২৮ অক্টোবর নিরাপত্তার ‘ঘাটতি’ দেখা দিলেই শক্তি প্রয়োগ করবে পুলিশ
মহাসমাবেশের দিন ঢাকার প্রবেশপথসহ রাজধানীতে ১০ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হবে।
২৮ অক্টোবর ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশ ঘিরে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। রাজধানীর প্রবেশপথগুলোসহ মহাসমাবেশ ঘিরে মোতায়েন করা হবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ হাজারের বেশি সদস্য। এ ছাড়া মহাসমাবেশের দিন জলকামান, সাঁজোয়া যান, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে প্রস্তুত থাকবে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সংস্থাটি বলছে, যখনই নিরাপত্তার ঘাটতি দেখা দেবে, তখনই শক্তি প্রয়োগ করা হবে।
এরই মধ্যে ২৮ অক্টোবরের মহাসমাবেশ রাজনীতিতে উত্তাপ ছড়িয়েছে। বিএনপি বলেছে, ঢাকার প্রবেশমুখে পুলিশের তল্লাশি, বাসাবাড়িতে অভিযান, ‘গায়েবি’ মামলায় গ্রেপ্তার—এসব কিছু বিবেচনায় নিয়েই তারা মহাসমাবেশ আয়োজনের প্রস্তুতি নিচ্ছে। দলটি মনে করে, নিরাপত্তার ঘাটতির অজুহাতে পুলিশের শক্তি প্রয়োগের যে চিন্তা, তা মূলত সরকার পতনের চলমান আন্দোলন দমনের কৌশলের অংশ।
অপর দিকে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ বলেছে, মহাসমাবেশের নামে বিএনপিকে ঢাকায় বসতে দেওয়া হবে না।
ঢাকার প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মহাসমাবেশের দিন পুলিশ জলকামান, সাঁজোয়া যান, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে প্রস্তুত থাকবে। প্রবেশপথগুলোতে ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পর থেকে গণপরিবহনে তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহভাজনদের আটক করা হবে।
ডিএমপি সূত্র জানায়, বিএনপির মহাসমাবেশের দিন ঢাকার প্রবেশপথ গাবতলী, উত্তরার আবদুল্লাহপুর, নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড, শ্যামপুরের পোস্তগোলা সেতু, পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতুসহ রাজধানীতে ১০ হাজারের বেশি পুলিশ মোতায়েন করা হবে। ওই দিন ডিএমপির দাঙ্গা দমন বিভাগ, থানা-পুলিশ ও মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) মূল দায়িত্বে থাকবে। এ ছাড়া ডিএমপির বিশেষায়িত দল সোয়াটের সঙ্গে বোমা উদ্ধার ও নিষ্ক্রিয়করণ দল প্রস্তুত থাকবে।
মহাসমাবেশ সামনে রেখে এখন থেকে বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা নজরদারি করছে বলে ওই সূত্র জানায়।
নিরাপত্তার বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, পুলিশ মহাসমাবেশের আগে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তাচৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালাবে, যাতে সন্ত্রাসীরা অস্ত্র ও বিস্ফোরক নিয়ে ঢাকায় ঢুকতে না পারে। নগরবাসীর নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
বিএনপির নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এ তথ্য সত্য নয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামির বাইরে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। দাগি আসামি ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
প্রস্তুত থাকবে জলকামান, সাঁজোয়া যান
