শিশুদের ওপর সহিংসতার ঘটনায় ইউনিসেফের প্রতিনিধির উদ্বেগ
শিশুদের ওপর সহিংসতার সাম্প্রতিক ঘটনায় বাংলাদেশে ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। আজ রোববার এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, বাংলাদেশে গত কয়েক সপ্তাহে শিশুদের ওপর, বিশেষ করে কন্যাশিশুদের ওপর যৌন সহিংসতার খবর উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে যাওয়ায় তিনি গভীরভাবে আতঙ্কিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মতো যেসব জায়গায় শিশুদের সুরক্ষিত পরিবেশে বেড়ে ওঠার কথা, সেসব জায়গাসহ অন্যত্র শিশু ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার ভয়ানক ঘটনাগুলো সম্প্রতি যেভাবে বেড়েছে, তা নিয়ে তিনি উদ্বিগ্ন।
বিবৃতিতে রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘মাগুরার আট বছরের শিশুর মৃত্যুতে আমরা শোকাহত। বাংলাদেশে শিশুরা, বিশেষ করে কন্যাশিশুরা, কীভাবে মৌলিক অধিকার ও নিরাপত্তার গুরুতর লঙ্ঘনের শিকার হচ্ছে, ওই শিশুর মৃত্যু সেটা ভয়ংকরভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। দুঃখজনকভাবে, এই ছোট শিশুটির মৃত্যুর বিষয়টি শিশুদের ওপর যেসব ভয়াবহ ঘটনা ঘটছে, সেগুলোর নিছক একটি ঘটনা মাত্র। ইউনিসেফের নিরীক্ষণ অনুযায়ী, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের শিকার হওয়া শিশুদের সংখ্যা বড় বেদনাদায়ক ও উদ্বেগজনক।’
বিবৃতিতে শিশুর প্রতি সহিংসতার তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, এ বছরের জানুয়ারি থেকে ১৬ মার্চ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যম ও স্থানীয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো শিশু ধর্ষণের প্রায় ৫০টি ঘটনা রেকর্ড করেছে। আর এই প্রবণতা যেন দিন দিন আরও ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে। শুধু ১০ মার্চ, এই এক দিনে ৭টি শিশু নিহত হয়েছে এবং ৬টি শিশুর সঙ্গে সহিংসতার ঘটনা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘এসব পরিসংখ্যান নিছক কোনো সংখ্যা নয়। এগুলো বিপন্ন জীবনের কথা বলে, নির্যাতনের শিকার হয়ে বেঁচে যাওয়া শিশুরা যে বিরাট মানসিক অভিঘাতের শিকার হয় তার কথা বলে। আমাদের সামনে তুলে ধরে ভুক্তভোগী পরিবার ও সম্প্রদায়ের বয়ে বেড়ানো অকল্পনীয় কষ্টের অভিজ্ঞতা। ইউনিসেফের হিসাবে, বিশ্বে বর্তমানে বেঁচে আছেন এমন প্রতি আট নারী ও শিশুর মধ্যে ১ জন বয়স ১৮ বছর হওয়ার আগেই ধর্ষণ বা যৌন সহিংসতার শিকার হয়েছে। আর বাংলাদেশে সমীক্ষায় দেখা গেছে, এসব অপরাধী প্রায়ই ভুক্তভোগীদের পরিচিত হয়ে থাকেন।’
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, ‘এই সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার অপরাধীদের অবিলম্বে বিচারের আওতায় আনার যে নির্দেশ দিয়েছেন, সেটাকে আমরা স্বাগত জানাচ্ছি। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘৃণ্য অপরাধকে এর যথাযথ নাম “ধর্ষণ” বলে সম্বোধন করার ওপর জোর দিচ্ছি।’
তিনি বলেন, এমন একটি সমাজ নির্মাণ করতে হবে, যেখানে প্রতিটি শিশু ভয় ও সহিংসতা থেকে মুক্ত হয়ে বেড়ে উঠতে পারবে, তার জন্য অন্তর্বর্তী সরকার ও সব অংশীদারকে শিশু সুরক্ষাব্যবস্থাগুলোতে বিনিয়োগ এবং সেগুলো জোরদারে অবিলম্বে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। অন্তর্বর্তী সরকার ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে জোরালো তদন্ত ও বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শিশুর ওপর সহিংসতার সব ঘটনার বিষয়ে জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। আইন প্রয়োগকারী সংস্থার মধ্যে একটি বিশেষায়িত শিশু সুরক্ষা ইউনিট প্রতিষ্ঠা করা অপরিহার্য। ৯০ দিনের মধ্যে ধর্ষণ মামলার বিচার সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে সরকারের যে লক্ষ্য, সেটা অর্জনের জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।