মানসিক স্বাস্থ্যসেবা মানেই ‘মনের বন্ধু’
কয়েক বছর আগেও দেশে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খুব একটা কথা হতো না। মনেরও যে যত্ন নিতে হয়, শরীরের মতো মনও যে অসুস্থ হতে পারে—এসব শুধু কথার কথা হিসেবেই ধরে নেওয়া হতো।
তবে এখন ধীরে ধীরে মানুষ সচেতন হচ্ছে। এই সচেতনতা গড়ে তোলার পেছনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ‘মনের বন্ধু’। সুলভে ও সাশ্রয়ে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে স্টার্টআপটি যাত্রা শুরু করে ২০১৬ সালে। এরই মধ্যে দেশের প্রায় ৮৫ হাজার মানুষ সরাসরি, অনলাইন ও অ্যাপ ব্যবহার করে ‘মনের বন্ধু’র মাধ্যমে সেবা নিয়েছেন। এ ছাড়া গত কয়েক বছরে বিভিন্ন কর্মশালা, প্রশিক্ষণ ও সচেতনতামূলক কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে প্রায় ৪০ লাখ মানুষকে প্রাথমিক মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে সাশ্রয়ী ও সহজলভ্য করতে দারুণ কিছু উদ্যোগ নিয়েছে ‘মনের বন্ধু’। এ বছরের শুরুতেই চালু হয়েছে মনের বন্ধুর অ্যাপ। গুগল প্লে স্টোর থেকে অ্যাপটি ডাউনলোড করে যেকেউ যেকোনো স্থান থেকে কাউন্সেলিং, মেডিটেশন, ইয়োগা, শিশুদের ঘুমপাড়ানি গল্পসহ নানা সেবা নিতে পারবেন। সমাজের সর্বস্তরের জনসাধারণের কাছে মানসম্মত স্বাস্থ্যসেবার বার্তা পৌঁছে দেওয়াই এই স্টার্টআপের লক্ষ্য। কয়েক দিন আগেই দেশে প্রথমবারের মতো তারা চালু করেছে ‘টপ আপ কার্ড’। পোশাকশ্রমিকদের জন্য চালু হওয়া এই কার্ডের মাধ্যমে মাত্র ২৯ থেকে ১০০ টাকা খরচ করেই বিশেষজ্ঞ কাউন্সেলরদের পরামর্শ নেওয়া সম্ভব।
চলতি বছরের শুরুতেই বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফ্যাশন ব্র্যান্ড ‘টমি হিলফিগারে’র আয়োজনে ‘টমি হিলফিগার ফ্যাশন ফ্রন্টিয়ার চ্যালেঞ্জ ২০২২’ পুরস্কার জিতেছে ‘মনের বন্ধু’। বাংলাদেশে তৈরি পোশাকশিল্পের শ্রমিকদের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে মনের বন্ধুকে এ পুরস্কার দেওয়া হয়। পুরস্কারটির অর্থমূল্য ১ লাখ ইউরো (১ কোটি ১০ লাখ টাকার বেশি)। সারা বিশ্বের ফ্যাশনশিল্পের জন্য উদ্ভাবনী ও ভবিষ্যৎমুখী নতুন উদ্যোগগুলোর জন্য ২০১৮ সাল থেকে এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে উপকূলবর্তী মানুষের জন্যও বিশেষায়িত কর্মশালা, সেমিনার, কাউন্সেলিং সেশন আয়োজন করেছে মনের বন্ধু। ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলা ও গ্রামের স্কুল–কলেজে মানসিক স্বাস্থ্যসেবাকে নিয়ে যাচ্ছে মনের বন্ধু।
এ ব্যাপারে মনের বন্ধুর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তৌহিদা শিরোপা বলেন, ‘শুরু থেকেই আমাদের লক্ষ্যটা খুব স্পষ্ট। আমরা সুলভে, সাশ্রয়ে সব শ্রেণির মানুষের কাছে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দিতে চাই। এ কারণেই প্রতিনিয়ত আমরা কাজের পরিসর আরও বড় করছি, আরও বেশি মানুষের কাছে যাচ্ছি। শুধু বাংলাদেশে নয়, সারা পৃথিবীতেই মানসিক স্বাস্থ্যসমস্যা প্রকট হচ্ছে। এটা যেমন শঙ্কার বিষয়, তেমনি একইসঙ্গে আমরা আশাবাদী, কারণ এখন মানুষ সচেতন হচ্ছে। প্রতিদিন বহু মানুষ আমাদের কাছে সেবার জন্য আসছেন, যোগাযোগ করছেন।’
বিশেষজ্ঞ কাউন্সেলর ও ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টদের একটি দল শিরোপার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটিতে কাজ করছেন। মনের বন্ধু প্রতিদিন তাদের ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, লিংকডইন ও টিকটকসহ সব মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কার্যকরী টিপস, লেখা ও ভিডিও প্রচার করছে, যাতে মানুষ সচেতন হতে পারে। এমনকি দেশের বিভিন্ন করপোরেট ও বিশেষায়িত প্রতিষ্ঠান, টেলিকম, ব্যাংক, এনজিও, দাতা সংস্থা, ওষুধ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান, বিমা সংস্থাসহ বিভিন্ন অফিস ও প্রতিষ্ঠানের কর্মীদের মানসিক স্বাস্থ্যসেবা প্রদান, তাঁদের কর্মদক্ষতা বাড়ানো এবং উন্নত কর্মপরিবেশ তৈরির লক্ষ্যে প্রশিক্ষণ কর্মশালা আয়োজন করছে।
মনের বন্ধুর গ্রাহক জরিপে দেখা গেছে, প্রতিষ্ঠানটি থেকে সেবা গ্রহণের পর ৮৪ শতাংশের সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে, ৪০ শতাংশের কাজে কর্মদক্ষতা বেড়েছে, কর্মী ঝরে পড়ার হার কমেছে ২০ শতাংশ আর ৯৫ শতাংশ বলেছে তাঁদের মানসিক স্বাস্থ্যের উন্নতি হয়েছে। মনের বন্ধুর দক্ষ প্রযুক্তি ও কনটেন্ট টিম মিলে নতুন নতুন উদ্ভাবন আনতে নিরন্তর কাজ করছে। সেখানে এআই, মেশিন লার্নিং নিয়েও কাজ চলছে।
মানসিক স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগ হিসেবে মনের বন্ধু এরই মধ্যে ইউএন–উইমেন এশিয়া–প্যাসিফিক অ্যাওয়ার্ড ফর জেন্ডার ইকুয়ালিটি, জিজিইএস ইকো গেম চেঞ্জার অ্যাওয়ার্ড, কমনওয়েলথ ডিজিটাল হেলথ অ্যওয়ার্ড, তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি বিভাগে কল ফর নেশন অ্যাওয়ার্ডসহ বেশ কিছু দেশি–বিদেশি স্বীকৃতি পেয়েছে। এ ছাড়া সম্প্রতি বিশ্বখ্যাত ভোগ বিজনেসের ১০০ উদ্ভাবকদের তালিকায় ‘সাস্টেইনিবিলিটি থট লিডার’ ক্যাটাগরিতে সম্মাননা পেয়েছেন মনের বন্ধুর প্রতিষ্ঠাতা তৌহিদা শিরোপা।