মনসুর আলী মেডিকেলের নিয়ন্ত্রণ চান স্বাচিপ নেতা

  • বর্তমানে কলেজটি একটি ট্রাস্টের অধীন পরিচালিত হচ্ছে। এই কলেজে প্রতিবছর ১৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়।

  • ভর্তি থেকে প্রতিবছর এই কলেজের আয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা।

শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজে নিজের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চান স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি দলবল নিয়ে গত সপ্তাহে রাজধানীর উত্তরার ওই বেসরকারি মেডিকেল কলেজে হাজির হন। কলেজের অধ্যক্ষ বিচার চেয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছেন।

কলেজটি জাতীয় চার নেতার অন্যতম শহীদ ক্যাপ্টেন এম মনসুর আলীর নামে। মনসুর আলীর ছেলে আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের পরিবার এই কলেজটি পরিচালনা করে। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন স্বাচিপের সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন প্রথম আলোর কাছে দাবি করেছেন, এই কলেজ প্রতিষ্ঠায় তাঁর অবদান আছে। তাঁকে ২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠান থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল।

একাধিকবার মেডিকেল কলেজটির নাম পরিবর্তন হয়েছে। এখন কর্তৃত্ব নিয়ে নতুন সমস্যায় পড়তে যাচ্ছে কলেজটি।

কলেজের জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক, সাবেক শিক্ষার্থী ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিদপ্তরের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কলেজটির নাম একাধিকবার পাল্টানো হয়েছে। বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের জন্য মিরপুরে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের জায়গায় একটি চিকিৎসাকেন্দ্র খোলা হয়েছিল আশির দশকে। মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের আর্থিক সহায়তা আসার পর এর নাম হয় উম্মাহ্‌ মেডিকেল। ১৯৯৫ সালে কলেজের কার্যক্রম শুরু হলে নাম দেওয়া হয় উম্মাহ্ মেডিকেল কলেজ। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর প্রতিষ্ঠানটি উত্তরায় চলে যায়। তখন মোহাম্মদ নাসিম মন্ত্রী ছিলেন। ওই সময় মোহাম্মদ নাসিমের বাবার নামে মেডিকেল কলেজের নামকরণ করা হয় শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ।

২০০১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এলে প্রতিষ্ঠানের নাম বদলে রাখা হয় মওলানা ভাসানী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। ২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বরের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে প্রতিষ্ঠানটির আবার নামকরণ হয় শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ।

বর্তমানে কলেজটি একটি ট্রাস্টের অধীন পরিচালিত হচ্ছে। এই কলেজে প্রতিবছর ১৪০ জন শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়। ভর্তি থেকে প্রতিবছর এই কলেজের আয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা।

আজই (সোমবার) আমি চিঠিটি পেয়েছি। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকেও ঘটনাটি জানিয়েছি। ঘটনার মধ্যে কিছুটা রাজনীতি আছে। দেখি কী করা যায়।
সামন্ত লাল সেন, স্বাস্থ্যমন্ত্রী

ওই দিন কী ঘটেছিল

নতুন করে মেডিকেল কলেজটির নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি সামনে এসেছে। কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক কাজী জাহাঙ্গীর হোসেন ৩০ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেনকে একটি চিঠি দিয়েছেন। ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, স্বাচিপের সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী ৫০ জনের মতো মানুষ সঙ্গে নিয়ে ২৭ জুন দুপুরে কলেজে ঢোকেন। কেউ কেউ স্লোগান দিতে থাকেন। এরপর ২০-২৫ জনকে সঙ্গে নিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে প্রবেশ করেন স্বাচিপ সভাপতি।

অধ্যক্ষের চিঠি অনুযায়ী, জামাল উদ্দিন চৌধুরী নিজেকে শহীদ মনসুর আলী ট্রাস্টের সেক্রেটারি হিসেবে দাবি করেন। ট্রাস্ট বিষয়ে নানা প্রশ্ন করেন অধ্যক্ষকে এবং জামাল উদ্দিন চৌধুরীর সঙ্গে পরামর্শ করে মেডিকেল কলেজ পরিচালনা করার নির্দেশ দেন। চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, স্বাচিবের সভাপতির সঙ্গে আসা প্রতিষ্ঠানবহির্ভূত ব্যক্তিরা অধ্যক্ষের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন।

অধ্যক্ষের চিঠিতে বলা আছে, এই ট্রাস্টের চেয়ারম্যান তমাল মনসুর ও সেক্রেটারি তানভীর শাকিল। তমাল মনসুর সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী প্রয়াত মোহাম্মদ নাসিমের মেজ ছেলে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রে থাকেন। তানভীর শাকিল বড় ছেলে, তিনি সংসদ সদস্য (সিরাজগঞ্জ-১)।

এ ব্যাপারে যোগাযোগ করলে তানভীর শাকিল প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি দুঃখজনক। ঘটনাটি স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়েছে। তবে তিনি এ–ও বলেন যে মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী বেশ আগে কলেজ পরিচালনা কমিটির সঙ্গে ছিলেন।

অধিকার চান স্বাচিপ সভাপতি

প্রথম আলোর কাছে ঘটনার কোনো কিছুই অস্বীকার করেননি স্বাচিবের সভাপতি মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী। তিনি বলেছেন, কোনো অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়নি। অধ্যক্ষের যা করা উচিত, শুধু তাই করতে বলা হয়েছে।

মো. জামাল উদ্দিন চৌধুরী বলেন, উম্মাহ্‌ মেডিকেল কলেজ থেকে শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ করার সময় তিনি ছিলেন প্রকল্প পরিচালক। ২০০৮ সালের পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে তিনি শহীদ মনসুর আলী ট্রাস্টের সেক্রেটারি ছিলেন। আপনি এত দিন কোথায় ছিলেন—এমন প্রশ্নের উত্তরে স্বাচিপের সভাপতি বলেন, ‘মোহাম্মদ নাসিম অনেক ক্ষমতাধর ব্যক্তি ছিলেন। আমাকে কলেজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। তখন আমার কিছুই করার ছিল না।’

জামাল উদ্দিন চৌধুরীর দাবি, জয়েন্ট স্টক কোম্পানির রেজিস্ট্রেশনে এখনো সেক্রেটারি হিসেবে তাঁর নাম আছে। তিনি বলেন, ‘এই কলেজে আমার অনেক অবদান আছে। কলেজটি গড়ে তুলতে আমি মূল্যবান সময় দিয়েছি। এখন সময় এসেছে আমার অধিকার বুঝে নেওয়ার।’

মেডিকেল কলেজটির অধ্যক্ষের চিঠির মাধ্যমে ঘটনাটি জেনেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী সামন্ত লাল সেন। গতকাল সোমবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘আজই (সোমবার) আমি চিঠিটি পেয়েছি। স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রীকেও ঘটনাটি জানিয়েছি। ঘটনার মধ্যে কিছুটা রাজনীতি আছে। দেখি কী করা যায়।’