গাজীপুরের বিএনপি নেতা আলী আজমকে হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানো অবস্থায় মায়ের জানাজায় নেওয়ার ঘটনায় নিন্দা ও ক্ষোভ জানিয়েছে দুটি মানবাধিকার সংগঠন। তারা বলেছে, এটা মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী।
এ ছাড়া একজন বিশিষ্ট আইনজীবী বলেন, এটা মধ্যযুগে ফিরে যাওয়ার একটি বীভৎস উদাহরণ। তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদও মনে করেন, আলী আজমের ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া খুলে দিলে ভালো হতো।
মায়ের মৃত্যুর খবরে গত মঙ্গলবার তিন ঘণ্টার জন্য প্যারোলে মুক্তি পান গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বোয়ালী ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আজম। নিজ বাড়িতে নেওয়ার পর তিনি নিজেই মায়ের জানাজা পড়ান। এ সময় তাঁর হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানো ছিল।
হাতকড়া ও ডান্ডাবেড়ি পরানো অবস্থায় মায়ের জানাজায় অংশ নেওয়ার ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর এ নিয়ে সমালোচনা হচ্ছে। গতকাল বুধবার ঘটনাটি নিয়ে একটি বিবৃতি দেয় মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে সংস্থাটির পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের সংবিধানেই বলা আছে, ‘বিচার বা দণ্ড প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো ব্যক্তিকে যন্ত্রণা দেওয়া যাবে না।’ সাংবিধানিক অধিকার থাকা সত্ত্বেও একজন সাধারণ নাগরিককে মায়ের জানাজায় ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে নিয়ে যাওয়া কেবল অমানবিকই নয়; বরং মৌলিক মানবাধিকারের পরিপন্থী। এখানে উচ্চ আদালতের নির্দেশনাও অনুসরণ করা হয়নি।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা ত্রিমোড় এলাকায় গত ২৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার অভিযোগে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে করা মামলায় ২ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার হন আলী আজম। এ মামলার বাদী আওয়ামী লীগের কার্যালয়ের অফিস সহকারী আবদুল মান্নান শেখ তখন প্রথম আলোকে বলেন, তিনি ঘটনা ও মামলার বিষয়ে কিছুই জানেন না।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের শিক্ষক শাহদীন মালিক প্রথম আলোকে বলেন, ডান্ডাবেড়ি পরিয়ে মায়ের জানাজায় নিয়ে যাওয়া মধ্যযুগে ফিরে যাওয়ার একটি বীভৎস উদাহরণ। দুনিয়ায় বহু কর্তৃত্ববাদী সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ একসময় স্বাভাবিক হয়ে যায় এবং জনগণও সেটাকে ক্রমে গ্রহণ করতে অভ্যস্ত হয়ে যায়।
তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ গতকাল বুধবার সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, কয়েক দিন আগে কয়েকজন জঙ্গি পালিয়ে গেছে। সে ক্ষেত্রে যেভাবে সতর্কতা অবলম্বন করা দরকার ছিল, সেটি করা হয়নি বলে তদন্তে উঠে এসেছে। এ জন্য তাঁরা অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করেছেন।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘তাঁরা (পুলিশ কর্মকর্তা) বিষয়টি জানতেন না। যাঁরা সেই বিএনপি নেতাকে বহন করে এনেছিলেন, শুধু তাঁরাই জানতেন; অন্যরা কেউ জানতেন না। তবে আমি মনে করি, জানাজার সময় তাঁর ডান্ডাবেড়ি ও হাতকড়া খুলে দিলে ভালো হতো।’
ঘটনাটি নিয়ে এক বিবৃতিতে গতকাল মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, ঘটনাটি সংবিধান ও আইনের পরিপন্থী। কারা কর্তৃপক্ষ ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এ আচরণ কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এটা বেআইনি ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ। জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে।