গাজীপুর সিটি করপোরেশনের গাছা এলাকায় প্রায় দেড় একর জমিতে গাজীপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথ টেকনোলজির (আইএইচটি) নির্মাণকাজ শেষ হয় ২০১৭ সালে। প্রতিষ্ঠানটি কার্যক্রম শুরু করে ২০২০ সালের ১০ জানুয়ারি। তিন বছরে সেখানে ২৭৯ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। কিন্তু প্রশিক্ষক রয়েছেন মাত্র দুজন, তাও অন্য প্রতিষ্ঠান থেকে অস্থায়ীভাবে আনা।
গাজীপুরের এই আইএইচটিতে ৯ তলা একটি একাডেমিক ভবন, ৬ তলা ছাত্রাবাস, ৭ তলা ছাত্রীনিবাস এবং প্রশিক্ষক ও কর্মকর্তাদের বসবাসের জন্য ১০ তলা ভবন করা হয়েছে। কিন্তু ভবনগুলোর ব্যবহার সামান্য। সেখানকার নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষার্থী প্রথম আলোকে বলেন, তিনি অনেক আশা নিয়ে আইএইচটিতে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু এখন সব বিষয়ে প্রশিক্ষক না থাকায় নিয়মিত ক্লাস হয় না। পরীক্ষাগারে যন্ত্রপাতি নেই। ফলে হাতে–কলমে শিক্ষাও পাচ্ছেন না।
দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য খাতে প্রবণতা হলো ভবন তৈরি করা।ইহতেশামুল হক চৌধুরী, মহাসচিব, বিএমএ
গাজীপুরের মতো দেশের ১৪ জেলায় ১৫টি আইএইচটি প্রতিষ্ঠা করেছে সরকার। এগুলোর নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে গত ছয় বছরের মধ্যে। লক্ষ্য ছিল স্বাস্থ্য খাতে রোগীর রক্ত, মূত্র পরীক্ষা, এক্স-রে করাসহ বিভিন্ন রোগ পরীক্ষার জন্য দক্ষ জনবল তৈরি করা, যাঁরা মেডিকেল টেকনোলজিস্ট নামে পরিচিত। এ ধরনের দক্ষ জনবল স্বাস্থ্য খাতের জন্য জরুরি। করোনাকালে মেডিকেল টেকনোলজিস্টের ঘাটতির চিত্রটি বেরিয়ে এসেছিল। কিন্তু হেলথ টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের ভবন করতে যতটা আগ্রহ ছিল, জনবল নিয়োগে ততটা নেই। এত বছর পরও আইএইচটিগুলোতে পদ সৃষ্টি করে প্রশিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়নি। ফলে প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোদমে কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি। কোথাও কোথাও ধার করে দু-একজন প্রশিক্ষক এনে কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে। শিক্ষা উপকরণ ও সরঞ্জামের ঘাটতিও প্রকট। যেহেতু কার্যক্রম পুরোদমে শুরু হয়নি, সেহেতু আইএইচটিগুলোর ভবন কোনোটি পুরোটা, কোনোটি আংশিক খালি পড়ে আছে।
দেশের ১৫টি আইএইচটির দুরবস্থার বিষয়টি উঠে এসেছে স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের এক চিঠিতেও। অধিদপ্তর থেকে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ বিভাগে গত মার্চে পাঠানো চিঠিটিতে বলা হয়েছে, জরুরি ভিত্তিতে এসব প্রতিষ্ঠানে জনবল নিয়োগ দেওয়া আবশ্যক। প্রথম আলোর পক্ষ থেকে ৭টিতে গিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে আইএইচটির চিত্র দেখা গেছে।
স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) মোস্তফা খালেদ আহমদ ২০ এপ্রিল প্রথম আলোকে বলেন, ‘একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনার জন্য যত জনবল দরকার, আমরা যা চাই, তা মন্ত্রণালয় দিতে পারে না। আমরা যা চাই; তা পাই না। সে কারণে পুরোদমে প্রতিষ্ঠান চালানো যাচ্ছে না।’ অযত্নে ভবন খালি পড়ে থাকার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন, কোথাও ঠিকাদারের লোকজন দিয়ে, কোথাও জেলা সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে লোকবল নিয়ে ভবনগুলোর নিরাপত্তা দেওয়া হচ্ছে। তিনি আশা প্রকাশ করেন, ধীরে ধীরে এ সমস্যার সমাধান হবে।
অবশ্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, কোনো অবকাঠামো নির্মাণের আগে তা ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্যোগ নিতে হয়। আইএইচটির মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভবন নির্মাণের উদ্যোগের সঙ্গে জনবলের ব্যবস্থা করার প্রক্রিয়াও শুরু করা দরকার ছিল। সেটা হয়নি। দেখা যাচ্ছে, দেশে কোনো কোনো ক্ষেত্রে স্থাপনা নির্মাণের দিকে আগ্রহ বেশি। কিন্তু সেগুলো ব্যবহারের ব্যবস্থা করার দিকে জোর কম।
বিষয়টি নিয়ে ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সভা শেষে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, দেশে সরকারিভাবে নতুন ভবন নির্মাণের আগে ২০ বার চিন্তা করার কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেছেন দেশে এতগুলো ভবন খালি পড়ে আছে। জনবলের অভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে না। মন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নতুন ভবন নির্মাণসংক্রান্ত যেকোনো প্রকল্প ভালো করে যাচাই-বাছাই করতে পরিকল্পনা কমিশনকে নির্দেশনা দিয়েছেন।
ব্যয় কত
দেশে মোট আইএইচটির সংখ্যা ২৩। এর মধ্যে ১৫টি গত ছয় বছরের মধ্যে নির্মাণ করা হয়। এগুলো নির্মাণে মোট কত ব্যয় হয়েছে, তার হিসাব পাওয়া যায়নি। কারণ, কোনো একক প্রকল্পের অধীনে এগুলো নির্মাণ করা হয়নি। তবে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, একেকটি নির্মাণে গড় ব্যয় প্রায় ৩৫ কোটি টাকা। সে হিসাবে ১৫টি আইএইচটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৫২৫ কোটি টাকার মতো।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, একেকটি আইএইচটি পরিচালনায় গড়ে প্রশিক্ষক ও কর্মচারী মিলিয়ে ১৬৫ জন করে জনবল প্রয়োজন। সে হিসাবে ১৫টি আইএইচটিতে ২ হাজার ৪৭৫ জন জনবল লাগবে। আইএইচটিগুলোতে পদ সৃষ্টি ও জনবল নিয়োগের অনুরোধ জানিয়ে গত বছর জুনে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেয় স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগ। তবে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় বিভিন্ন তথ্য জানতে চায়। তথ্য জানানোর পর গত মার্চে মাত্র ৫০ জনকে নিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের যুগ্ম সচিব আবদুস সালাম খান গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, আইএইচটিগুলো বিভিন্ন সময় বিভিন্ন নির্দেশনার মাধ্যমে হয়েছে। কোনোটি প্রকল্পের মাধ্যমে, কোনোটি কর্মসূচির আওতায়। তিনি বলেন, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ বিভাগের দায়িত্ব অবকাঠামো নির্মাণ করা। জনবল নিয়োগের দায়িত্ব এ বিভাগের আওতায় নেই।
নিয়ম হলো সরকারি প্রতিষ্ঠানে নতুন পদ সৃজন করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। সে জন্য অর্থ বিভাগের অনুমোদন লাগে। পদ সৃজনের পর সেখানে জনবল নিয়োগ করে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান। এ বিষয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব মেজবাহ্উদ্দিন চৌধুরী গত রাতে প্রথম আলোকে বলেন, জনবল নিয়োগের একটি প্রক্রিয়া আছে। প্রস্তাব আসার পরে পর্যালোচনা করে তা অর্থ বিভাগে পাঠানো হয়। তারা পর্যালোচনার পর প্রস্তাব সচিব কমিটিতে উপস্থাপন করা হয়। এটি লম্বা প্রক্রিয়া। তিনি বলেন, অনেক সময় দেখা যায়, মন্ত্রণালয় থেকে অসম্পূর্ণ প্রস্তাব আসে। যেসব তথ্য চাওয়া হয়, তা পাওয়া যায় না। তখন আবার তথ্য চাওয়া হয়। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতেই সময় লাগে।
অবকাঠামো নির্মাণের আগে জনবল পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয় কি না জানতে চাইলে মেজবাহ্উদ্দিন চৌধুরী বলেন, এটি নির্ভর করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রকল্পের পরিচালকের ওপর। তাঁরা কতটা সমান্তরালভাবে কাজটি করছেন, তার সঙ্গে বিষয়টি জড়িত। তিনি বলেন, ভবন নির্মাণের পর জনবলের অভাবে খালি পড়ে থাকার ঘটনা ঘটতে পারে, তবে আগের চেয়ে কমেছে।
গাজীপুর: দুজন প্রশিক্ষক দিয়ে ‘চলে না’
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ১৫টি আইএইচটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে মাদারীপুর সদর, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, সাতক্ষীরা, গাজীপুর, মুন্সিগঞ্জ, নোয়াখালী, নওগাঁ, সুনামগঞ্জ, মাদারীপুরের শিবচর, ময়মনসিংহ, কুড়িগ্রাম এবং জয়পুরহাট সদর ও আক্কেলপুরে। গত এক মাসে গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ, নোয়াখালী, সুনামগঞ্জ ও মাদারীপুরের আইএইচটিতে গিয়ে এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে প্রতিষ্ঠানগুলোর দুরবস্থার কথা জানা যায়।
সরেজমিনে গত ২৮ মার্চ দেখা যায়, গাজীপুর আইএইচটির একাডেমিক ভবনের বেশির ভাগ কক্ষ অব্যবহৃত। আসবাবে ধুলাবালুর স্তর জমেছে। ক্যাম্পাসের পরিবেশ অপরিচ্ছন্ন। প্রশিক্ষকেরা জানান, শুধু একাডেমিক ভবন নয়, অন্য ভবনগুলোর বেশির ভাগ জায়গাই খালি পড়ে থাকে।
গাজীপুর আইএইচটির অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আশরাফুল হক (সংযুক্তি) প্রথম আলোকে বলেন, মাত্র দুজন প্রশিক্ষক দিয়ে অত বড় একটি প্রতিষ্ঠান চলতে পারে না। জনবলের কোনো পদ সৃষ্টি করা হয়নি। ফলে সেখানে যাঁরা আছেন, তাঁরা সবাই অন্য প্রতিষ্ঠানে নিয়োগপ্রাপ্ত। গাজীপুরে আছেন সংযুক্ত হিসেবে। তিনি বলেন, শ্রেণিকক্ষের প্রয়োজনীয় সামগ্রী নেই। জোড়াতালি দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি চালাতে হচ্ছে।
মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর ও নোয়াখালী
মানিকগঞ্জে আইএইচটির স্থাপনা নির্মাণ করার পর স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের কাছে হস্তান্তর করা হয় ২০২১ সালের ২৯ নভেম্বর। সেখানে চারতলার একটি একাডেমিক ভবন, ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য দুটি আলাদা হোস্টেল, প্রশিক্ষক ও কর্মচারীদের আবাসনের জন্য তিনটি ভবন, অধ্যক্ষের বাসভবন, একটি গ্যারেজ ও বিদ্যুতের উপকেন্দ্রের ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্থাপনা নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ৩৫ কোটি টাকা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চলতি বছর থেকে সেখানে শিক্ষার্থী ভর্তি শুরু হয়েছে। দুটি অনুষদে ৩৮ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। আগামী ২ মে থেকে প্রতিষ্ঠানটিতে শিক্ষা কার্যক্রম শুরুর কথা। তবে জনবল ও শিক্ষা উপকরণের অভাবের কথা জানিয়েছেন প্রশিক্ষকেরা।
মানিকগঞ্জ পৌরসভার হিজুলী মৌজায় আইএইচটির ক্যাম্পাস। গত ২৮ মার্চ সেখানে গিয়ে পাওয়া যায় প্রভাষক প্রমিতী সরকারকে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সেখানে অস্থায়ী ভিত্তিতে একজন অধ্যক্ষ ও তিনজন প্রভাষককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। তবে কোনো কর্মকর্তা ও কর্মচারী নেই। স্থাপনার নিরাপত্তার জন্য একজন নৈশপ্রহরী রাখা হয়েছে। প্রশিক্ষকদের পকেট থেকে তাঁকে সামান্য বেতন দেওয়া হয়।
মাদারীপুরের আইএইচটি উদ্বোধন করা হয় ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। সেখানে মোট ৯টি ভবন রয়েছে। স্থানীয় স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের কার্যালয় সূত্র জানায়, ভবনগুলো নির্মাণে ব্যয় হয় প্রায় ৩৩ কোটি টাকা। চলতি বছর সেখানে তিনটি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ৮৯ শিক্ষার্থী।
মাদারীপুর আইএইচটিতে একজন অধ্যক্ষ, দুজন প্রশিক্ষক ও কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে অস্থায়ীভাবে। প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হাবিবুর রহমান (সংযুক্তি) প্রথম আলোকে বলেন, ‘একাডেমিক কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যে লোকবল দরকার, তা আমাদের এখানে নেই। মন্ত্রণালয়ে চাহিদাপত্র পাঠানো হয়েছে।’
একই চিত্র নোয়াখালীতে। সেখানকার আইএইচটিতে স্থাপনা আছে সাতটি। এ বছর প্রতিষ্ঠানটিতে ৪১ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছে। সূত্র জানায়, সেখানে কোনো প্রশিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। শুধু একজন অধ্যক্ষকে সংযুক্তি হিসেবে পাঠানো হয়েছে। শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হয়নি।
নোয়াখালী আইএইচটির সহকারী পরিচালক বিদ্যুৎ কুমার বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, তিনি আশা করেন, আগামী মাস শেষে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে।
গোপালগঞ্জে ধার করা প্রশিক্ষক
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় নির্মিত আইএইচটিতে ভবন রয়েছে ৯টি। এগুলো নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৪০ কোটি টাকা। চার শিক্ষাবর্ষে সেখানে ২৭০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি হয়েছেন। চলতি বর্ষে দুটি বিভাগে ভর্তি হয়েছেন ৫৭ জন শিক্ষার্থী। এত দিনেও সেখানে স্থায়ী জনবল নিয়োগ দেওয়া হয়নি।
প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ প্রেমানন্দ মন্ডল (সংযুক্তি) প্রথম আলোকে বলেন, তিনিসহ সেখানে চারজন প্রশিক্ষক রয়েছেন, যাঁদের দুজন টুঙ্গিপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের চিকিৎসক, একজন গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের। তিনি নিজে সংযুক্তিতে সেখানে গেছেন।
সুনামগঞ্জে কাজ বন্ধ
সুনামগঞ্জে আইএইচটি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০২১ সালের জানুয়ারিতে। সময়মতো কাজ শেষ হয়নি। উল্টো এক বছর ধরে নির্মাণকাজ বন্ধ। অসমাপ্ত অবস্থায় পড়ে আছে আটটি ভবন।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ পৌর শহরের আলীপাড়া এলাকায় ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে তিন একর জমির ওপর আইএইচটি ক্যাম্পাস নির্মাণকাজ শুরু হয়। ব্যয় হচ্ছে প্রায় ৩৬ কোটি টাকা। গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কাজ বন্ধ আছে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, নির্মাণকাজে অনিয়মের কারণে আপত্তি জানানো হয়েছিল। নিম্নমানের নির্মাণকাজের কারণে নবনির্মিত সীমানাপ্রাচীর ভেঙে পড়েছে। এ কারণে কাজ বন্ধ করে দিয়েছে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর। অধিদপ্তরের সুনামগঞ্জ কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার শীল প্রথম আলোকে বলেন, শিগগিরই আবার কাজ শুরু হবে। স্থানীয় লোকজনের কিছু কিছু বিষয়ে আপত্তি আছে। সব বিষয় মিলিয়েই তদন্ত হচ্ছে।
‘প্রবণতাই হলো ভবন তৈরি’
প্রথম আলোতে গত ১০ নভেম্বর প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে উঠে আসে স্বাস্থ্য খাতে ২৩৩টি স্থাপনা অব্যবহৃত রয়েছে। শুধু স্বাস্থ্য খাত নয়, অব্যবহৃত স্থাপনা রয়েছে আরও অনেক খাতে। উপজেলা পর্যায়ে মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তৈরি করা ৪০৬টি ভবন, রাজধানীর বেইলি রোডে পার্বত্য চট্টগ্রাম কমপ্লেক্স, মিরপুরে জাতীয় প্রতিবন্ধী উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের ১৫ তলা ভবন, পুরান ঢাকার জনসন রোডে ঢাকা জেলা পরিষদের ২০ তলা টাওয়ার, খাগড়াছড়ি সরকারি কলেজের ছাত্রীনিবাস—এসব ভবন অব্যবহৃত থাকার প্রতিবেদন সাম্প্রতিক কালে প্রকাশিত হয় প্রথম আলোতে। অব্যবহৃত স্থাপনার তালিকায় সরকারি কর্মকর্তাদের আবাসিক ভবনও রয়েছে।
আইএইচটির ভবন নির্মাণ ও জনবল নিয়োগ না দেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) মহাসচিব ইহতেশামুল হক চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই দেখা যাচ্ছে স্বাস্থ্য খাতে প্রবণতা হলো ভবন তৈরি করা। কিন্তু প্রকল্পে ভবন তৈরির সঙ্গে আসবাব ও সরঞ্জাম কেনা, জনবল নিয়োগের বিষয়টি থাকতে হয়। তাহলেই একটি স্থাপনা স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়। তিনি বলেন, ওখান থেকে একজন এনে, আরেক জায়গা থেকে দুজন এনে কোনো প্রতিষ্ঠান তো চলতে পারে না। তাহলে তো প্রতিষ্ঠানের মান থাকবে না।
[প্রতিবেদনটি তৈরিতে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন নিজস্ব প্রতিবেদক, নোয়াখালী ও সুনামগঞ্জ এবং প্রতিনিধি, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, গোপালগঞ্জ ও মাদারীপুর]