নিরাপত্তা প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকার প্রবেশপথগুলোতে নিরাপত্তাচৌকি বসিয়ে তল্লাশি চালানোর পাশাপাশি অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজনদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। অস্ত্রধারীরা যেন ঢাকায় ঢুকতে না পারে, সে জন্য পূজা শেষে নিরাপত্তাচৌকিতে তল্লাশি এবং ঢাকার হোটেল ও মেসে অভিযান জোরদার করা হবে। ঢাকার প্রবেশপথসহ গুরুত্বপূর্ণ স্থানে মহাসমাবেশের দিন পুলিশ জলকামান, সাঁজোয়া যান, কাঁদানে গ্যাস, সাউন্ড গ্রেনেড নিয়ে প্রস্তুত থাকবে। প্রবেশপথগুলোতে ২৭ অক্টোবর সন্ধ্যার পর থেকে গণপরিবহনে তল্লাশি চালিয়ে সন্দেহভাজনদের আটক করা হবে।
ডিএমপির কর্মকর্তারা বলেন, বিএনপি নেতা-কর্মীদের কোনো অবস্থাতেই প্রবেশপথের রাস্তায় বসতে দেওয়া হবে না। তাঁরা রাস্তায় বসে পড়লে শক্তি প্রয়োগ করে সরিয়ে দেওয়া হবে। যখনই নিরাপত্তার ঘাটতি দেখা দেবে, তখনই শক্তি প্রয়োগ করা হবে। প্রয়োজন রাবার বুলেট ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে।
গতকাল রোববার রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, বিএনপির নেতা–কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে এ তথ্য সত্য নয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানার আসামির বাইরে কাউকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না। দাগি আসামি ও অপরাধীদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত থাকবে।
ওই কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ কী কী ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেবে, তা সমাবেশের আগমুহূর্তে চূড়ান্ত করা হবে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২৮ অক্টোবরের বিএনপির মহাসমাবেশ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত উচ্চপর্যায়ের একটি দল ঢাকার অদূরে ৩০০ ফুট সংলগ্ন পুলিশ আবাসিক সোসাইটিতে (পিওএইচএস) রাজধানীর প্রবেশমুখে নিরাপত্তা, পুলিশ পাহারার ব্যবস্থা কেমন হবে, সে বিষয়ে আলোচনা করে। সেখানে বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নজরদারি করার বিষয়েও সিদ্ধান্ত হয়।
আলোচনায় অংশ নেওয়া পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, মহাসমাবেশে অংশ নিতে বিএনপির নেতা–কর্মীদের একটি বড় অংশ ইতিমধ্যে ঢাকায় ঢুকেছেন। প্রতিদিনই বিএনপির নেতা–কর্মীরা আসছেন। বিএনপির মহাসমাবেশ সামাল দেওয়ার বিষয়ে সম্প্রতি পিওএইচএসে পুলিশের প্রস্তুতি মহড়া হয়েছে।
ঢাকা জেলার পুলিশ সুপার মো. আসাদুজ্জামান গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, দুর্গাপূজা উপলক্ষে ঢাকা জেলার বিভিন্ন স্থান ও রাজধানীতে ঢোকার প্রবেশমুখে নিরাপত্তাচৌকি বসিয়ে তল্লাশি করা হচ্ছে, যাতে কেউ অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলার বিঘ্ন ঘটাতে না পারে। এমনিতেই রাজনৈতিক কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ বাড়তি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়। মহাসমাবেশ সামনে রেখে পুলিশ সতর্ক অবস্থায় আছে। ওই কর্মসূচি ঘিরে পুলিশ কী কী ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নেবে, তা সমাবেশের আগমুহূর্তে চূড়ান্ত করা হবে।
স্থান নির্ধারণ করে দেবে ডিএমপি
মহাসমাবেশের অনুমতি চেয়ে শনিবার নয়াপল্টনে ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমানের কাছে চিঠি দিয়েছে বিএনপি। জানতে চাইলে হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, তারা (বিএনপি) নয়াপল্টনে তাদের অফিসের সামনে ২৮ অক্টোবর বেলা দুইটায় সমাবেশ করার জন্য আবেদন করেছে। তাদের সমাবেশের আওতা, কর্মী-সমর্থকদের উপস্থিতি জেনেবুঝে সমাবেশের জন্য একটি স্থান নির্ধারণ করে দেওয়া হবে। তিনি আশা করছেন, তারা (বিএনপি) সেখানেই সমাবেশ করবে।