সুফিয়া কামালের লড়াইকে আন্তর্জাতিক পরিসরে ছড়িয়ে দিতে হবে
পিতৃতন্ত্রের গৎবাঁধা ছকে ফেলে নারীকে নিয়ন্ত্রণ করতে চায় পরিবার ও সমাজ। এই মনোভাবের কারণে সমাজে বৈষম্য ও অসমতার সৃষ্টি হয়। সুফিয়া কামাল এই গৎবাঁধা দৃষ্টিভঙ্গিকে নানাভাবে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তাই নারী মুক্তির জন্য সুফিয়া কামালের সংগ্রামকে আন্তর্জাতিক পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়া উচিত।
আজ কবি সুফিয়া কামালের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ আয়োজিত স্মারক বক্তৃতা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানে বক্তারা এসব কথা বলেছেন।
২০ জুন ছিল সুফিয়া কামালের ১১৩তম জন্মবার্ষিকী। এ উপলক্ষে আজ বুধবার রাজধানীর আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে স্মারক বক্তৃতা ও সম্মাননা প্রদান অনুষ্ঠানটি হয়। ‘নারীর প্রতি প্রচলিত গৎবাঁধা দৃষ্টিভঙ্গি: সুফিয়া কামালের আন্দোলন’ শিরোনামে এই অনুষ্ঠানে বক্তৃতা, গান ও আবৃত্তিতে স্মরণ করা হয় তাঁকে।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘সুফিয়া কামাল সমতা প্রতিষ্ঠার জন্য লড়াইয়ের যে পথ তৈরি করে গেছেন, নতুন সমাজ তৈরিতে সেই পথ অনুসরণ করতে হবে। পুরুষ নারীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ—সমাজের এ ধরনের বদ্ধমূল ধারণা ভাঙতে হবে। এটা ভাঙতে না পারলে সমাজ থেকে নারীর প্রতি সহিংসতা দূর হবে না, বৈষম্য নিরসন হবে না।’
‘গৎবাঁধা লিঙ্গীয় নির্মাণ এবং সুফিয়া কামাল’ শিরোনামে স্মারক বক্তৃতা দেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক আইনুন নাহার। তিনি বলেন, ‘সমাজে গৎবাঁধা কিছু চিন্তাভাবনা রয়েছে। যেমন পুরুষ পরিবারের প্রধান, নারীর কাজ ঘর-সংসার সামলানো, সংসার চলে পুরুষের আয়ে, নারীরা নমনীয় ও মিষ্টভাষী, নারী রাজনীতি বোঝে না, নারীরা নারীর শত্রু ইত্যাদি। সুফিয়া কামাল এই সব গৎবাঁধা লিঙ্গীয় নির্মাণকে চ্যালেঞ্জ করেছেন। তাঁর বহুমাত্রিক সত্তা, সম্পৃক্ততা, লেখালেখি, নারী আন্দোলনের পাশাপাশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ন্যায়সংগত সমাজ প্রতিষ্ঠার লড়াই নিয়ে আরও অনুসন্ধান ও গবেষণা করে তা বৈশ্বিক পরিসরে নিতে হবে।
স্বাগত বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, ‘সুফিয়া কামাল এমন একটি পরিবারে জন্ম নিয়েছিলেন, যেখানে শিক্ষা ছিল, কিন্তু নারীদের শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল না। সুফিয়া কামাল সেই পরিবার থেকে শিক্ষা লাভের সুযোগ তৈরি করে নিয়েছিলেন এবং একক শক্তিতে তিনি নিজেকে ক্ষমতায়িত করেছিলেন, বিভিন্ন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। তাঁর সেই আন্দোলনকে এগিয়ে নেওয়ার কাজে সমাজের সবাইকে সম্মিলিতভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে।’
সুফিয়া কামাল বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। চলতি বছর প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ও প্রয়াত স্থপতি কবি রবিউল হুসাইনকে ‘সুফিয়া কামাল সম্মাননা’ দেওয়া হয়। বিদেশে চিকিৎসাধীন শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর পক্ষে তাঁর মেয়ে সায়েকা মাহমুদ ও প্রয়াত রবিউল হুসাইনের পক্ষে তাঁর ছেলে জিসান হুসাইন সম্মাননা গ্রহণ করেন।
আজকের অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেছেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম।
অনুষ্ঠানের শুরুতে সুফিয়া কামালের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের নেতারা। এরপর গান পরিবেশন করেন রবীন্দ্রসংগীতশিল্পী ইফ্ফাত আরা দেওয়ান ও নজরুলসংগীতশিল্পী খায়রুল আনাম শাকিল। সুফিয়া কামালের ‘নারী ও ধরিত্রী’ এবং ‘আমার দেশ’ কবিতা দুটি আবৃত্তি করেন গোলাম সারোয়ার।