৫০ হাজার টাকার চেক পেলেন আমিরাত থেকে ফেরত ১৮৬ কর্মী
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করায় সংযুক্ত আরব আমিরাত (ইউএই) থেকে ফেরত কর্মীদের আজ শনিবার আর্থিক সহায়তার চেক দেওয়া হয়েছে। ৫০ হাজার টাকা করে নগদ সহায়তার চেক পেলেন প্রবাসফেরত ১৮৬ কর্মী।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে একাত্মতা ঘোষণা করে মিছিল করায় আরব আমিরাতের আইন অনুযায়ী এসব প্রবাসী শ্রমিককে সাজা দেওয়া হয়। পরে অন্তর্বর্তী সরকারের কূটনৈতিক তৎপরতায় কারামুক্ত হয়ে তাঁরা দেশে ফেরেন। আজ শনিবার ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মিলনায়তনে তাঁদের চেক দেওয়া হলো।
প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, দেশে ফেরত কর্মীদের আবার বিদেশে চাকরি দেওয়া তাঁদের ওপর নির্ভর করে না। তবুও চেষ্টা করা হবে। বোয়েসেলের মাধ্যমে সরকারিভাবে কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে কারামুক্ত কর্মীরা সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পাবেন। প্রবাসীকল্যাণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে ইতিমধ্যে ৬০ জন যোগাযোগ করেছেন। কর্মীদের পুনর্বাসনে সহজ শর্তে ঋণ দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।
প্রবাসী কর্মীদের অভিনন্দন জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, চাকরি, জীবনের মায়া ত্যাগ করে জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করা দেশপ্রেমের ঘটনা। অনেক কিছু করতে ইচ্ছা করে। তবে একটি দেশ প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, বললেই তো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হবে না। প্রধান উপদেষ্টাকে অনুরোধ করা হবে আরব আমিরাতের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য। তাঁর উদ্যোগেই প্রবাসী কর্মীরা কারামুক্ত হয়েছেন, না হলে অনেককে হয়তো কারাগারে থাকতে হতো।
প্রবাসীকল্যাণ উপদেষ্টা বলেন, প্রবাসীরা দেশের সম্পদ, ভিআইপি। এটি বাস্তবায়নে ইতিমধ্যে তাঁদের জন্য বিভিন্ন কাজ করা হয়েছে, আরও চেষ্টা হচ্ছে।
উপদেষ্টা বলেন, প্রবাসীদের অভিযোগ, কোনো কোনো কূটনীতিকের আচরণ ছিল শত্রুভাবাপন্ন। এভাবে শুধু মুখের কথায় তো সরকারি কর্মচারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায় না। লিখিত অভিযোগ দিলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে। সহায়তার পরিবর্তে কোনো কর্মকর্তা শত্রুতামূলক আচরণ করলে শুধু তাঁর চাকরি যাওয়া নয়, বিচার হওয়া উচিত।
উপদেষ্টার বক্তব্যের পরই শুরু হয় বিশৃঙ্খলা। প্রবাসী কর্মীরা তাঁদের দাবি জানাতে থাকেন। ‘বিচার চাই’, ‘বিচার চাই’ স্লোগান দিতে থাকেন তাঁরা। মাইকে বারবার বলেও তাঁদের থামানো যাচ্ছিল না। একপর্যায়ে আসিফ নজরুল বলেন, আগামীকাল বেলা তিনটায় মন্ত্রণালয়ে প্রবাসীদের অভিযোগ নিয়ে বসা হবে। সাতজনের একটি প্রতিনিধিদল নিয়ে প্রবাসীদের আসার আহ্বান জানান তিনি। অভিযোগ নিয়ে আলোচনা হবে।
এরপর সবাই শান্ত হলে শুরু হয় চেক বিতরণ অনুষ্ঠান। কয়েকজনের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে চেক তুলে দেন উপদেষ্টা। পরে বাকিদের মধ্যে চেক বিতরণ করেন কল্যাণ বোর্ডের কর্মকর্তারা।
এর আগে শুরুতে প্রবাসীদের পক্ষ থেকে বক্তব্যে বিভিন্ন দাবি তুলে ধরেন চট্টগ্রামের খালেদ সাইফুল্লাহ। তিনি বলেন, চার মাস হয়ে গেছে। প্রবাসফেরত কর্মীদের পুনর্বাসনে সরকারি পরিকল্পনা জানাতে হবে। কেউ কেউ বিদেশে যেতে চান, যতজনকে পাঠানো যায়, পাঠাতে হবে। কথায় কথায় ৫৭ জনের কথা আসছে। এর বাইরে আরও অনেকে আছেন। সরকার হয়তো শুরুতে সবার কথা জানত না। এখনো কারাগারে লোক আছেন। তাঁদের মুক্ত করতে হবে।
সাইফুল্লাহ বলেন, আরব আমিরাতে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হবে। অনেকেই ব্যবসা বা ভালো চাকরি ফেলে দেশে এসেছেন। দূতাবাস কর্মকর্তাদের ষড়যন্ত্র ও যোগসাজশে তালিকা করে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। দায়ী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানসচিব মো. রুহুল আমিন। স্বাগত বক্তৃতা করেন ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডের মহাপরিচালক নূর মো. মাহবুবুল হক। সঞ্চালনা করেন উপসচিব মো. সারওয়ার আলম।
আন্দোলনে সংহতি জানিয়ে গত ১৯ জুলাই বিক্ষোভ মিছিল করেন আরব আমিরাতের প্রবাসীরা। দেশটির আইনে অনুমতি ছাড়া এমন বিক্ষোভ করার সুযোগ নেই।
প্রবাসীরা বলছেন, ওই বিক্ষোভের অভিযোগে এখনো দেশটির বিভিন্ন এলাকায় প্রবাসীদের আটক করা হচ্ছে। তবে আরব আমিরাতের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্র বলছে, বর্তমানে কারও আটক থাকার কোনো অভিযোগ তাদের কাছে নেই। শুরুতে একটি মামলায় ৫৭ জনকে আটক করা হয়েছিল। এরপর আরেকটি মামলায় ৫৬ জনকে আটক করা হয়। ধাপে ধাপে তাঁরা ক্ষমা পেয়েছেন। এভাবে কয়েকটি মামলায় আটক ১৮৬ জন ইতিমধ্যে সাধারণ ক্ষমায় মুক্ত হয়ে দেশে ফিরেছেন।