২৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আয়োজন দেখতে ক্লিক করুন
মূল সাইট দেখতে ক্লিক করুন

বিগত সরকার গুম খুনে রাষ্ট্রীয় বাহিনীকে ব্যবহার করেছে

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বস্ত্র, পাট ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেনফাইল ছবি

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের বস্ত্র, পাট ও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘দেশে পুলিশকে দিয়েই মানবাধিকার হরণের কাজ শুরু হয়। ডিজিএফআইয়ের কাজ ছিল আন্তঃবাহিনীর নিরাপত্তা নিয়ে; কিন্তু তারা বিগত দশকগুলোতে বিভিন্নভাবে ব্যবহৃত হয়েছে। বিগত সরকার গুম–খুনের জন্য এসব বাহিনীকে ব্যবহার করেছে। তবে আমরা দানবিক পুলিশ নয়, মানবিক পুলিশ গঠন করতে চাই।’

আজ শনিবার সকালে রাজধানীর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘গণতান্ত্রিক পুনর্গঠনের জন্য সংলাপ-মানবাধিকার প্রসঙ্গ’ শীর্ষক আলোচনায় উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন এ মন্তব্য করেন। সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) এই আলোচনার আয়োজন করে। সভায় ক্রসফায়ারে হত্যা ও ব্যাপক মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত র‍্যাবের বিলুপ্তির পক্ষে মত দেন অধিকাংশ আলোচক।

উপদেষ্টা সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান দমনের সময় পুলিশের হাতে মারাত্মক আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়া হয়েছিল, তা কীভাবে সাধারণ লোকের হাতে গেল, এ নিয়ে তদন্ত করা প্রয়োজন। তিনি বলেন, ২০০৯ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত ১ হাজার ৪৮টি পুলিশি হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এ জন্য পুলিশে সংস্কার দরকার।

আলোচনা প্রসঙ্গে তিনি রসিকতা করে বলেন, যদিও তিনি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নেই, তবু তিনি পুলিশ কমিশন গঠনে দৃঢ় অবস্থানে রয়েছেন। তিনি সরস বাক্ভঙ্গিতে বলেন, তিনি এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে নেই। বস্ত্র, পাট ও নৌকা এসবের দায়িত্বে রয়েছেন। দর্শকেরা এ সময় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের নাম পরিবর্তনের প্রস্তাব দিলে তিনি বলেন, এটা তাহলে ‘জাহাজ ও বন্দর মন্ত্রণালয়’ হতে পারে।

সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিনি এই মন্ত্রণালয়গুলোর দায়িত্ব নিয়ে দেখেছেন, কীভাবে চুরি করতে হয়, প্রকল্প তৈরি করতে হয়—এসব নিয়ে তারা ব্যস্ত থেকেছে। ২৪টি স্থলবন্দর করা হয়েছে, যার অধিকাংশই অপ্রয়োজনীয়। এর মধ্যে আটটি স্থলবন্দরে কেউ যায় না।

মানবাধিকার নেত্রী ও সিজিএসের চেয়ারপারসন মুনিরা খান বলেন, মানবাধিকার কমিশন মানবাধিকারের জন্য অর্থপূর্ণ কী কাজ করতে পেরেছে, তা আমাদের জানা নেই। জনগণের ভোটাধিকার একটি বড় মানবাধিকার। বিগত স্বৈরাচারী সরকারের সময় সেটি মানুষের ছিল না। কী করলে আমরা আর স্বৈরাচারকবলিত হবো না, তা নিশ্চিত করতে কাজ করতে হবে। এ জন্য এই সরকারকে সময় দিতে হবে। অধীর না হয়ে, অধৈর্য না হয়ে ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে এই সরকারকে সবার সহযোগিতা করতে হবে।

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিচালক নূর খান বলেন, মানবাধিকার কমিশন গঠনে কোনো স্বচ্ছতা নেই। এর কোনো কার্যকারিতা নেই। তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে ৬ হাজারের বেশি ক্রসফায়ারের ঘটনা ঘটেছে। এসব হত্যা ও গুমের ঘটনার বিচারের জন্য যেসব তদন্ত রিপোর্ট আছে, সেগুলো দালিলিক প্রমাণ হিসেবে সংরক্ষণ করতে হবে। এ ছাড়া আয়নাঘর নামের গোপন বন্দিশালা, হাজতখানা, নির্যাতনকেন্দ্রসহ সব স্থাপনা সংরক্ষণ করতে হবে।

সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এলিনা খান বলেন, মানবাধিকার কমিশন সংস্কারের নামে একজনের বদলে আরেকজনকে এনে কোনো বিশেষ ফল পাওয়া যাবে না। মানবাধিকার কমিশনের আইনটিই এই সংস্থাকে অকার্যকর করে রেখেছে। এই আইনের বড় রকমের পরিবর্তন করতে হবে।

নারী নেত্রী ইলিরা দেওয়ান বলেন, মানবাধিকার কমিশন কখনো স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। অনেক সময় তারা পার্বত্য এলাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনায় তদন্ত করেছে; কিন্তু আমরা সেই তদন্ত রিপোর্ট জানতে পারিনি। পার্বত্য এলাকায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটলে নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিদের সেখানে যেতে দেওয়া হয় না।

এবি পার্টির যুগ্ম সম্পাদক আসাদুজ্জামান ফুয়াদ আগস্টের গণহত্যা, পিলখানায় গণহত্যা ও হেফাজত গণহত্যার তদন্তের জন্য কমিশন গঠনের দাবি করেন।

মায়ের ডাকের সমন্বয়ক সানজিদা ইসলাম বলেন, যারা গুম-খুনের সঙ্গে জড়িত, সেসব বাহিনীর প্রধানেরা পরিবর্তন হলেও পরের স্তরের সবাই স্বপদে বহাল রয়েছেন। তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।

জি-নাইনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন তাঁর নিজের গুমের শিকার হওয়ার অভিজ্ঞতার বর্ণনা করে বলেন, বিগত সরকার গুম–খুনের যে ঘৃণ্য চর্চা করেছে, তা নিয়ে আলোচনা করা প্রয়োজন। একই সঙ্গে ১৯৭২ সাল থেকে যত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটেছে, সবগুলোর বিচার হওয়া দরকার।

সঞ্চালক সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেন, গত প্রায় দেড় দশকের আন্দোলনের চূড়ান্ত পর্যায় ছিল আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান। স্বাধীনতার পর থেকে নির্বাচন, গণতন্ত্র, মানবাধিকার এমন বিভিন্ন বিষয়ে সংকট ছিল, এখনো আছে। এই ছাত্র-জনতা গণ-অভ্যুত্থানের ভেতর দিয়ে পুনর্গঠনের যে নতুন সম্ভাবনার ক্ষেত্র সৃষ্টি হয়েছে, তা এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।

আলোচনায় আরও অংশ নেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান, রাজনীতি বিশ্লেষক আশরাফ কায়সার, জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ, কাপেং ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক পল্লব চাকমা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী দিলরুবা শরমিন, ট্রান্স নারী অধিকার কর্মী জয়া শিকদার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নাইমা আক্তার, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তৌহিদ সিয়াম, রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক সালেহ আহমেদ, গণ অধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান ও ব্যারিস্টার আহসান হাবীব ভূঁইয়া প্রমুখ।