বিদেশে বেনজীর পরিবারের সম্পদের খোঁজে দুদক

৬ জুন বেনজীর ও ৯ জুন তাঁর স্ত্রী-তিন মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক। 

বেনজীর আহমেদছবি: বেনজীর আহমেদের ফেসবুক থেকে নেওয়া

পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানের নামে বিদেশে কোনো সম্পদ আছে কি না, সেই খোঁজও শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির পক্ষ থেকে বিদেশে সম্পদের খোঁজ নিতে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

দেশ থেকে অর্থ পাচার ঠেকাতে নীতিমালা প্রণয়ন ও সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করে বিএফআইইউ। সংস্থাটি ‘এগমন্ট গ্রুপ’ নামের একটি ফোরামের সদস্য। এই ফোরাম বিশ্বের ১৭০টি দেশের সংশ্লিষ্ট সংস্থার সমন্বয়ে গঠিত, যারা অর্থ পাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়নসংক্রান্ত তথ্য নিয়ে কাজ করে। 

২০১৩ সালে এগমন্ট গ্রুপের সদস্যপদ পায় বিএফআইইউ। সংস্থাটির সূত্র প্রথম আলোকে জানায়, ওই গ্রুপে এক দেশ আরেক দেশের কাছে যদি কোনো ব্যক্তির সম্পদ সম্পর্কে তথ্য চায়, তাহলে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তারা সেই তথ্য সরবরাহ করে। সংশ্লিষ্ট দেশের অনুমতি সাপেক্ষে তা আদালতে উপস্থাপন করা যায়। 

আরও পড়ুন

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএফআইইউর একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের বিষয়ে তথ্য চাওয়া হয়েছে। 

এদিকে বেনজীর আহমেদ, তাঁর স্ত্রী ও তিন মেয়েকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে দুদক। সূত্র জানায়, আগামী ৬ জুন বেনজীর আহমেদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডাকা হয়েছে। তাঁর স্ত্রী জীশান মীর্জা ও তিন মেয়েকে ডাকা হয়েছে ৯ জুন। তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কমিশনের কাছে আবেদন করেছিল সংস্থাটির অনুসন্ধান দল। গতকাল মঙ্গলবার তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দেয় কমিশন। পরে বেনজীর ও তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের তলব করা হয়। 

দুদক কমিশনার জহিরুল হক গতকাল প্রথম আলোকে বলেন, কারও বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার দরকার হলে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হয়, তাঁর বক্তব্য জানতে হয়। আইনও সেটা বলে। 

আরও পড়ুন

দুদক বিভিন্ন সংস্থাকে বেনজীর পরিবারের সম্পদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছিল। বিভিন্ন সংস্থা থেকে তথ্য আসছে। এখন পর্যন্ত বেনজীর পরিবারের ৬২১ বিঘা জমি, ১৯টি কোম্পানির শেয়ার, গুলশানে ৪টি ফ্ল্যাট, ৩০ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র, ৩৩টি ব্যাংক হিসাব এবং তিনটি বিও হিসাব (শেয়ার ব্যবসার বেনিফিশিয়ারি ওনার্স অ্যাকাউন্ট) পেয়েছে দুদক। আদালতের আদেশে এসব সম্পদ জব্দ ও অবরুদ্ধ করা হয়েছে। 

দুদক সূত্র বলছে, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সিঙ্গাপুর ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে বেনজীর পরিবারের সম্পদ থাকতে পারে বলে ধারণা করছে তারা। প্রাথমিকভাবে বিভিন্ন সূত্রে তারা কিছু তথ্যও পেয়েছে। সম্পদ আছে কি না, সে বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য পেতে বিএফআইইউকে চিঠি দেওয়া হয়েছে। 

আরও পড়ুন

বেনজীর আহমেদ ২০২০ সালের ১৫ এপ্রিল থেকে ২০২২ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আইজিপি ছিলেন। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার ও র‍্যাবের মহাপরিচালক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে ২০২১ সালের ডিসেম্বরে র‍্যাব এবং র‍্যাবের সাবেক ও বর্তমান যে সাত কর্মকর্তার ওপর যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাঁদের মধ্যে বেনজীর আহমেদের নামও ছিল। তখন তিনি আইজিপির দায়িত্বে ছিলেন। 

বেনজীর আহমেদের বিরুদ্ধে সম্প্রতি দুর্নীতি ও অনিয়মের মাধ্যমে বিপুল সম্পদের মালিক হওয়ার অভিযোগ ওঠে। এরপর তাঁর জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অনুসন্ধানে কমিটি করে দুদক। 

বিএফআইইউর একটি সূত্রের দাবি, সম্পদের তথ্য অনুসন্ধানের বিষয়টি আগেই টের পেয়ে বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তুলে নেওয়া হয়। ফলে যে ৩৩টি ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ করা হয়েছে, সেগুলোতে তেমন কোনো অর্থ নেই। 

আরও পড়ুন

দুদকের অনুসন্ধান ও সম্পদ জব্দের বিষয়ে বেনজীর আহমেদের মুঠোফোনে গতকাল যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। গত সোমবার এই প্রতিবেদক যান রাজধানীর গুলশানের র‍্যানকন আইকন টাওয়ারে, যেখানে বেনজীর পরিবারের চারটি ফ্ল্যাট রয়েছে। যদিও বেনজীর পরিবারের কারও সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি। 

বেনজীর আহমেদ ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিদেশে চলে যাওয়া ঠেকাতে দুদক আদালতে নিষেধাজ্ঞা জারির আবেদন করতে পারে বলে সূত্র জানিয়েছে। তবে এ বিষয়ে দুদকের কারও আনুষ্ঠানিক বক্তব্য পাওয়া যায়নি। পরে সংস্থাটির আইনজীবী খুরশীদ আলম খানের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, যদি অনুসন্ধানকারী দল মনে করে বেনজীর ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিদেশে যাওয়া রোধ করা দরকার, তাহলে আদালতে আবেদন করতে পারে।

আরও পড়ুন