ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষার খসড়া দিয়েও সরিয়ে ফেলল আইসিটি বিভাগ
সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ তৈরির মধ্যেই ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষার খসড়া নিয়ে কাজ শুরু করেছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগ। আট দিন আগে এর একটি খসড়া আইসিটি বিভাগের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে সর্বসাধারণের মতামত চাওয়া হয়। তবে মতামত দেওয়ার তারিখ শেষ হওয়ার আগেই তা ওয়েবসাইট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
১৯ জানুয়ারি আইসিটি বিভাগের ওয়েবসাইটে ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫’–এর খসড়া প্রকাশ করে সবার মতামত চাওয়া হয়। ২৮ জানুয়ারির মধ্যে এই খসড়ার ওপর মতামত চাওয়ার সময় নির্ধারণ করা ছিল। আজ সোমবার ওয়েবসাইটে ঢুকে খসড়াটি দেখা যায়নি।
এ বিষয়ে আইসিটি বিভাগের নীতি পরামর্শক (সমন্বয় ও সংস্কার) ফয়েজ আহমদ তৈয়্যব আজ প্রথম আলোকে বলেন, খসড়া নিয়ে কাজ চলছে। এটি আরও পরিপক্ব পর্যায়ে গেলে অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করা হবে।
ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকার পাঁচ বছর আগে উপাত্ত সুরক্ষা আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছিল। ২০২২ সালের মার্চ মাসে তারা প্রথমবার খসড়া প্রকাশ করে মতামত চেয়েছিল। এরপর একাধিকবার সে খসড়ার সংশোধনী হয়। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের আগে ২০২৩ সালের নভেম্বরে মন্ত্রিসভায় ‘ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষা আইন ২০২৩’ খসড়ার নীতিগত অনুমোদনও হয়েছিল। আওয়ামী লীগ সরকার সর্বশেষ ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে এই আইনের আরও একটি খসড়া করেছিল।
বিগত সরকারের সময়ে উপাত্ত সুরক্ষা আইনের খসড়া নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছিল। জাতিসংঘ থেকে শুরু করে দেশি–বিদেশি মানবাধিকার সংগঠন, নাগরিক সংগঠন, ব্যবসায়ীরা আপত্তি জানিয়েছিল। সে খসড়ায় নাগরিকদের উপাত্তে নজরদারির সুযোগ, মানবাধিকর লঙ্ঘন, ক্ষমতার অপব্যবহার, নির্বাহী বিভাগের ব্যাপক ক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। পরবর্তী সময়ে খসড়ায় ফৌজদারি অপরাধ বাদ দিয়ে শুধু দেওয়ানি অপরাধের বিধান রেখে বেশি কিছু পরিবর্তন আনা হয়। তবে সেটি নিয়েও সমালোচনা ছিল।
যে খসড়াটি সর্বশেষ প্রকাশিত হয়েছে তাতে দেখা যায়, গত বছরের এপ্রিলে যে খসড়াটি ছিল তার সঙ্গে সামান্য কিছু পরিবর্তন ছাড়া সবই এক।
উপাত্ত স্থানান্তরকরণ নীতিতে আওয়ামী লীগ সরকার তাদের গত এপ্রিলের খসড়ায় বলেছিল, সরকার কর্তৃক নির্ধারিত শ্রেণিকৃত ব্যক্তিগত উপাত্ত বিধি দ্বারা নির্ধারিত পদ্ধতিতে বাংলাদেশে মজুত করতে হবে। তবে ব্যক্তিগত উপাত্ত সুরক্ষার নীতির বিধান সাপেক্ষে আন্তরাষ্ট্রীয় বাণিজ্য, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক, দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক বা বহুপক্ষীয় চুক্তি, কনভেনশন বা ফোরাম সদস্যরাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ পারস্পরিক সমতার নীতির আওতায় যেকোনো সদস্যরাষ্ট্র থেকে ব্যক্তিগত উপাত্ত দেশে এবং দেশ থেকে অন্য দেশে স্থানান্তর করা যাবে। সম্প্রতি সরিয়ে ফেলা খসড়ায়ও একই বিধান ছিল।
এ বিষয় নিয়ে আরও কাজ করা হবে বলে সম্প্রতি প্রথম আলোকে জানান আইসিটি বিভাগের নীতি পরামর্শক ফয়েজ আহমদ। তিনি বলেন, উপাত্ত ও ব্যক্তিগত উপাত্তের ব্যাখ্যা ঠিক করা হবে। কোন উপাত্ত ব্যক্তিগত, কোনটা ব্যক্তিগত নয় তার পার্থক্য করা হবে। উপাত্তের গোপনীয়তার স্তর ভাগ করা হবে। যেমন রাষ্ট্রীয়, ব্যক্তিগত, ব্যবসায়িক, গোপনীয়—এভাবে ভাগ হবে। পাশাপাশি সরকারের গোপনীয়তার স্তরও ব্যাখ্যা করার বিষয় আসবে। যেগুলো সর্বোচ্চ গোপনীয়, নিরাপত্তাসংক্রান্ত উপাত্ত, ব্যক্তিগত উপাত্ত, সেগুলোর ক্ষেত্রে উপাত্ত স্থানীয়করণের বিষয় আসবে। তিনি আরও বলেন, অতি গোপনীয় স্তরের উপাত্ত দেশে রাখার বিধান হবে। সেখানে বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাংলাদেশে ‘ক্লাউড’ করতে হবে। বাকিগুলোর ওপর তাদের স্বাধীনতা থাকবে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মালয়েশিয়ার ইউনিভার্সিটি অব মালয়ার আইন ও উদীয়মান প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ এরশাদুল করিম প্রথম আলোকে বলেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে খসড়া করতে হবে। উপাত্ত সুরক্ষার মতো বিষয় নিয়ে কাজ করতে হলে অনেক গবেষণা দরকার। এখানে আইন কমিশনকে যুক্ত করা যেতে পারে।