প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৯ জুন দিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির শপথ অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন। ওই সফরের দুই সপ্তাহের মাথায় এবার দুই নিকট প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীরা দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসছেন। গত দেড় দশকের ধারাবাহিকতায় ভবিষ্যতে দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক এগিয়ে নিতে রাজনৈতিক অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত হবে দুই প্রধানমন্ত্রীর শীর্ষ বৈঠকে।
ঢাকা ও দিল্লির কূটনৈতিক সূত্রগুলো আজ শুক্রবার সকালে প্রথম আলোকে জানিয়েছে, ২১ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দিল্লিতে যাবেন। পরদিন দিল্লির হায়দরাবাদ হাউসে অনুষ্ঠিত হবে দুই প্রধানমন্ত্রীর আনুষ্ঠানিক বৈঠক।
সফরের প্রস্তুতির সঙ্গে যুক্ত একাধিক সূত্র এই প্রতিবেদককে জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এবারের দ্বিপক্ষীয় সফরটি তুলনামূলক সংক্ষিপ্ত হবে। সে ক্ষেত্রে সফরটি ২১ জুন থেকে দুই দিনের হবে। ২৩ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। দলের প্রতিবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ওই দিন ঢাকায় থাকার কথা আওয়ামী লীগের সভাপতির।
* ২১ জুন দিল্লিতে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
* সই ও নবায়ন হবে কয়েকটি চুক্তি ও এমওইউ
জানা গেছে, সাম্প্রতিক ইতিহাসে বাংলাদেশের কোনো প্রধানমন্ত্রীর এত কম সময়ের মধ্যে দুই দফায় ভারত সফরের নজির নেই। কিন্তু এই সফর যে হবে, তা নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা চলছিল। তবে এবারের সফরে নতুন কোনো সিদ্ধান্তের ঘোষণা, চুক্তি ও সমঝোতা সই, কোনো প্রকল্প উদ্বোধনের ক্ষেত্রে বড় ধরনের তেমন কিছু না–ও ঘটতে পারে। মূলত দুই দেশের সাধারণ নির্বাচনের পর নিকট প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রীরা সম্পর্কের বিষয়ে এই প্রথম আনুষ্ঠানিক বৈঠকে বসবেন। মূলত রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে গত দেড় দশকের ধারাবাহিকতায় সম্পর্কের ভবিষ্যতের ক্ষেত্রে তাঁদের রাজনৈতিক অঙ্গীকারের প্রতিফলন ঘটবে আসন্ন বৈঠকে।
জানা গেছে, এখন পর্যন্ত সফরের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে দুই পক্ষের প্রস্তুতি চলছে। প্রধানমন্ত্রীর আসন্ন দিল্লি সফরে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা সইয়ের কথা রয়েছে। এর মধ্যে কয়েকটির মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। তবে সফরের ঠিক আগমুহূর্ত পর্যন্ত চুক্তি ও সমঝোতার সংখ্যার পরিবর্তন হতে থাকে। নতুন চুক্তি ও সমঝোতা স্মারকের (এমওইউ) মধ্যে ভারতের ঋণচুক্তি বাস্তবায়নে গতি আনতে নতুন রূপরেখা চুক্তি, বাংলাদেশে যেকোনো পরিস্থিতিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য একটি এমওইউ সইয়ের মতো কিছু বিষয় বিবেচনায় রয়েছে।
দুই দেশের কূটনৈতিক সূত্রগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে জানা গেছে, অর্থনৈতিক সহযোগিতা, বাণিজ্য, সংযুক্তি, জ্বালানি, নতুন প্রযুক্তিসহ নানা বিষয়ে ২২ জুন অনুষ্ঠেয় শীর্ষ বৈঠকে আলোচনা হবে।
বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অমীমাংসিত ও অগ্রাধিকারের তালিকায় সব সময় ওপরের দিকেই থাকে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি। এবারের আলোচনায়ও এর ব্যতিক্রম হবে না। কিন্তু ভারতের শেষ লোকসভা নির্বাচনের পর কেন্দ্রে বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট সরকার আর পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল কংগ্রেস ক্ষমতায় রয়েছে। বিজেপি–তৃণমূল রাজনৈতিক সমীকরণের বৃত্তে অনেকটা ঝুলে আছে এই চুক্তির ভাগ্য। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বাংলাদেশের কূটনীতিকেরা বলেন, তিস্তা নিয়ে খুব শিগগির নতুন কোনো অগ্রগতির সম্ভাবনা কম। তবে ভারতের দিক থেকে তিস্তার বিষয়ে নতুন কোনো প্রস্তাব এলে তাতে অবাক হওয়ার কিছু নেই।
সংযুক্তির বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশের এক জ্যেষ্ঠ কূটনীতিক বলেন, পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গত মে মাসে ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিনয় কোয়াত্রার সঙ্গে আলোচনায় সড়ক, রেল, জ্বালানি ও সমুদ্রপথে পণ্য পরিবহন নিয়ে সংযুক্তির বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন। বিশেষ করে নেপাল ও ভুটানকে যুক্ত করে বিদ্যুৎ সরবরাহের বিষয়ে বাংলাদেশ ও ভারত যাতে একটি কাঠামো গড়ে তুলতে পারে, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। এর পাশাপাশি কক্সবাজারের মাতারবাড়ীতে গভীর সমুদ্রবন্দর হলে এতে পণ্য আনা–নেওয়ার বিপুল সুযোগ তৈরি হবে। বাংলাদেশের এই সমুদ্রবন্দরকে আঞ্চলিক সংযোগের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলতে এটাকে ভারতের উত্তর–পূর্বাঞ্চলের পাশাপাশি নেপাল ও ভুটানকে ব্যবহার করতে দিতে আগ্রহী। তাই এ নিয়ে জাপানকে যুক্ত করে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি করতে ভারতকে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। এসব বিষয় আসন্ন বৈঠকের আলোচনায় গুরুত্ব পেতে পারে।
জানা গেছে, আজ শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর দিল্লি সফরের সব কর্মসূচি চূড়ান্ত হয়নি। সফরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পাশাপাশি ভারতের রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মুর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন প্রধানমন্ত্রী। এ ছাড়া রাজঘাটে মহাত্মা গান্ধীর স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ আরও একাধিক কর্মসূচি যুক্ত হতে পারে।