ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তির ক্ষেত্রে জামিন (বেইল) একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিনা বিচারে কোনো ব্যক্তিকে আটক রাখা যাবে না—এই নীতি বাস্তবায়নের জন্য জামিন একটি রক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করে। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬, ৪৯৭ ও ৪৯৮ ধারায় জামিন সম্পর্কে আলোচনা করা হয়েছে। সাধারণ অর্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজত কিংবা কারাগার থেকে মুক্তি দিয়ে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট দিন ও সময়ে আদালতে হাজির হওয়ার শর্তে জামিনদারের নিকট সমর্পণ করাকেই জামিন বলে।
জামিনযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৬ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি জামিনযোগ্য অপরাধে আটক হয়, তাহলে তাকে যে আদালতে হাজির করা হবে, সেই আদালত উক্ত আটক ব্যক্তিকে জামিন দেবে। এই ধারার অধীন জামিনযোগ্য অপরাধে জামিন পাওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনগত অধিকার এবং জামিনযোগ্য অপরাধে জামিন দেওয়া আদালতের জন্য আদেশসূচক।
জামিন অযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন
ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৭ ধারা অনুযায়ী কোনো ব্যক্তিকে পুলিশ জামিন অযোগ্য অপরাধে আটক করলেও তাকে জামিন দেওয়া যেতে পারে। এই ধারার অধীন জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিন পাওয়া অভিযুক্ত ব্যক্তির আইনগত অধিকার নয়; বরং জামিন অযোগ্য অপরাধে জামিন দেওয়া আদালতের বিবেচনামূলক ক্ষমতা। আদালত ইচ্ছা করলে জামিন দিতে পারেন আবার না–ও দিতে পারেন। কিন্তু জামিন অযোগ্য অপরাধে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে জামিনে মুক্তি দেবেন না, যদি সে মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধে অপরাধী বলে বিশ্বাস করার মতো আদালতের যুক্তিসংগত কারণ থাকে। অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডনীয় কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে জামিন না দেওয়া আদালতের জন্য আদেশসূচক। তবে এ ক্ষেত্রেও আদালত নিম্নলিখিত অভিযুক্তদের জামিন দিতে বিবেচনামূলক ক্ষমতা প্রয়োগ করতে পারেন, যদি অভিযুক্তের বয়স ১৬ বছরের নিচে হয় কিংবা তিনি স্ত্রীলোক কিংবা অসুস্থ লোক হন।
‘আগাম জামিন’ কাকে বলে
বিশেষ পরিস্থিতিতে গ্রেপ্তারের পূর্বেই শর্ত সাপেক্ষে আদালত যে জামিন মঞ্জুর করে থাকেন, তাকে ‘আগাম জামিন’ বলা হয়। বাংলাদেশে প্রচলিত ফৌজদারি কার্যবিধিতে আগাম জামিনের কোনো সুস্পষ্ট বিধান নেই। কিন্তু ৪৯৮ ধারায় উল্লিখিত ‘হাইকোর্ট বিভাগ ও দায়রা আদালত যেকোনো ক্ষেত্রে যেকোনো ব্যক্তিকে জামিন মঞ্জুরের নির্দেশ দিতে পারেন’ শব্দগুলোর সম্প্রসারিত অর্থ দ্বারা অভিযুক্তকে ক্ষেত্রবিশেষে ‘আগাম জামিন’ প্রদান করে থাকেন। যখন কোনো ব্যক্তির এ রকম আশঙ্কা থাকে যে কোনো অজামিনযোগ্য মামলায় ওই ব্যক্তি গ্রেপ্তার হতে পারেন, তখন তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত কিছু বিষয় বিবেচনায় তাঁর ‘আগাম জামিন’ মঞ্জুর করেন। আদালত কোনো ব্যক্তির পক্ষে ‘আগাম জামিন’ মামলার তদন্ত পর্যায় থেকে শুরু করে মামলার অভিযোগপত্র দেওয়ার পরও অনুমোদন করতে পারেন। তবে আসামি একবার গ্রেপ্তার হলে তখন আর ‘আগাম জামিনের’ আবেদন করা যায় না। তখন তাঁকে নিয়মিত জামিনের জন্য দরখাস্ত করতে হয়।
‘আগাম জামিন’ মঞ্জুরে আদালত যা বিবেচনা করেন
‘আগাম জামিন’ মঞ্জুরের ক্ষেত্রে আদালত প্রধানত যে বিষয়গুলো বিবেচনা করেন, তা হলো (১) অভিযোগের প্রকৃতি ও ভয়াবহতা; (২) আবেদনকারী পূর্বের কখনো আমলযোগ্য অপরাধে দণ্ডিত হয়েছিল কি না; (৩) জামিন পেলে অভিযুক্ত ব্যক্তি পলায়ন করবে কি না; (৪) অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের মাধ্যমে তাকে সমাজের চোখে হেয় করা হবে—এমন উদ্দেশ্য নিয়ে উক্ত মামলায় তাকে জড়িত করা হয়েছে কি না।
আগাম জামিনের আবেদন কোথায় করা হয়
‘আগাম জামিন’ পেতে আবেদনকারীকে আদালতের সামনে প্রমাণ করতে হয় যে তিনি সরকারের বিরাগভাজন হয়ে আশু গ্রেপ্তারের আশঙ্কা করছেন এবং এতে করে তাঁর সুনাম ও স্বাধীনতায় অপূরণীয় ক্ষতি হতে পারে। এ রকম অবস্থায় সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি হাইকোর্ট বা দায়রা আদালতে এসে আগাম জামিনের দরখাস্ত করতে পারেন। আগাম জামিনের দরখাস্ত শুনানির সময় অভিযুক্তকে ব্যক্তিগতভাবে আদালতে উপস্থিত থাকতে হয়।