‘বিরল যমজ’ নূহা-নাবার জোড়া দেহ আলাদা করার প্রস্তুতি

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন নূহা ও নাবা
ছবি: প্রথম আলো

জোড়া যমজ নূহা ও নাবা এখন উপযুক্ত হয়ে উঠেছে। তাদেরকে আলাদা করার জন্য সম্ভাব্য সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)। বিশেষ কোনো সমস্যা দেখা না দিলে ৭ থেকে ১০ দিনের মধ্যে তাদের শরীরে অস্ত্রোপচার করা হবে। চিকিৎসকদের দাবি, এ ধরনের অস্ত্রোপচার দেশে এই প্রথম।

যমজ শিশুর জন্ম অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয়। তবে অস্বাভাবিক তখনই হয়, যদি যমজ শিশুর শরীর দুটি জোড়া লাগা বা যুক্ত থাকে। জন্ম থেকেই নূহা ও নাবার শরীর জোড়া লাগানো। তবে তাদের জোড়া লাগানোর ঘটনাটি কিছুটা বিরল প্রকৃতির।

নাসরিন আক্তার ও আলমগীর হোসেন দম্পতির বাড়ি কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার শিবরাম কাঁঠালবাড়ি গ্রামে। গত বছর ২১ মার্চ তাঁদের যমজ কন্যাসন্তানের জন্ম হয়। জন্মের সময় তাদের শরীরের পেছনের দিকে নিচের অংশ জোড়া লাগানো। বাবা ও মা তাদের নাম রাখেন নূহা ও নাবা। ৪ এপ্রিল তাদের বিএসএমএমইউতে ভর্তি করানো হয়।

চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, কনজয়েন্ট টুইন বা জোড়া লাগানো যমজ নানা ধরনের হয়। কিছু যমজের জোড়া থাকে কপালে (ক্রানিওপেগাস), কোনো ক্ষেত্রে বুক বা বক্ষদেশ জোড়া থাকে (থোরাকোপেগাস), কারও কারও পেট জোড়া থাকে (ওম্ফালোপেগাস)। আরও নানা ধরনের জোড়া যমজ দেখা যায়। নূহা ও নাবা শরীরের পেছন ও নিচের দিকে থেকে যুক্ত। চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ‘কনজয়েন্ট টুইন পিগোপেগাস’।

বিএসএমএমইউয়ের কেবিন ব্লকের একটি কক্ষে বাবা ও মায়ের সঙ্গে থাকে নূহা ও নাবা। বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্জারি অনুষদের ডিন ও নিউরোসার্জারি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেনের অধীনেই দুই বোনের চিকিৎসা চলছে। গত ৪ ডিসেম্বর থেকে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই দুই বোনের পরীক্ষা–নিরীক্ষা, চিকিৎসার সব খরচসহ বাবা–মায়ের থাকার খরচও মওকুফ করেছে। তাদেরকে ‘একাডেমিক কেস’ হিসেবে নেওয়া হয়েছে। চিকিৎসায় বিভিন্ন বিভাগের বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ১১ সদস্যের একটি বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বোর্ডের প্রধান অধ্যাপক মোহাম্মদ হোসেন।

মোহাম্মদ হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘নূহা ও নাবার মেরুদণ্ড জোড়া লাগানো। এরা বিরল যমজ। সম্ভাব্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের পরীক্ষা–নিরীক্ষা আমরা করেছি। আমরা এখন অস্ত্রোপচারের জন্য প্রস্তুত। আশা করি, সাত দিনের মধ্যে আমরা কাজটি শুরু করতে পারব।’

চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শুরুতেই মেরুদণ্ডের জোড়া পৃথক করার অস্ত্রোপচার করবেন না তাঁরা। ছোট ছোট তিনটি অস্ত্রোপচার সফলভাবে শেষ করার পর দুই শিশুকে পৃথক করার কাজে হাত দেবেন। তাঁরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন সংক্রমণ থেকে শিশুরা যেন নিরাপদে থাকে।

গত রোববার দুপুরে বিএসএমএমইউয়ের কেবিন ব্লকে গিয়ে নূহা ও নাবার দেখা মেলে। দুই বোন দুদিকে ফিরে শুয়ে ছিল। নূহা ছিল ঘুমিয়ে, নাবা হাত–পা নাড়িয়ে খেলছিল। নাবার শরীর ও স্বাস্থ্য নূহার তুলনায় ভালো। পাশে ছিল তাদের মা নাসরিন আক্তার।

নাসরিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, তাদের ৯ বছরের একটি ছেলে আছে। অস্ত্রোপচারে তাঁদের এই যমজ কন্যাসন্তান হয়। এরা অকালিক শিশু। ঠিক সময়ের ১ মাস ৬ দিন আগে তাদের জন্ম হয়েছিল।