একটি গুপ্ত সংগঠন ক্যাম্পাসে ‘মব’ তৈরি করছে: ঢাবি ছাত্রদল সভাপতি

কুয়েটে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর ‘সন্ত্রাসী হামলার’ প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ করে ছাত্রদল। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে টিএসসি এলাকায়ছবি: প্রথম আলো

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) সংঘর্ষের পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সেখানে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় বলেছেন, একটি গুপ্ত সংগঠন ক্যাম্পাসে ‘মব’ সৃষ্টি করে বোঝাতে চায় ছাত্রলীগের মতোই ছাত্রদল ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চায়, তারাই ক্যাম্পাসগুলোতে নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠনের দোকান খুলে বসেছে।

‘কুয়েটে সাধারণ শিক্ষার্থী ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারকে অপব্যবহার করে ফরম বিতরণের অভিযোগ এনে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর গুপ্ত সংগঠন শিবির ও নিষিদ্ধঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগের কতিপয় সন্ত্রাসীর নৃশংস হামলার প্রতিবাদে’ এই বিক্ষোভ করে ছাত্রদল। রাত নয়টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় ডাস ক্যাফেটেরিয়া চত্বরে জড়ো হন ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা। সেখান থেকে মিছিল নিয়ে তাঁরা ভিসি চত্বরের দিকে যান। ভিসি চত্বর ঘুরে মিছিলটি আবার ডাস চত্বরে এসে শেষ হয়। এরপর সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।

সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘দুই দিন আগে কুয়েটে একটি গুপ্ত সংগঠন ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধের দাবিতে মিছিল বের করে। সেখানে আমাদের ছাত্রদলের ভাইয়েরা পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় তাঁদের ওপর বিনা উসকানিতে হামলা করা হয়। ক্যাম্পাসে মব সৃষ্টি করে তারা বোঝাতে চায় যে ছাত্রলীগের মতোই ছাত্রদল ক্যাম্পাসে সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। যারা ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ করতে চায়, তারাই ক্যাম্পাসগুলোতে নামে-বেনামে বিভিন্ন সংগঠনের দোকান খুলে বসেছে।’

কুয়েটে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের ওপর ‘সন্ত্রাসী হামলার’ প্রতিবাদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ মিছিল করেন ছাত্রদলের নেতা–কর্মীরা। মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে টিএসসি এলাকায়
ছবি: প্রথম আলো

সারা দেশে ক্যাম্পাসগুলোতে একটি গুপ্ত সংগঠন ছাত্রদলের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালিয়ে আসছে অভিযোগ করে গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, এখনো ক্যাম্পাসে গুপ্ত সংগঠনটি একের পর এক মব তৈরি করে যাচ্ছে। ছাত্রদলের ছায়াতলে প্রকৃত সাধারণ শিক্ষার্থীরা আশ্রয় নিয়ে কথা বলতে পারছে। ছাত্রদল শিক্ষার্থীদের চাওয়া–পাওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁদের মতামতের ভিত্তিতে কর্মসূচি প্রণয়ন করে। বিগত দিনগুলোতে ছাত্রদল মৃত্যুর উপত্যকায় দাঁড়িয়ে মুক্তির স্লোগান দিয়েছে।

নিজের সংগঠনের নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে ছাত্রদল নেতা গণেশ চন্দ্র রায় বলেন, ‘একাত্তর, নব্বই ও চব্বিশের পরাজিত শক্তিরা এখনো ওত পেতে আছে। তাই আমাদের বিরুদ্ধে অনেক অপপ্রচার করা হবে। আপনাদের চরিত্র হননের চেষ্টা করা হবে। তাই আপনারা সতর্ক থাকবেন। কোনো গুপ্ত বাহিনীর ফাঁদে পা দেবেন না। গুপ্ত বাহিনীর উদ্দেশে বলতে চাই, আপনারা সামনে আসুন, নিজের পরিচয় প্রকাশ করুন, দেখব আপনাদের জনপ্রিয়তা কতটুকু।’ ফেসবুকে ‘মব’ তৈরি করে অপপ্রচার করা হলে তাঁর দাঁত ভাঙা জবাব দেওয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন এই ছাত্রদল নেতা।

সমাবেশে ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন বলেন, গুপ্তের আড়ালে যারা ছাত্রদলকে নিয়ে অব্যাহত ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে, মেধা দিয়ে সহনশীলতার সঙ্গে তাদের ষড়যন্ত্র রুখে দেওয়া হবে। একাত্তরে যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী ছিল, নব্বইয়ের স্বৈরাচার এরশাদের সঙ্গে মিলে যারা গণতন্ত্রকে কুক্ষিগত করেছিল, ৫ আগস্ট–পরবর্তী সময়ে ঠিক একইভাবে তারা ষড়যন্ত্র জারি রেখেছে।

সংঘর্ষের কারণ অনুসন্ধান করবে ছাত্রদল

কুয়েটে উদ্ভূত পরিস্থিতির কারণ অনুসন্ধানের লক্ষ্যে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সংসদের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল মালুম, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শাহাদাত হোসেন ও সোহেল রানাকে সরেজমিনে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদকে অবহিত করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব ও সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির মঙ্গলবার রাতে এই নির্দেশনা দিয়েছেন।