‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ পেলেন শিল্পী শীলা মোমেন

পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে শিল্পী শীলা মোমেনের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা (বায়ে) ও রবীন্দ্র–গবেষক সৈয়দ আকরম হোসেন
ছবি: সংগৃহীত

রবীন্দ্র গবেষণায় সামগ্রিক অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ এ বছর বাংলা একাডেমির ‘রবীন্দ্র পুরস্কার’ পেয়েছেন শিল্পী শীলা মোমেন। আজ সোমবার শীলা মোমেনের হাতে পুরস্কারের সনদ, সম্মাননা স্মারক ও অর্থমূল্যের চেক তুলে দেন বাংলা একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন এবং মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।

বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৬২তম জন্মবার্ষিকী আজ। এ উপলক্ষে বাংলা একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ মিলনায়তনে রবীন্দ্র পুরস্কার-২০২৩ প্রদান, একক বক্তৃতা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

পুরস্কার পাওয়ার অনুভূতি প্রকাশ করে শীলা মোমেন বলেন, ‘বাংলা একাডেমির “রবীন্দ্র পুরস্কার” প্রাপ্তি অনন্য অর্জন। রবীন্দ্রনাথকে ধারণ করে তাঁকে অন্বেষণ করে চলেছি। এর যেন কোনো শেষ নেই, আছে আনন্দধারায় অনন্ত অবগাহন।’

এই অনুষ্ঠানের সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের ব্যক্তিগত ও জাতীয় জীবনজুড়ে ব্যাপ্ত। তাঁর চিন্তা ও মানবিক আদর্শ আমাদের চলার পথকে কুসুমাস্তীর্ণ করে, আলোকের ঝরনাধারায় হাত ধরে নিয়ে চলে।’

স্বাগত বক্তব্যে কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ আমাদের শান্তি, সমৃদ্ধি ও মঙ্গলের বাতিঘর। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য ও জীবন থেকে পাই সবাইকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার, আরও ঋদ্ধ হওয়ার প্রেরণা।’

রবীন্দ্র–গবেষক সৈয়দ আকরম হোসেন তাঁর বক্তব্যে বলেন, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে জমিদারতন্ত্রের মিথ প্রচলিত আছে আমাদের সমাজে। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ আগাগোড়া একজন স্বনির্মিত মানুষ। পারিবারিক ব্যবসার সূত্রে পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন জেলায় এসেছেন তিনি। এসব অঞ্চলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নের চেষ্টা তিনি যেমন করেছেন, তেমনি পূর্ববঙ্গের সাধারণ মানুষই তাঁর সাহিত্যকে দান করেছে নতুন গতিপথ।’

রবীন্দ্রনাথের কবিতা আবৃত্তি করেন মাহিদুল ইসলাম ও সায়েরা হাবীব। রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন বুলবুল ইসলাম ও কমলিকা চক্রবর্তী। বাংলা একাডেমির উপপরিচালক কাজী রুমানা আহমেদ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।

শীলা মোমেনের জন্ম ১৯৫৩ সালের ১২ আগস্ট চট্টগ্রামে। তিনি পড়েছেন চট্টগ্রামের ডা. খাস্তগীর উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়, চট্টগ্রাম কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। নৃত্য ও সংগীতের হাতেখড়ি শৈশবেই। প্রথম দিকে নৃত্যশিল্পী হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। পরে সংগীতে মনোযোগী হন।

শীলা মোমেনের সংগীত–জীবনের গুরু ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা ওয়াহিদুল হক, রবীন্দ্রনাথের স্নেহধন্য শ্রী শৈলজারঞ্জন মজুমদার, শ্রী সুভাষ চৌধুরী, শ্রীমতী নীলিমা সেন ও শ্রীমতী সঙ্ঘমিত্রা গুপ্ত। আগ্রা ঘরানার বিশিষ্ট সংগীতগুরু কলকাতার সংগীত রিসার্চ একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক পণ্ডিত বিজয় কিচলুর কাছে উচ্চাঙ্গসংগীতে তালিম নিয়েছেন।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় ভারতে আশ্রয় নেন শীলা মোমেন এবং মুক্তিসংগ্রামী শিল্পী সংস্থার সদস্য হিসেবে মুক্তিযোদ্ধা ক্যাম্প, শরণার্থী শিবির, রণাঙ্গন ও ভারতের বিভিন্ন শহরে গান করেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রেও তিনি গান করেছেন। শীলা মোমেন বেতার ও টেলিভিশনের নিয়মিত শিল্পী।

শীলা মোমেন জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের দুটি শ্রেণির সংগীতবিষয়ক বইয়ের রবীন্দ্রসংগীত অংশের রচয়িতা। রবীন্দ্রসংগীত নিয়ে পাঁচটি গবেষণামূলক অ্যালবামের কাজ সম্পন্ন করেছেন।

১৯৭৬ সালে শিশুদের ব্যতিক্রমী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ফুলকি প্রতিষ্ঠার সঙ্গে যুক্ত হন শীলা মোমেন। জন্মলগ্ন থেকেই এর অধ্যক্ষের দায়িত্ব নিয়ে আজ অবধি তিনি সেই দায়িত্ব পালন করছেন। শিশুর বিকাশে শিক্ষার সঙ্গে সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটিয়ে এ প্রতিষ্ঠানের যে কাজ, তা দেশের শিক্ষা ও সংস্কৃতি–মনষ্ক মানুষের কাছে সমাদৃত হয়েছে।