‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ আয়োজনে বেশি বাধা দেন সাবেক দুই মন্ত্রী: জিল্লুর রহমান
সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান বলেছেন, সাবেক আওয়ামী লীগ সরকার ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’ (বঙ্গোপসাগর সংলাপ) আয়োজনে নানাভাবে বাধা দিয়েছে। সাবেক মন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও শাহরিয়ার আলম বিভিন্নভাবে বাধা দিতেন। অতিথিদের এই আয়োজনে আসতে নিরুৎসাহিত করা হতো।
আজ শুক্রবার রাজধানীর সোনারগাঁও হোটেলে সেন্টার ফর গভর্ন্যান্স স্টাডিজ (সিজিএস) আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান তিনি। ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন ২০২৪’ উপলক্ষে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। আগামীকাল শনিবার তৃতীয়বারের মতো শুরু হচ্ছে ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশন’। এবারের প্রতিপাদ্য হচ্ছে, ‘একটি ভঙ্গুর বিশ্ব’। এবার আয়োজনের উদ্বোধন করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
সংবাদ সম্মেলনে কনভারসেশনের বিস্তারিত তুলে ধরেন সিজিএসের নির্বাহী পরিচালক জিল্লুর রহমান। প্রথম দুবার ‘বে অব বেঙ্গল কনভারসেশনের’ আয়োজনের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জানান তিনি।
জিল্লুর রহমান বলেন, সাবেক সরকারের আমলে তাঁদের আয়োজনের স্থানীয় স্পনসর ও ব্যবসায়ীদের গোয়েন্দা সংস্থার কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে। তৎকালীন তথ্যমন্ত্রী হাছান মাহমুদ ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম ফোন করে এমন আচরণ করেছেন যে ব্যবসায়ীদের মধ্য যাদের সঙ্গে জিল্লুর রহমানের দীর্ঘদিনের সম্পর্ক ছিল তাঁরা আর কথা বলতে চাইতেন না, দেখাও করতে চাইতেন না। পরে দ্বিতীয়বারের আয়োজনে কোনো অংশীদার পাননি।
দুই মন্ত্রীর বাধার কারণে অনেকে চেকে টাকা দিতে চাননি। ভয়ভীতির কারণে রাস্তায় থাকা অবস্থায় নগদ টাকা দিয়েছেন বলেও জানান জিল্লুর রহমান। জিল্লুর রহমানসহ তাঁর সহকর্মীদের নানাভাবে হেনস্তা করা হয়েছে বলেও সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
আগের দুবার সিজিএসের এই আয়োজনে অতিথিদের না আসার জন্য বিভিন্ন হাইকমিশন থেকে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে বলেন জিল্লুর রহমান। বলা হতো সিজিএস সরকার বিরোধী। এমনকি বাংলাদেশ থেকে দক্ষিণ এশীয় বিভিন্ন দেশের অতিথিদের ফোন করে না আসার জন্য বলা হতো।
প্রথমবার ২০২২ সালের আয়োজনের অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে জিল্লুর রহমান বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যমকে আয়োজনের খবর প্রকাশ করতে নিষেধ করা হয়েছে। দেশের ৫-৭টি পত্রিকা ছাড়া কেউ কোনো খবর ছাপেনি। গোয়েন্দা সংস্থাগুলো দেশীয় অতিথিদের ফোন করে নিষেধ করত। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) সাবেক প্রধান হারুন অর রশীদ অনুষ্ঠানস্থলের পাশে দলবল নিয়ে এসে বসে থাকতেন।
জিল্লুর রহমান আরও বলেন, ২০২২ সালের আয়োজনের জন্য ছয় মাস আগে একটি হোটেলে বুকিং দেওয়া হয়। কিন্তু সরকার চায় না বলে তারা আয়োজনের ১৫ দিন আগে বাতিল করে দেয়। সে বছর সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক আধ ঘণ্টা বসে থেকে বক্তব্য না দিয়ে চলে যান। কারণ হাছান মাহমুদ তাঁকে ফোন করে চলে যেতে বলেন। আরেকজন সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলাম গেট থেকেই ফিরে যান। দ্বিতীয়বারের আয়োজনে শুধু সাবেক পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান অংশ নেন।
জিল্লুর রহমান বলেন, এ ধরনের আয়োজনে বিশ্বের বিভিন্ন দেশেই সরকারের সমর্থন থাকে। তাঁরা সরকারের কাছ থেকে অন্য কোনো সহায়তা চান না। সরকার যেন বাধা হয়ে না দাঁড়ায়। এ ধরনের আয়োজনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হয়।
পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়ে কোনো বাধা পাননি জানিয়ে জিল্লুর রহমান বলেন,এবার পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সহযোগিতা করেছে।
বাংলাদেশে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে সরকারে সঙ্গে কাজ করার এখন পর্যন্ত অভিজ্ঞতা সুখকর না। তাই সরকারের বাইরে থেকেই সিজিএস কাজ করতে চায় বলেও জানান জিল্লুর রহমান । সরকারের সঙ্গে থেকে কোনো আর্থিক সম্পর্কে সিজিএস জড়াবে না।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, আগামীকাল থেকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া তিন দিনব্যাপী এই সংলাপে বিশ্বের ৮০টি দেশের লেখক, গবেষক, রাজনীতিবিদ, কূটনীতিক, আমলা, শিক্ষাবিদ, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা অংশ নেবেন। ভূরাজনীতি, অপতথ্য, মানবাধিকারসহ পাঁচটি বিষয়ে সংলাপ হবে।
এতে বিভিন্ন দেশের ২০০ জন বক্তা, ৩০০ জন প্রতিনিধি এবং ৮০০ জন অতিথি থাকবেন। এই আয়োজনে শুধু নিবন্ধিত অতিথিরাই অংশ নিতে পারবেন।
এবারের আলোচনার বিষয়গুলো হচ্ছে, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ও অপতথ্য, জলবায়ু পরিবর্তন, বাণিজ্য, ভূ-রাজনীতি এবং মানবাধিকার। সকাল সাড়ে ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ৭৭টি সেশন চলবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন, সিজিএসের চেয়ারম্যান মুনিরা খান, চিফ অফ স্টাফ দিপাঞ্জলী রায় এবং প্রোগাম ডিরেক্টর সুবীর দাস।