চট্টগ্রামে জলাবদ্ধতা ও সড়ক নির্মাণ: আর্থিক সামর্থ্য নেই সিডিএর, কাটছাঁট হচ্ছে দুটি প্রকল্প
জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা। সাড়ে সাত বছরেও কাজ শেষ হয়নি।
চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড প্রকল্পে ব্যয় বৃদ্ধি ৬৪৮ কোটি টাকা। ১৩ বছরেও কাজ শেষ করতে পারেনি সিডিএ।
নির্ধারিত সময়ে প্রকল্প শেষ করতে না পারায় চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রকল্প ব্যয় বেড়েছে কয়েক গুণ। ঋণ ও নিজস্ব তহবিল ব্যয়ের শর্তে সংশোধিত প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছিল সরকার। তাতে রাজি হয়েছিল সিডিএ। এখন আর্থিক সামর্থ্য না থাকায় ওই অর্থ ব্যয় করতে পারছে না সংস্থাটি। ফলে প্রকল্প কাটছাঁট করতে হচ্ছে।
সিডিএর প্রকল্প দুটি হচ্ছে চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন এবং চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড। সংশোধনের পর প্রকল্প দুটিতে ব্যয় বেড়েছে ৩ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকার অনুদান দিচ্ছে ১ হাজার ৭৫৫ কোটি টাকা। বাকি টাকার মধ্যে ঋণ হিসেবে দেবে ১ হাজার ১৪১ কোটি টাকা। নিজস্ব অর্থায়ন থেকে খরচ করতে হবে ৭৫৩ কোটি টাকা।
এই বিপুল পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করা এবং জোগান দেওয়ার মতো আর্থিক সক্ষমতা সিডিএর নেই বলে স্বীকার করেছেন সংস্থার কর্মকর্তারা। তাই ঋণ ও নিজস্ব তহবিলের পরিবর্তে অনুদান দেওয়ার জন্য সরকারকে চিঠি দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কর্মকর্তারা।
নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় দুটি প্রকল্পে ব্যয় বেড়েছে সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা।
আর্থিক সামর্থ্য নেই, অনুদানেই ভরসা
সিডিএর চলমান প্রকল্পগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি অর্থ ব্যয় হচ্ছে জলাবদ্ধতা নিরসন প্রকল্পে। পরিকল্পনা কমিশন ও সিডিএর নথিপত্র অনুযায়ী, ‘চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিরসনকল্পে খাল পুনঃখনন, সম্প্রসারণ, সংস্কার ও উন্নয়ন’ প্রকল্প প্রথম দফায় সংশোধন করায় ব্যয় বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৬২৬ কোটি ৬২ লাখ টাকা। শুরুতে ব্যয় ছিল ৫ হাজার ৬১৬ কোটি টাকা। তিন বছরের কাজ সাত বছরেও শেষ করতে না পারায় একলাফে ব্যয় বৃদ্ধি পায় ৩ হাজার ১০ কোটি টাকা। বর্ধিত ব্যয়ের মধ্যে অর্ধেক ১ হাজার ৫০৩ কোটি টাকা সরকার দিতে রাজি হয়। বাকি ১ হাজার ৫০৬ কোটি টাকার মধ্যে ঋণ হিসেবে ৭৫৩ কোটি টাকা দেবে সরকার। আর ৭৫৩ কোটি টাকা সিডিএর নিজস্ব তহবিল থেকে দিতে হবে।
প্রায় সাড়ে সাত বছর পার হলেও এখন পর্যন্ত প্রকল্পের অগ্রগতি হয়েছে ৭২ শতাংশ। প্রকল্প বাস্তবায়নের প্রায় শেষের দিকে এসে প্রতিবন্ধকতা ও সমস্যা চিহ্নিত করেছে সিডিএ। সেখানে বলা হয়েছে, সিডিএর যে আর্থিক সামর্থ্য, তাতে সরকারি ঋণ ও নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। তাই ১ হাজার ৫০৬ কোটি ৪৮ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে অনুদান প্রয়োজন।
সিডিএর তথ্য অনুযায়ী, প্রকল্পের আওতায় ৩৬টি খালের মধ্যে ১৭টির কাজ পুরোপুরি শেষ হয়েছে। ৫টি খালের কাজ শেষ হয়েছে ৮৫ শতাংশ। বাকি খালগুলোতে কাজ চলছে। অর্থ ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ৩০০ কোটি টাকা।
কাটছাঁট হচ্ছে প্রকল্প
১৩ বছর ধরে কাজ চললেও এখনো পর্যন্ত পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি চট্টগ্রাম সিটি আউটার রিং রোড। নগরের পতেঙ্গা থেকে সাগরিকা পর্যন্ত সমুদ্রপাড়ে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সড়ক নির্মাণের এই প্রকল্প নেওয়া হয় ২০১১ সালে। মূল সড়কের কাজ শেষে যান চলাচল শুরু হয়েছে। তবে প্রকল্পের আওতায় নতুন নতুন কাজ যুক্ত করা হচ্ছে। সর্বশেষ চতুর্থ দফায় প্রকল্প সংশোধন করা হয়েছে। গত বছরের ৬ জুন সংশোধিত প্রকল্পের অনুমোদন দেয় একনেক। মূলত টানেলের পতেঙ্গা প্রান্তের মোড়ে যান চলাচল নির্বিঘ্ন করার জন্য উড়ালসড়ক, সড়কের প্রশস্ততা বাড়ানোর কাজ ছিল সংশোধিত প্রকল্পে।
২০১১ সালে মূল প্রকল্প অনুমোদনের সময় ব্যয় ধরা হয়েছিল ৮৫৬ কোটি ২৮ লাখ টাকা। তৃতীয় দফা সংশোধনের পর প্রকল্প ব্যয় দাঁড়ায় ২ হাজার ৬৭৫ কোটি টাকায়। তবে এ টাকায় কাজ শেষ করতে পারেনি সিডিএ। নতুন করে কাজ যুক্ত করা হয়। তখন ৬৪৮ কোটি টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ব্যয় দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩২৪ কোটি ১৫ লাখ টাকায়। চতুর্থ দফায় বৃদ্ধি পাওয়া টাকার মধ্যে ৩৮৮ কোটি টাকা ঋণ হিসেবে দিতে রাজি হয় সরকার, কিন্তু ঋণ নিয়ে তা পরিশোধের সামর্থ্য নেই সিডিএর। কেননা, আউটার রিং রোড টোলমুক্ত সড়ক। এখান থেকে আয়ের কোনো সুযোগ নেই। আবার নিজস্ব তহবিলেও টাকা নেই। এখন জমি অধিগ্রহণ, সড়কের দৈর্ঘ্যসহ বিভিন্ন কাজের পরিমাণ কমানোর চেষ্টা চলছে।
সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস প্রথম আলোকে বলেন, সিডিএর দুটি প্রকল্পের বিপরীতে ঋণ ও নিজস্ব তহবিলের শর্ত দিয়েছিল আগের সরকার, কিন্তু তা পরিশোধের আর্থিক সামর্থ্য সিডিএর নেই। তাই ঋণের পরিবর্তে অনুদান দেওয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে প্রস্তাব করবেন তাঁরা।