সের্গেই লাভরভ বিকেলে ঢাকায় আসছেন, আলোচনা হতে পারে যা নিয়ে
রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই লাভরভ ২৪ ঘণ্টার কম সময়ের জন্য আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকায় আসছেন। তিনি সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। আগামীকাল শুক্রবার দুপুরে ঢাকা ছেড়ে দিল্লি যাওয়ার আগে লাভরভ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
ঢাকা ও মস্কোর কূটনৈতিক সূত্রগুলো গতকাল বুধবার প্রথম আলোকে বলেছে, বাংলাদেশে রাশিয়ার প্রথম কোনো পররাষ্ট্রমন্ত্রীর এই সফর বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন সামনে রেখে সামগ্রিকভাবে দুই পক্ষের মধ্যে রাজনৈতিক সহযোগিতা আলোচনায় গুরুত্ব পাবে।
রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের অনেক দিনের সম্পর্ক। সম্প্রতি বিশ্বে যেসব জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে ইউক্রেন সংকটের পর থেকে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা রাশিয়াকে একটা অনুরোধ করতে পারি, দ্রুত যেন একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করা যায়।
সের্গেই লাভরভের সফরের বিষয়ে জানতে চাইলে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেন গত মঙ্গলবার ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সাংবাদিকদের বলেন, ‘রাশিয়ার সঙ্গে আমাদের অনেক দিনের সম্পর্ক। সম্প্রতি বিশ্বে যেসব জটিল পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে ইউক্রেন সংকটের পর থেকে, সেগুলো নিয়ে আলোচনা হবে। আমরা রাশিয়াকে একটা অনুরোধ করতে পারি, দ্রুত যেন একটা শান্তিপূর্ণ সমাধান বের করা যায়।’
পররাষ্ট্রসচিব জানান, রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে সক্রিয় সমর্থন, খাদ্য, সার ও জ্বালানির মতো বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর পশ্চিমা চাপে কোণঠাসা রাশিয়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিষয়টি জোর দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে পরীক্ষিত বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশকে স্বাভাবিকভাবেই পাশে চাইবে তারা।
কূটনৈতিক সূত্রে জানা গেছে, সের্গেই লাভরভ ঢাকা সফরের সময় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, প্রতিরক্ষা, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, প্রযুক্তিগত সহযোগিতাসহ দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন। দুই পক্ষের আলোচনায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের পরিস্থিতি এবং এর প্রভাব ও রোহিঙ্গা ইস্যু গুরুত্ব পাবে। বিশেষ করে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বব্যাপী সরবরাহব্যবস্থায় সংকট এবং জ্বালানি, খাদ্য ও ভোগ্যপণ্যের মাত্রাতিরিক্ত মূল্যবৃদ্ধির বিষয় নিয়ে আলোচনার কথা রয়েছে। এই পরিপ্রক্ষিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আলোচনার মাধ্যমে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের বিষয়টি আলোচিত হতে পারে।
রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এক কূটনীতিক এই প্রতিবেদককে জানান, বাংলাদেশ এবার রাশিয়ার কাছে এই সমস্যা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করতে আগ্রহী। কারণ, রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান মিয়ানমারের সংখ্যালঘুদের নিরাপদে ও স্বেচ্ছায় আদি নিবাসে ফিরে যাওয়া। তাই রাখাইনে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করে প্রত্যাবাসনের পথ সুগম করতে রাশিয়াসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে একটি সমন্বিত ও অর্থবহ উদ্যোগ খুবই জরুরি।
জানা গেছে, আলোচনায় জাতিসংঘের বিভিন্ন ফোরামে আগামী দিনে বাংলাদেশের প্রার্থিতার বিষয়ে রাশিয়ার সহযোগিতা কামনা করা হবে।
কূটনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মতে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ার পর পশ্চিমা চাপে কোণঠাসা রাশিয়া আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর বিষয়টি জোর দিচ্ছে। সে ক্ষেত্রে ঐতিহাসিকভাবে পরীক্ষিত বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশকে স্বাভাবিকভাবেই পাশে চাইবে তারা।
ন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে আজ বিকেল চারটার পর সের্গেই লাভরভ ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৮ সেপ্টেম্বর সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন।
কোনো দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে সাধারণত নীরব থাকে রাশিয়া। যদিও বছরখানেক ধরে বাংলাদেশের বিষয়ে নিজেদের সরব উপস্থিতির জানান দিয়ে আসছে দেশটি। ঢাকায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এবং মস্কোর নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে তা স্পষ্ট করেছে দেশটি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশের একাধিক কূটনীতিক প্রথম আলোকে এই আভাস দিয়েছেন যে সের্গেই লাভরভ ঢাকায় যে দুটি আলোচনায় বসবেন, সেখানে মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় থাকা রুশ জাহাজকে কেন প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হলো না, সেটি তুলতে পারেন।
ঢাকা ও মস্কোর কূটনৈতিক সূত্রগুলো প্রথম আলোকে জানিয়েছে, ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তা থেকে আজ বিকেল চারটার পর সের্গেই লাভরভ ঢাকায় এসে পৌঁছাবেন। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তাঁকে স্বাগত জানাবেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে প্রথমে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এরপর নৈশভোজ। সেখানে জাতিসংঘের মতো আন্তর্জাতিক ফোরামসহ আরও কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করবেন তাঁরা।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৮ সেপ্টেম্বর সকালে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। এরপর ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘরে জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতিতে শ্রদ্ধা জানাবেন। এরপর তিনি রাজধানীর একটি হোটেলে সাবেক সোভিয়েত আমলে বাংলাদেশের যেসব শিক্ষার্থী রাশিয়ায় গিয়ে পড়াশোনা করেছেন, তাঁদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় যোগ দেবেন।