এক যুগ পর সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিবিআই) দেওয়া হয়েছে। মামলার আগের তদন্ত সংস্থা র্যাবের কাছ থেকে মামলার নথিপত্র বুঝে নিয়েছে পিবিআই। সংস্থাটি এরই মধ্যে তদন্ত শুরু করেছে।
মামলা তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছেন পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আজিজুল হক। তিনি আজ বুধবার প্রথম আলোকে বলেন, ‘র্যাবের কাছ থেকে মামলাসংশ্লিষ্ট সব কাগজপত্র বুঝে পেয়েছি। তদন্তকাজ নতুন করে শুরু করেছি।’
মামলার তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন সাগরের মা সালেহা মনির। তিনি বলেন, ‘আমি আগে থেকেই বলছিলাম, মামলাটির তদন্তের দায়িত্ব পিবিআইকে দেওয়া হোক। আমি আশা করি, পিবিআই আমার ছেলে ও পুত্রবধূর হত্যাকারীদের ধরতে পারবে।’
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর গত ২৩ অক্টোবর আলোচিত এ মামলার তদন্তে চার সদস্যের টাস্কফোর্স গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এর আহ্বায়ক করা হয় পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক ও পিবিআইয়ের প্রধান মো. তওফিক মাহবুব চৌধুরীকে।
পুলিশ-সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, টাস্কফোর্স গঠনের পর ৪ নভেম্বর র্যাবের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. আনোয়ার হোসেন ভূঞা ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতকে লিখিতভাবে জানান, সাগর-রুনি হত্যা মামলার তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে পিবিআইকে। মামলার তদন্ত কর্মকর্তাকে কেস ডকেটসহ সব কাগজপত্র ৪ নভেম্বর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে।
পরে ৬ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আজিজুল হক ঢাকার সিএমএম আদালতকে লিখিতভাবে জানান, হাইকোর্টের রিট পিটিশনের আদেশ অনুযায়ী গঠিত টাস্কফোর্সের তদন্তের সুবিধার্থে র্যাবের কাছ থেকে মামলাটি পিবিআইকে হস্তান্তর করা হয়। তিনি ৪ নভেম্বর মামলার কেস ডকেট (১ থেকে ৩২০১ পাতা) গ্রহণ করেছেন।
২০১২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর পশ্চিম রাজাবাজারের ভাড়া বাসায় খুন হন সাংবাদিক দম্পতি সাগর সরওয়ার ও মেহেরুন রুনি। সাগর সে সময় মাছরাঙা টিভিতে এবং রুনি এটিএন বাংলায় কর্মরত ছিলেন।
সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানায় মামলা করেছিলেন রুনির ভাই নওশের আলম। প্রথমে মামলাটি তদন্ত করছিল শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ। চার দিন পর মামলার তদন্তভার ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগের (ডিবি) কাছে হস্তান্তর করা হয়। তবে তদন্তের দায়িত্ব পাওয়ার ৬২ দিনের মাথায় ২০১২ সালের ১৮ এপ্রিল হাইকোর্টে ব্যর্থতা স্বীকার করে ডিবি। এরপর আদালত র্যাবকে মামলা তদন্তের নির্দেশ দেন। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার দিন ধার্য ছিল। কিন্তু প্রতিবেদন জমা দেয়নি র্যাব। সব মিলিয়ে প্রতিবেদন জমার তারিখ ১১২ বার পেছানো হয়।
অজ্ঞাতপরিচয় দুই সন্দেহভাজন শনাক্ত হয়নি
২০১৭ সালের ১৫ মার্চ র্যাবের পক্ষ থেকে ঢাকার সিএমএম আদালতে সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী সাগর-রুনির ছেলে মাহির সরওয়ারের জবানবন্দি রেকর্ড করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে আটজনকে। র্যাব আরও জানিয়েছিল, তখন ঘটনাস্থল থেকে পাওয়া ডিএনএ নমুনা পাঠানো হয় যুক্তরাষ্ট্রের ফরেনসিক ল্যাবে। ডিএনএ প্রতিবেদনে ঘটনাস্থলে অজ্ঞাত দুই পুরুষের উপস্থিতির প্রমাণ পাওয়া যায়। তাঁদের খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।
আদালতসংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, সাগর-রুনি হত্যা মামলায় যে আটজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল, তাঁদের মধে৵ পাঁচজন অন্য একটি খুনের মামলার আসামি। তাঁদের বিরুদ্ধে চুরি ও ডাকাতির অভিযোগও আছে। তাঁরা এখনো কারাগারে। বাকি তিনজনের একজন রুনির পূর্বপরিচিত তানভীর আহমেদ, যিনি জামিনে রয়েছেন। ভাড়া বাসার নিরাপত্তারক্ষী এনামুল কারাগারে ও পলাশ রুদ্র পাল জামিনে রয়েছেন।