য প্রয়োজন জাতীয় ঐক্য, সবার ধৈর্যপূর্ণ অংশগ্রহণ এবং নেতৃত্বকে কাজের পরিবেশ প্রদান। কিন্তু দেখা গেল দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার এবং অস্থিরতা ও হঠকারী প্রবণতা কেবল বেড়েই গিয়েছিল।
এ অবস্থায় প্রথাগত গণতান্ত্রিক রাজনীতি কার্যকর হয়নি। বঙ্গবন্ধু সাময়িকভাবে হলেও ভিন্নভাবে পরিস্থিতি সামলে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। তবে পরাজিত শক্তির দেশি-বিদেশি চক্রান্তে আকস্মিক নির্মম মৃত্যুতে তাঁর সে প্রয়াস অসময়ে বন্ধ হয়ে যায়।
তার পরের ইতিহাস কমবেশি আমাদের সবারই জানা আছে। তবে ২০০৯ সালে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার শক্তিশালী অবস্থান নিয়ে রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরে আসা পর্যন্ত দীর্ঘ তিন দশকের বেশি সময়ে দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাজনীতি ও অর্থনীতিতে, সমাজ ও সংস্কৃতিসহ ইতিহাসের যাত্রাপথে ব্যাপক পরিবর্তন ঘটেছে। বিষয়টি আমাদের বিবেচনায় রাখতে হবে।
১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের মাধ্যমে সমাজতান্ত্রিক রাজনীতি বিশ্বব্যাপী এমনই এক সংকটে পড়েছে যে এই শক্তির পক্ষে কোনো দেশেই কার্যকর ভূমিকা পালন সম্ভব হচ্ছে না। আমাদের দেশে পরিস্থিতি খুবই শোচনীয়। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও তার পশ্চিমা মিত্রদের ভ্রান্ত রাজনীতির ফলে বিভিন্ন মুসলিম দেশে জঙ্গিবাদ ও চরমপন্থার উদ্ভব ঘটেছে। বাংলাদেশও এর আঁচ এবং আঘাতের বাইরে থাকেনি।
বোঝা যায়, পঞ্চাশ বা ষাটের দশকে যে অসাম্প্রদায়িক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার বিকাশ ঘটেছিল, তা যথাযথ পরিণতি লাভ করতে পারেনি। বরং বিশ্বায়নের প্রভাবে মুক্তবাজার এবং ইংরেজি ভাষাসহ পশ্চিমা চিন্তাধারার প্রভাব বাড়ছে, কিন্তু তা গণতান্ত্রিক চেতনাকে বিকশিত করার ক্ষেত্রে তেমন ভূমিকা রাখেনি। উল্টো মুক্তবাজারের প্রভাবে আদর্শবাদ, নীতি-নৈতিকতা এবং ঐতিহ্য সচেতনতার অবসান লক্ষ করছেন অনেকেই।
বিশ্বায়ন এবং চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে আজকের তরুণদের জন্য নতুন বাস্তবতার উন্মেষ ঘটেছে। তরুণদের মধ্যে আদর্শিক অঙ্গীকারের স্থলে বাস্তবসম্মত ব্যবসায়িক উদ্যোগের ঝোঁক বাড়ছে। সমাজে ব্যক্তিস্বার্থ, ভোগবাদ, যেকোনো মূল্যে ক্ষমতার অংশীদারত্ব ও সাফল্য অর্জন ইত্যাদি যেন প্রকট হয়ে উঠছে। এই বাস্তবতায় মনে হয় কেবল আদর্শবাদের অবসান ঘটেনি, যেন রাজনীতির ঐতিহ্যেও চলেছে ভাঙাগড়া।
এই প্রেক্ষাপটে যদি আমরা আজকের বাংলাদেশে বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক আদর্শকে অন্বেষণ করি, তবে হয়তো হতাশ হতে হবে। ভাবধারায় আওয়ামী লীগে ছায়া আজকের আওয়ামী লীগের মিলবে না। কিন্তু যদি বাংলাদেশ নিয়ে তাঁর যে স্বপ্ন ছিল, সে কথা ভাবি তাহলে হয়তো অনেক ক্ষেত্রে সাফল্য দেখতে পাব। আজকের বাংলাদেশ দারিদ্র্যে জর্জরিত নয় এবং দুর্নীতির মধ্যেও অনুন্নয়ন কাটিয়ে উঠেছে।
অতিসাম্প্রতিক সংকটের আগপর্যন্ত বাংলাদেশের অগ্রগতি নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করা ছিল সহজ। এখন হয়তো কিছুটা উদ্বেগ নিয়ে আমাদের তাকাতে হবে ভবিষ্যতের দিকে। তবে মূল কাজটা হলো বাংলাদেশ নিয়ে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি জনগণের গণতান্ত্রিক অধিকার প্রতিষ্ঠার যে লক্ষ্য তাঁর ছিল এই দুইয়ের মধ্যে মিলন ঘটানো।
এটাই এখনকার রাজনীতির মূল চ্যালেঞ্জ। আজ বিশ্বে গণতন্ত্র সংকটের মধ্যে রয়েছে। আইনের শাসন ও মানবাধিকার নানাভাবে দেশে দেশে ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট ভাষায় আত্মজীবনীতে বলেছেন তাঁর অবস্থান থাকবে শোষকের বিরুদ্ধে, শোষিতের পক্ষে।
মৌলবাদের সঙ্গে আপস করে, পুঁজিবাদী পথ ধরে বঙ্গবন্ধু চেতনার রাজনীতি এবং স্বপ্নের দেশ বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, সেই প্রশ্নটা আজকে ওঠাই সংগত। আমরা লক্ষ্য করব তাঁর কন্যা বর্তমান কঠিন বাস্তবতায় সেই চ্যালেঞ্জ কীভাবে এবং শেষ পর্যন্ত কতটা সফলভাবে মোকাবিলা করছেন।
আবুল মোমেন: কবি, প্রাবন্ধিক ও সাংবাদিক