ঈদের আনন্দযাত্রা সড়কেই শেষ, পরিবারের ৫ জনের মধ্যে ৪ জনের মৃত্যু

সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রফিকুল ইসলামের স্ত্রী ও তিন মেয়েছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর মিরপুরের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম শামীম ও লুৎফুন নাহার দম্পতি। ঈদের ছুটিতে তিন মেয়ে প্রেমা, আনিশা ও লিয়ানাকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিলেন কক্সবাজারে। এই যাত্রায় সঙ্গে ছিলেন তাঁদের ভাগনি তানিফা ইয়াসমিনও। পরিকল্পনা ছিল কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে সবাইকে নিয়ে ঘুরবেন এবং ঈদের আনন্দ উপভোগ করবেন।

কিন্তু তাঁদের এই আনন্দভ্রমণ পরিণত হয়েছে বিষাদে। কক্সবাজার যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা গেছেন রফিকুল ইসলামসহ তাঁর পরিবারের পাঁচ সদস্য। আরেকজন মুমূর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। স্বজনেরা বলছেন, ঈদের আনন্দ যে মৃত্যুর মিছিল হয়ে উঠবে, তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি।

গতকাল বুধবার সকালে কক্সবাজার থেকে চট্টগ্রামগামী একটি যাত্রীবাহী বাসের সঙ্গে কক্সবাজারগামী মাইক্রোবাসের সংঘর্ষ হয়। চট্টগ্রামের লোহাগাড়ার চুনতি জাঙ্গালিয়া এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই নিহত হন মাইক্রোবাসে থাকা রফিকুল ইসলাম (৪৮), তাঁর স্ত্রী লুৎফুন নাহার (৩৭), ছোট মেয়ে লিয়ানা ও ভাগনি তানিফা ইয়াসমিন। হাসপাতালে নেওয়ার পর মারা যায় মেজ মেয়ে আনিশাও। এখন টিকে আছেন শুধু বড় মেয়ে প্রেমা। প্রেমা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) লাইফ সাপোর্টে আছেন।

আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডে একটি বেসরকারি হাসপাতালে কথা হয় রফিকুল ইসলামের শ্যালক রবিউল হাসানের (লুৎফুন নাহারের ছোট ভাই) সঙ্গে। তিনি জানান, রাতে চট্টগ্রাম থেকে নিহত স্বজনদের লাশ নিয়ে সকাল সাড়ে আটটার দিকে তাঁরা ওই হাসপাতালে পৌঁছেছেন। এখন লাশ গোসল করিয়ে দাফনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

রবিউল হাসান প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর বোনের পরিবার ঈদের পরদিন (গত মঙ্গলবার) রাতে ঢাকা থেকে বেড়ানোর উদ্দেশ্যে মাইক্রোবাসে কক্সবাজারে রওনা দিয়েছিল। সেখানে তাঁর বড় বোন, ভগ্নিপতি, তিন ভাগনি ও ভগ্নিপতির ভাগনি ছিলেন।

রবিউল হাসান বলেন, ‘গতকাল দুপুর ১২টার দিকে প্রথমে সড়ক দুর্ঘটনার কিছু ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখি। কিন্তু প্রথমে শনাক্ত করতে পারছিলাম না। পরে আরও কিছু ছবি ও ভিডিও দেখতে পাই। বেলা দুইটার দিকে স্থানীয় পুলিশের সহায়তায় বিষয়টি আমরা নিশ্চিত হতে পারি।’

রফিকুল ইসলাম একটি তৈরি পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন আর বোন ছিলেন গৃহিণী। মেজ ভাগনি দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশোনা করত। ছোটটি স্কুলে ভর্তি হয়নি।

আরও পড়ুন
সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত রফিকুল ইসলাম
ছবি: সংগৃহীত

সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন রফিকুলের বড় মেয়ে প্রেমা। সেখানে তাঁর সঙ্গে আছেন তাঁর ছোট মামি জেসমিন রহমান। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘মা–বাবা ও দুই বোনের সবাই মারা গেল। পরিবারের কেউ তো আর বেঁচে নেই। এখন যদি আল্লাহ মেয়েটিকে বাঁচিয়ে রাখে। এটাই কামনা। আর তো কিছু চাওয়ার নেই।’

প্রেমার জন্য সবার কাছে দোয়া চেয়ে চিকিৎসকের বরাতে জেসমিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভাগনির অবস্থা খুবই খারাপ। ঢাকায় যে নিয়ে যাব, সে অবস্থাও নেই। হাসপাতালে ভর্তির পর থেকে এখনো কোনো রেসপন্স করেনি সে।’

দুর্ঘটনায় নিহত রফিকুল ইসলামের ভাগনি তানিফা ইয়াসমিনের ভাই মোহাম্মদ সাকিব। তাঁর বোনকেও বাবর রোডের ওই হাসপাতালে গোসলের জন্য আনা হয়েছে। সেখানেই তিনি প্রথম আলোকে বলেন, মিরপুর আইডিয়াল কলেজ থেকে তাঁর বোন উচ্চমাধ্যমিক শেষ করেছিলেন। ঈদের ছুটিতে মামার পরিবারের সঙ্গে কক্সবাজার বেড়াতে যাচ্ছিলেন। এর আগেই পথে তাঁদের মাইক্রোবাস দুর্ঘটনার কবলে পড়ে।

আরও পড়ুন

হাসপাতালে মিরপুরের বিভিন্ন থানার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীরাও ছিলেন। তাঁরা জানান, তানিফা ইয়াসমিন জুলাই–আগস্ট গণ–অভ্যুত্থানে সক্রিয় ছিলেন। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন মিরপুর মডেল থানার সহমুখপাত্র ছিলেন তানিফা।

গতকালের সড়ক দুর্ঘটনায় ওই পাঁচজন ছাড়া মাইক্রোবাসে থাকা আরও পাঁচজনসহ মোট ১০ জন নিহত হয়েছেন। তাঁরা হলেন রফিকুলের সহকর্মী দিলীপ বিশ্বাস (৪৩) ও তাঁর স্ত্রী সাধনা মণ্ডল (৩৭), আরও দুই সহকর্মী আশীষ মণ্ডল (৫০) ও মোক্তার আহমেদ (৫২) এবং মাইক্রোবাসের চালক ইউছুফ আলী (৫৭)। দুর্ঘটনায় দিলীপ বিশ্বাসের মেয়ে আরাধ্য বিশ্বাস (৮) গুরুতর আহত হয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (চমেক) ভর্তি আছে।

আরও পড়ুন